মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়া ব্যাক্তিদের ব্যাপারে সৌদি বাদশাহর কাছে আবেদন করলে নাকি জানানো হয়েছিল, নিহত মিশরীয় ব্যাক্তির পরিবার যদি ক্ষমা করে তাহলে সৌদি আরবের কোন আপত্তি নেই। এটা তো ছিল বিশাল এক সুযোগ। এই সুযোগের প্রেক্ষিতে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল?
শিরশ্চেদের পর (আগে নয়) রিয়াদ দূতাবাসের লেবার কাউন্সেলর হারুন অর রশিদের মাধ্যমে নিম্মলিখিত তথ্য গুলো জানা যায়)-
১। বাংলাদেশের সৌদি দূতাবাস, রিয়াদস্থ মিশরীয় দূতাবাসের মাধ্যমে নিহত ব্যাক্তির পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে দণ্ডপ্রাপ্তদের ক্ষমা করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিল।
২। এ বিষয়ে সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়াদস্থ মিশরীয় রাষ্ট্রদূতের সাথে সাক্ষাত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছিল।
৩। মিশরের রাষ্ট্রদূত জানান যে, নিহত হাসান আল সাইদ মিশরের প্রত্যন্ত জনপদ শারকাইয়া এলাকার অধিবাসী। ওই এলাকার অধিবাসীরা সাধারণভাবে হত্যার বদলে হত্যার নীতি একনিষ্ঠ ভাবে বিশ্বাস করে। এ কারনে নিহত হাসান আল সাইদ-এর উত্তরাধিকারীদের কাছ থেকে প্রাণভিক্ষার সম্মতি আদায় করা একটি কঠিন কাজ। তবে তিনি নিহতের পরিবারকে যেকোনওভাবে দণ্ডপ্রাপ্তদের ক্ষমা করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আশ্বাস প্রদান করে।
৪। এ ব্যাপারে রিয়াদস্থ মিশরীয় দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়।
৫। দুই বছর আগে মিশরীয় দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানিয়ে দেন যে, নিহতের পরিবার কোনও ভাবেই হত্যাকারীদের ক্ষমা করতে রাজি নয়।
এখন যে প্রশ্ন গুলো সামনে আসে-
১। মিশরে কি বাংলাদেশের দূতাবাস নেই? নিশ্চয় আছে। তাহলে বাংলাদেশ কেন শুধু রিয়াদস্থ মিশরীয় দূতাবাসের মাধ্যমে যোগাযোগ করল? কেন মিশরস্থ বাংলাদেশের দূতাবাসের মাধ্যমে নিহত ব্যাক্তির পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেনি? সরকার কেন মিশরের দূতাবাসের মাধ্যমে সমযোতার চেষ্ঠা করেনি?
২। নিহতের পরিবার যে ক্ষমা করতে রাজি নয় তা দুই বছর আগেই যদি বাংলাদেশকে জানিয়ে দেয়া হয় তাহলে এই দুই বছর সরকার ও বাংলাদেশের সৌদি দূতাবাস কি করেছে?
৩। বাংলাদেশের সৌদি দূতাবাস সূত্রেই জানা যায়, নিহত ব্যাক্তির পরিবারের সাথে বাংলাদেশ সরকারের কেউ সরাসরি কথা বলেনি। কেন বলেনি? তারা কেন শুধু রিয়াদস্থ মিশর দূতাবাসের উপর দায়িত্ব দিয়ে বসে ছিল?
৪। বাংলাদেশেও মিশরের দূতাবাস আছে। এখান থেকেও একটি চেষ্ঠা করা যেত। কেন ঢাকাস্থ মিশরীয় দূতাবাসের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়নি?
৫। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি কতটুকু জানতো? একবারের জন্যও তো বাংলাদেশের কোন সংবাদপত্রে বিষয়টি আসেনি। তাহলে কি পুরো বিষয়টি সরকার সিরিয়াসলি নেয়নি? সংবাদপত্রে আসলে বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি হতো। জনমত তৈরি হতো। কেন দেশের কাউকে জানানো হয়নি?
৬। মিশরের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কোন সমস্যা নেই। তাহলে সরকার কেন রাষ্ট্রীয় ভাবে বিষয়টি মিশরের সাথে হ্যান্ডেল করেনি? কেন রিয়াদস্থ মিশরীয় দূতাবাসকে দায়িত্ব দিয়ে বসে ছিল?
৭। যদি সরকার সিরিয়াস হতো, মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত ব্যাক্তিদের পরিবারের সদস্যেদের মিশর যাওয়ার ব্যবস্থা করে নিহত ব্যাক্তির পরিবারকে অনুরোধ করতে পারতো। তারা প্রয়োজনে হাতে-পায়ে ধরে ক্ষমা আদায় করতো। তা কেন করা হয়নি?
৮। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মাধ্যমে চেষ্ঠা করতে পারতো। সাংবাদিক, সুশীল সমাজ, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, শিক্ষকসহ, মিশরে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের মাধ্যমে চেষ্ঠা করা যেত। কোন কিছুই কেন করা হয়নি?
৯। প্রয়োজন হলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী সরাসরি নিহতের পরিবারের সাথে কথা বলতো। অনুরোধ করতো। আরো প্রয়োজন হলে রাষ্ট্রপতি নিজে গিয়ে অনুরোধ করতো। তারপরও তো এই অসহায় শ্রমিকগুলো প্রাণে বেঁচে যেত। কেন করা হয়নি?
১০। সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জড়িতদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কি করেনি? লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করে বিভিন্ন দেশে গোয়েন্দা ও লবিষ্ট নিয়োগ করেনি? সম্ভাব্য দেশে যখনই পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিয়েছে সেখানে সেই আসামীদের ফিরিয়ে আনার জন্য লবিং করেনি? এদের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী কয়বার সৌদি আরব ও মিশর সফর করেছে?
১১। শেখ হাসিনার কথিত শান্তির ফর্মূলা প্রচারের জন্য বিশ্বের অনেক দেশে কোটি টাকা খরচ করে প্রতিনিধি দল কি পাঠানো হয়নি? বারাক ওবামার সাথে বৈঠক করার জন্য লক্ষ ডলার খরচ করে লবিষ্ট নিয়োগ করা হয়নি? প্রয়োজনে সেই রকম প্রতিনিধি দল মিশরে পাঠানো হতো। তারা গিয়ে নিহত ব্যাক্তির পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতো। কেন করা হয়নি?
১২। সরকার দুই বছর আগে জানার পরও দেশের মানুষ কেন জানলো না যে আটজন লোক মৃত্যুর প্রহর গুনছে? আসলে এই লোকদের জীবন বাঁচানোর জন্য কি করেছে?
১৩। দূতাবাসের লেবার কাউন্সেলরের মাধ্যমে যা জানা যায়. গত দুই বছরে আর কোন প্রকার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সামান্য যা কিছু করা হয়েছিল তা দুবছর আগে। কেন এরপর সরকার নিশ্চুপ ছিল?
১৪। দুই বছর সময় পাওয়ার পরও সকল ধরনের বিকল্প পথে কেন চেষ্ঠা করা হয়নি? এই দুবছর কেন সরকার বসে ছিল?
১৫। আসলে সৌদি আরবের আইনের কারণে ওই সব শ্রমিকের জীবন গিয়েছে, না বাংলাদেশ সরকারের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে গিয়েছে?
সেই গানের কথাগুলো বার বার মনে পড়ছে-
আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া
করিতে পারিনি চিৎকার
বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার
কত ব্যথা বুকে চাপালেই তাকে বলি আমি ধৈর্য
নির্মমতা কতদূর হলে জাতি হবে নির্লজ্জ
কিছু কি করা যেতোনা. এই অসহায় শ্রমিকদের জন্য? কারো কি কোন দায়িত্ব ছিলনা? তাদের রক্ত পানি করা পাঠানো ডলারে কি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দিনে দিনে বড় হয়নি? তাদের পাঠানো সেই হাজার কোটি ডলার থেকে ব্যয় করে কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিমাসে বিদেশ সফর করেনা? সিঙ্গাপুরে রাষ্ট্রপতির শারিরীক চেকআপের বিল কি সেই ডলার থেকে দেয়া হয়নি? জাতিসংঘ সম্মেলনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য বুকিং করা সবচেয়ে বিলাস বহুল হোটেলের বিল কি সেই ডলার দিয়ে পরিশোধ করা হয়নি? প্রধামনন্ত্রীর কানের চিকিৎসার বিলের সেই ডলার ব্যয় করা হয়নি? আমলাদের বিদেশ ভ্রমনের বিল কি সেই ডলার থেকে দেয়া হয়নি? যারা ছিল ওই সব ডলারের যোগানদাতা তাদের বাঁচানোর দায়িত্ব কি কারো ছিলনা? এত দায়িত্বহীন কিভাবে হতে পারে একটি দেশের সরকার? প্রভু তোমাকেই জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয়, যে দেশের সরকার এত দায়িত্বহীন সে দেশে কেন আমাদেরকে পাঠিয়েছ?
আগের পোষ্ট- এই আমাদের ইংরেজি জ্ঞান?!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১২:২৭