somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

~“মুক্তির গান” শুধু মুক্তির ই গান না, মুক্তির প্রাণও~

১০ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গল্প দেখবেন কেউ !! হ্যা, এটা দেখারই গল্প। একটা দেশের গল্প? কত গুলো ঘর হারা মানুষের গল্প? অগণিত ছেলে হারা মায়ের গল্প?? ভাই হারা বোনের গল্প?? আর কিছু উদ্দ্যমী তরুণের গল্প, যারা অনেক আশায় বুক বেধেছিল একটা স্বাধীন দেশের, স্বাধীন ভাবে নিজের ভাষায় কথা বলার। যারা শুরুতে জানতও না যে আসলেই তাদের স্বপ্ন সত্যি হবে কিনা? দেখতে পারবে কিনা তাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন? আর যদি বাস্তবায়ন না হয় তবে কোন দোদুল্যমান অবস্থার শীকার হবে তারা! সব কিছুকে ছাপিয়ে তারা স্বপ্নই দেখেছিল। যেই স্বপ্নের ফসল আমাদের আজকের এই বাংলাদেশ।


বাঙ্গালীর বাঙ্গালীয়ানা কিভাবে প্রকাশ পায়? বা বাংলা সংস্কৃতির প্রাণ কি? সবাই আশাকরি একমত হবে আমার সাথে, তা হল আমাদের গান। সংগ্রামী কবিতা ও গানের কারণে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল জেলে গেছেন। তার কারণ কি ছিল? কারণ ছিল তার রচিত গান মানুষের অন্তরে আগুন ধরিয়ে দিত। মানুষকে মনে করিয়ে দিত সকল শোষণ নিপীড়নের কথা। তেমনি আমরা বাঙ্গালীরা গানের মাঝেই নতুন প্রারণা খুজে পাই। সেই প্রেরণা থেকেই কিছু অল্পবয়সী শিল্পী (শুধু গানের শিল্পী নয়, সকল শিল্পের শিল্পীর কথাই বলছি) মিলে গড়ে ওঠে “বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা”। যাদের কাজ বা প্রচেষ্টা ছিল মুক্তিকামি মানুষকে জাগ্রত রাখা। ভেঙ্গে পরা মানুষদের নব উদ্দ্যমে, নব চেতনায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে সচ্চল করা।


প্রামান্যচিত্রের সারসংক্ষেপঃ মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা লিয়ার লেভিন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপরে ডউমেন্টারী তৈরীর উদ্দেশ্যে এদেশের কিছু সংস্কৃতি কর্মীর সাথে মিশে যান। “বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা” নামের দলের এই সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে মুক্তিযোদ্ধা ও শরনার্থীদের দেশাত্মবোধক ও সংগ্রামী গান শুনিয়ে উজ্জীবিত করতেন। এই শিল্পীদের সাথে থেকে লেভিন প্রায় ২০ ঘণ্টার ফুটেজ সংগ্রহ করেন। যুদ্ধের শেষ দিকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান। আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তিনি ডকুমেন্টারি তৈরি করতে পারেননি। অবশেষে প্রায় দীর্ঘ ২০ বছর পরে তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিনা মাসুদ তার কাছথেকে এই ফুটেজ গুলো সংগ্রহ করেন। পূর্ণাঙ্গ সিনেমা নির্মাণের জন্যে এই ফুটেজ গুলোর সাথে আরো বিভিন্ন উৎস থেকে বিভিন্ন ফুটেজ সংগ্রহ করে এই ডকুমেন্টারী তৈরী করাহয় এবং অবশেষে ১৯৯৫ সালে তা বাংলাদেশীদের দেখার সৌভাগ্য হয়। আর আমার মত পাপীর ২০১২ সালে। (তথ্যঃ উইকিপেডিয়া)


এই প্রামাণ্যচিত্রের মূল আকর্ষণ হল সেই সময়কার সাধারণ মানুষের সাথে সরাসরি যোগাযোগের ব্যাপার, তখনকার স্বাভাবিকতা ও স্বতঃস্ফূর্ততা; যা লেভিনের ক্যামেরায় আর তারেক মাসুদের পরিচালনায় অসাধারণ ভাবে ফুটে উঠেছে। বাঙ্গালীর অতিথিপরায়ণতা যেমনি সুন্দর ভাবে দেখেছি তেমনি দেখেছি মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে সকলের একই সাথে একই লক্ষ্যে অবস্থান এই প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কের এই নজির এখনকার দিনে দেখা যায়না বললেই চলে। আর একটা বিষয় অসাধারণ লেগেছে তা হল পুতুল নাচের আদলে ইয়াহিয়া কে এক মুক্তিসেনার ভয় দেখানো আর সেইটা দেখে দর্শকদের উল্লাসের ব্যাপারটা। এটা অসাধারণ কনসেপ্ট সেই সময়কার পরিস্থিতির বিবেচনায়। এমনই ছোট ছোট কিন্তু অর্থবহ অনেক দৃশ্যায়ন মুগ্ধ করবে দর্শককে এতে কোনই সন্দেহ নেই।


আরো একটা বিষয় হল (বলতে চাইনা তাও চলে আসলো) “জয় বাংলা”। যা কিনা একটি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের স্লোগান বলে মানুষ এই শব্দ দুটির প্রতি কিছুটা হলেও বিরক্তিতে তাকায় (বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি)। কিন্তু এই শব্দ দুটি মুক্তি যুদ্ধের সময়ে যেই পরিমাণ অর্থ বহন করতো বা এই শব্দ দুটি শুনে মানুষের শরীরে যেই শিহরণ বয়ে যেত তা আজ সেই কেন্দ্রীয় দলের কারণে বিলীণ প্রায়। কতকাল আমাদের রাজনৈতিক মানুষ গুলো আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে নোংরা রাজনীতি চালিয়ে যাবে !! যার কারণে আমরা “জয় বাংলা” বলতেও লজ্জা পাব?? “জয় বাংলা” কারো পৈত্রিক সম্পত্তি নয়, বাংলাদেশও নয়। আমরা কি আজ ৪১ বছর পরেও বলতে পারি আমরা স্বাধীন! একটা দেশের মানুষকে আর কত আত্মত্যাগ স্বীকার করতে হবে নিশ্চিন্তে বেচে থাকতে!! নিশ্চিন্তে চলাফেরা করতে!! কেন্দ্রীয় রাজনীতিবিদদের কি মনে পরে না এদেশের মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে এই সাধারণ মানুষগুলো কি অসাধ্য সাধন করতে পারে??


আমরা শাধারণত কখনোই কোন প্রামাণ্যচিত্রের সম্পর্কিত কোন পোষ্ট দেখিনি। আশাকরি কারো ভাল লাগা কিছু আমাদের সবার সাথে শেয়ার করবে সবাই। “মুক্তির গান” হয়তো তারেক মাসুদের চেষ্টা না থাকলে আমাদের সামনে উঠেই আসত না। দেখতে পেতামনা এই নৃশংসতা যা পাকিস্তানী বর্বররা আমাদের সাধারণ মানুষের উপরে চালিয়েছে। সেদিক থেকে তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিনা মাসুদ অবশ্যই সমগ্র মাঙ্গালী জাতীর থেকেই ধন্যবাদ প্রাপ্য। আর ভুলে যাব না লেভিনের কথাও। যে কিনা সেই দুর্যোগপূর্ণ মুহুর্তে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে ২০ ঘন্টার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছিল।

“মুক্তির গান” শুধু মুক্তির ই গান না, মুক্তির প্রাণও।

এই মুক্তি শুধু দেশের মুক্তি না বরং মানুষ হিসেবে মুক্তির প্রেরণা।


পুরো চলচিত্রটি শৈল্পিক দিক হতে যতটা আকর্ষণীয়, তথ্যের দিক হতে যতটা ভরপুর, মন প্রান কে যেভাবে আন্দোলিত করে; চলচিত্রটি নির্মানের নেপথ্য কাহিনী নিয়ে তৈরী “মেকিং অফ মুক্তির গান” ঠিক ততটাই অসামান্য। এমন একটি চলচিত্র “মুক্তির গান” যা প্রতিটি বাঙ্গালীর দেখা উচিত। দেরী করবেন না যেন।


পরিচালকঃ তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিনা মাসুদ
ধরনঃ প্রামাণ্যচিত্র
চিত্রগ্রাহকঃ লিয়ার লেভিন



✘✘✘ “মুক্তির গান” এর ডিভিডি বাজারে পাওয়া যায়। দয়া করে কোন বাংলাদেশী মুভির ডাউনলোড লিংক শেয়ার করবেন না। বাংলা মুভি সিনেমাহলে গিয়ে অথবা অরিজিনাল ডিভিডি কিনে দেখুন। দেশের চলচ্চিত্র রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করুন।

পোষ্ট টি প্রথম প্রকাশ করাহয় মুভি পাগল ওয়েব সাইটে। লিঙ্কঃ http://moviepagol.info/?p=443
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৫
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×