করোনার অখন্ড অবসর চলছে। মন আর মানেনা। মন চায় খোলা বাতায়ন পথে ফুড়ুৎ করে বেড়িয়ে গিয়ে মুক্ত আকাশে গাঙ্গচিলের মত ডানা মেলে ভেসে যাই।
মেঘেদের সাথে কোলাকুলি করে মেঘের কনার ভালবাসা গায়ে জড়িয়ে নেই ।
বাতাসের টানে উড়ে যাই সোনামাখা রোদ গায়ে মেখে ডানা মেলা ছায়ায় ধরনী ছুঁয়ে ছুঁয়ে।
কিন্তু চাইলেই কি সব পাওয়া যায় ???
ধার করা জ্ঞান নিয়ে ভাবতে বসি কোয়ান্টাম মেকানিক্স নাকি বলে সবকিছু কনা আর তরঙ্গের খেলা।
মাথা হল কনা আর মন হল তরঙ্গ ।
দুইটা উপাদান বাইনারী কম্পিউটারের ভাষার মত শূন্য এবং এক, অর্থাৎ অফ এবং অন।
তৃতীয় একটা অপশন কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ভাষার জন্য প্রয়োজন মানে মন আর মস্তিস্ককে নিয়ন্ত্রন করার জন্য সেটা হল ধ্যান, কনসেন্ট্রেশন বা একাগ্রতা যা মন এবং মস্তিস্ককে নিয়ন্ত্রন করবে।
জ্বী! মানুষের মাথাই হল কোয়ান্টাম কম্পিউটার। ( এগুলি কিন্তু পুরাই চাঁপাবাজী )
কোয়ারাইন্টাইনে থেকে থেকে ধ্যান,মনঃসংযোগ বা একাগ্রতার অবস্থাও তথৈবচ। তাই কোয়ান্টাম কম্পিউটার ফেল মেরে বসে আছে। অতএব কি আর করা, ভাবছি কিছু অতীত স্মৃতি রোমন্থন করি, আর আপনাদের সাথে একটু খুনসুটি করি।
ভাবনা চিন্তার মধ্যে ছিল আমেরিকায় যখন এলামই, একটু ঘুরে ফিরে বেড়িয়ে দেখি কোথায় কি আছে !
ভাবনাটা মনে হয় যেন ব্যক্ত করার অপেক্ষাতেই ছিল ! যেইনা বেড়াবার কথা বললাম, অমনিই সবাই বিপুল উৎসাহে সমস্বরে সমর্থন দিয়ে এমন হৈচৈ শুরু করলো যে, পারলে যেন তখনই বেড়িয়ে পড়ে ।
একেবারে “উঠ ছেড়ি তোর বিয়ে লেগেছে” অবস্থা, সামার ফিভার মনে হয় একেই বলে।
পরদিন সকালেই সদলবলে যাত্রা শুরু হল, গন্তব্য নিউইয়র্ক, উদ্দেশ্য স্বাধীনতার স্মারক মূর্তি (Statue Of Liberty) পরিদর্শন।
প্যাকিং ট্যাকিং এর তেমন কোন বালাই নেই। মনের সঙ্গে দেহের সংযোগ, তাই মন চাঙ্গা রাখতে দেহকেও ঠান্ডা রাখা প্রয়োজন সুতরাং আমাদের জন্য নয় জঠরের বিনুদুনের জন্য কিছু খাবার টাবার পানীয় প্যাক করে হৈ হৈ রৈ রৈ করে রওনা দেওয়া হল।
আমি তো কিছুই চিনিনা, অঁজপাড়াগাঁ থেকে শহরে আসলে যেমন হয় তেমন আরকি ! তাই গোল্লা গোল্লা চোখ করে রাস্তাঘাট আকাশছোঁয়া বিল্ডিংগুলি দেখতে থাকি। সহযাত্রীদের কাছে তো শহরবাসীর মত ব্যাপারগুলো ডালভাত।
তাহারা নাদানকে এক নিমিষেই গভীর জ্ঞানে সমৃদ্ধ করিবার আকুল প্রয়াসে অতি উৎসাহের সহিত কলকল করিয়া সবাই মিলিয়া এটা ওটা দেখাইয়া পরিচয় করাইয়া দিতে লাগিলো । কে যে কোনটিকে নির্দেশ করিয়া কিসের সাথে পরিচয় করাইয়া দিতেছিল তাহার তল খুঁজিয়া পাইতেছিলাম না আমি শুধু হ্যা হু, হ্যা হু, করিয়া বজরা নৌকার গুন টানিতে ছিলাম ফলে এদিকে আমি শুধু দেখি আর ভুলিয়া যাই কিছুই মনে রাখিতে পারিনা। ভাগ্যিস তাহারা পরীক্ষা লইবার কথা ভাবিয়া রাখেনায়, তাহা না হইলে নির্ঘাৎ হাঁদারাম বলিয়া খ্যাত হইয়া যাইতাম।
ঘন্টা দুই চলার পরে নিউইয়র্কের কাছাকাছি এসে প্রচুর হর্ন শুনতে পেলাম। এতক্ষণ নিঃশব্দেই চলছিলাম এখন ডান দিক বাম দিক দিয়ে গাড়ী ওভারটেক করে করে আমাদের গাড়ীর সামনে চলে এসে আমাদের সারথীর মাথা ব্যাথার কারন হয়ে দাড়াচ্ছিলো ।
ঢাকার কথা মনে করে আমি ভাবলাম এ আর এমন কি !? ঢাকায় তো আমরা সামনের গাড়ীর পশ্চাদেশ চুম্বন করে করে গাড়ী চালাই । ভাবছিলাম স্টিয়ারিং একবার হাতে পেলে হতো এসব ক্ষুদে মাস্তানদের এক হাত দেখিয়ে দিতাম হুম বাওয়া ঢাকাইয়া মানুষের সাথে মাস্তানী !!? কিন্তু সমস্যা হলো লেফ্টহ্যান্ড ড্রাইভিং সিস্টেম এবং লাইসেন্স নেই অগত্যা নিরীহ মুষিকের মত চাহিয়া থাকা বিনে আর কিছুই করনীয় ছিলনা।
১।
২।
হাডসন নদীর তলদেশ টানেলে প্রবেশ ও বেরোবার পথে। এই টানেলটি ২.৪ কিঃমিঃ লম্বা প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের নামানুসারে নাম রাখা হয়েছে লিঙ্কন টানেল । তিনটি টিউবের সমন্বয়ে টানেলটি পর্যায়ক্রমে তৈরী করা হয়েছে। শুরু করা হয়েছিলো ১৯৩৪ সালে শেষ হয়েছে ১৯৫৭ সালে। তবে একেকটা টিউবের কাজ শেষ হওয়ার পর পরেই গাড়ী চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিলো।
২ক।
৩।
৪।
৫। ব্যাটারি পার্ক এটা ম্যানহাটনের দক্ষিনে ক্যাসল ক্লিন্টন ন্যাশনাল মনুমেন্টে অবস্থিত। এখানে ইটালিয়ান নাগরিক জিয়োভান্নি ভ্যারাজান্নোর ভাস্কর্য রয়েছে। তিনিই আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম ইউরোপিয়ান যিনি ফ্লোরিডা থেকে উত্তর আটলান্টিক দিয়ে নিউইয়র্ক হয়ে কানাডার নিউ ব্রানশ উইক পর্যন্ত এক্সপ্লোর করেছিলেন।
৬। নিউইয়র্ক হারবার টার্মিনালের পথে।
৭। ক্রুজ শিপের জন্য অপেক্ষার মুহূর্তগুলি।
৮। ক্রুজশিপ গুলো লাইন দিয়ে অপেক্ষায় রত, একটার পর একটা প্যাসেঞ্জার নিয়ে ছেড়ে যাবে।
৯। ক্রুজ শিপ ছোট ছোট হারবার ফেরী
১০। অনবোর্ড ফ্রি সিটিং এ্যারেঞ্জমেন্ট, যে, যেখানে পারে বসে পড়তে পারে।
এক্ষেত্রে আমাদের মত হুড়োহুড়ি নেই, কে কার আগে সিট দখল করবে তার ব্যস্ততা নেই, (টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার পথে কেয়ারী সিন্দাবাদে আরোহনের স্মৃতি মনে পড়লো।) সবাই ভদ্র দুরত্ব বজায় রাখছে, গা ঘেষা ঘেষি নাই । (এরা সব বোকা ধাক্কা ধাক্কির যে কি মজা তা এরা বুঝবে কি করে হে হে হে)
১০ক। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সমাহার বেশ কিছু আমাদের মত চেহারার মানুষ ইভেন বাংলা কথাও হঠাৎ হঠাৎ শুনতে পাচ্ছিলাম তবে উচ্চারন শুনে বুঝলাম কলকাতাবাসী।
১১। যাত্রা শুরু।
১২/১২ক/১৩/১৪। হারবার থেকে শহরের মনোরম দৃশ্য।
১৫। ভ্রমনের সুখো স্মৃতিকে ক্যামেরায় বন্দী করার প্রয়াস।
১৬।তালগাছ একপায় দাড়িয়ের মত নিঃসঙ্গ স্ট্যাচুটি দাড়িয়ে আছে। আমাদের গন্তব্য দৃশ্যমান হচ্ছে।
১৭/১৮/১৯/২০। আমার মনে হচ্ছিল আমরা যাচ্ছিনা স্ট্যাচুটা আমাদের দিকে ভেসে ভেসে চলে আসছিলো (অবশ্য স্বপ্নে এমন দৃশ্য দেখলে খবর আছে )
২১/২২। ডকিং জেটির অবস্থান মূর্তি পেড়িয়ে গিয়ে তারপর।
২৩। স্ট্যাচু অব লিবার্টি এটা নিউইয়র্ক হারবারের Bedloes Island এ অবস্থিত। ১৮৮৬ সালে তৈরী এই ভাস্কর্য টি স্তম্ভমূল থেকে টর্চ পর্যন্ত উচ্চতা ৩০৫ ফুট ১ ইঞ্চি শুধু মূর্তিটির উচ্চতা ১৫১ ফুট ১ ইঞ্চি । ওজন ২২৫ টন এর মধ্যে বহিরাবরন ১০০ টন তামা দিয়ে তৈরী এই ওজনটাকে ধরে রাখার জন্য অভ্যন্তরভাগ ১২৫ টন রট আয়রন দিয়ে তৈরী।
নব্য ধ্রুপদীর ( Neoclassical sculpture) এই ভাস্কর্যটি রোমান স্বাধীনতা দেবীর পোষাকাবৃত।
ডান হাতের মশালটি স্বাধীনতা ও গনতন্ত্রের আলোক রশ্মিকে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতীক।
বাম হাতে ঘুঘু দেখেছ বাপু ফাঁদ তো দেখনি সেই ঘুঘুর লেঙ্গুরের মত (ডাভ টেইল) ধারক সহ দুইটি ট্যাবলেট।
এটিও রোমান সম্রাজ্যের জনপ্রিয় ভোট দানের প্রতীক। এই ট্যাবে দারুন গুরুত্বপূর্ণ একটা তারিখ রোমান স্টাইলে লেখা আছে সেটা হল ৪ জুলাই ১৭৭৬ ( JULY IV MDCCLXXVI ) যেদিন আমেরিকার স্বাধীনতা ঘোষনা করা হয়। (ভাবছি কত মর্যাদার সাথে ওরা ঐতিহাসিক দিনটিকে সংরক্ষন করছে আমাদের দেশের মত বিতর্কিত ঘোষনা টোষনার বালাই নেই )
পায়ের কাছে পড়ে আছে ভাঙ্গা শিকল যা দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙ্গে মুক্ত স্বাধীনভাবে পথে এগিয়ে চলার প্রতীক।
এছাড়াও এটা ইমিগ্র্যান্টদের মুক্ত স্বাধীন দেশে সমুদ্র পথে আগমনে অভ্যার্থনার প্রতীকও বটে। ( যদিও বিভিন্ন কারনে আমেরিকা এখন তাদের অবস্থান পরিবর্তনের পথে আছে বলেই মনে হচ্ছে )
এই ভাস্কর্যটি রাতের বেলায় মশাল জ্বালিয়ে দিকভ্রান্ত নাবিকদের পথের দিশা প্রদর্শন করে, মানে লাইটহাউস হিসেবে কাজ করে।
২৪। এই ভাস্কর্যের আর্কিট্যাক্ট এবং ডিজাইনার হলেন ভাস্কর্ ‘ফ্রেডারিক অগাস্তে বার্থোল্ডি’ তিনি ফ্রান্সের নাগরিক । ওনাকে সহায়তা করেছেন আইফেল টাওয়ারের নির্মাতা ‘আলেক্সান্ডার গুস্তাভ আইফেল’ তিনি একাধারে আর্কিট্যাক্ট এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। এটি ছিল একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রকল্প, ফ্রান্সের অর্থায়নে এবং আমেরিকার জমি প্রদানের মাধ্যমে সম্পন্ন করা প্রকল্প।
২৫/২৬। তামার তৈরী লিবার্টি বাইক। স্ট্যাচু অব লিবার্টির শতবর্ষ জয়ন্তি পালনের পূর্বে গোল্ডলিফ কর্পোরেশন এটিকে রেস্টোরেশনের দায়িত্ব পায়।
তারা ১৯৮২ সাল থেকে শুরু করে ১৯৮৬ র জুলাইয়ের আগে সিডিউলড টাইমেই কাজ সম্পন্ন করে । সেই কাজে অনেক লোহা ও তামা বদলাতে হয় সেগুলো শতবর্ষী আর্টিফ্যাক্ট হিসাবে ওখানে বিক্রয় হয় এবং মিউজিয়ামেও সংরক্ষন করা হয়। সেই তামা থেকেই এই বাইকটি তৈরী করা হয়েছে।
২৭। পশ্চাৎ দিকে এই শান বাধানো চত্বর দিয়ে মূর্তির ক্রাউনে ওঠার জন্য যেতে হয়, সেজন্য আগে থেকেই টিকিট কেটে বুকিং দিয়ে রাখতে হয়। তবে ক্রাউনে উঠা একটি কষ্টসাধ্য এ্যাডভেঞ্চার।
কারন, আপনাকে যেতে হলে কোমরের বেল্ট টাইট করে বেঁধে তারপর যেতে হবে । নাহলে এলিভেটর ছাড়া ৩৯৩ টা সিড়ি বাইতে হবে যার মধ্যে ১৬২ টা খুবই চিপা পুরো পথ নিজে নিজে বাইতে হবে সহায়তা পাওয়ার নো চান্স।
অনেক কষ্ট করে উপরে উঠতে উঠতে দেখা গেল ক্যালরী পুড়ে পুড়ে আপনি চিলিম হয়ে গেছেন এবং নিজের অজান্তে কখন যে পেন্টুলুন কোন স্টেপে রেখে এসেছেন সেটাও খেয়াল নেই ফাইনালি দিগম্বর হয়ে ------ তাই বলছিলুম কি বেল্টু--- হে হে হে ।
২৮/২৯। গাঙ্গচিল গুলোকে দেখুন কত সাহস ! আপনাকে মানুষ বলেই গন্য করছেনা ! এক পেদানি দিলে --- আহাহাহা ভুলেও ও কম্মোটি করতে যাবেন না তাহলে কিন্তু শ্রীঘর পরিদর্শনের সমুহ সম্ভবনা বা ট্যাক খালি হওয়ারও সম্ভাবনা আছে।
এদের শরীরের চেয়ে ৪/৫ গুন বড় ডানা।
৩০। ফেরার পথে তবে এবার গন্তব্য এলিস আইল্যান্ড।
১৯৬ টা ছবির মধ্যে কাটছাট করেও দেখি অনেক ছবি দেওয়া যাচ্ছেনা পোষ্ট ভারী হয়ে যাচ্ছে সুতরাং এটি দ্বিতীয় পর্বে গড়াবে বলে মনে হচ্ছে।
কিছু কিছু তথ্য এবং তিন টানেলের ২ক ছবিটি গুগলমামু দিয়েছেন।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০২০ সকাল ১১:২২