প্রশ্ন- আমরা কলেমা পড়ে কবুল বলে বিয়ে করি। আমাদের বিয়েতে কেউ সাক্ষী ছিল না। কিন্তু আমরা দুজন দুজনকে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছি। তারপর আমাদের মধ্যে কয়েকবার শারীরিক সম্পর্ক হয়। সামনে আমাদের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। পরিকল্পনামতো, দুজন ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পরিবারকে বিয়ের ব্যাপারে জানাব। কিন্তু আমাদের বিয়ে এবং শারীরিক সম্পর্ক বৈধ কি না, এ কথা ভেবে মেয়েটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। আমাদের বিয়েটি কি বৈধ? আইনগত কোনো ভিত্তি আছে এই বিয়ের?
উত্তর- সাক্ষী ছাড়া আপনাদের বিয়ে অনিয়মিত হলেও বাতিল বিয়ে নয়। সাবালক হিসেবে স্বেচ্ছায় আপনারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। সে ক্ষেত্রে পরবর্তী সময় আপনারা নিবন্ধনের মাধ্যমে বিয়েটি নিয়মিতকরণ করতে পারেন।
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের নামে আন্তধর্ম বা ধর্মহীন হয়ে বিয়ে, প্রগতিশীলতার নামে বিয়েহীন থেকে যথেচ্ছ ও অবাধ যৌনাচার করার একটি প্রবণতা দেশে শুরু হয়েছে তথাকথিত আধুনিকতার নামে। কিন্তু এসবের আইনী ভিত্তি মুসলিম প্রধান এ দেশে দেয়ার দুঃসাহস এখনও কেউ দেখান নি।
কিন্তু প্রথম আলোর নেতৃত্বে নানা সময় সমকামিতা, পরকিয়া, অবাধ যৌনাচারের উৎসাহ দেয়ার একটি কুটকৌশল চলছে। কিছুদিন আগে সারা যাকের নামের এক অভিনেত্রী অবাধ ও যত্রতত্র যৌনাচারে উৎসাহ দিয়েছেন প্রথম আলোর প্লাটফর্ম ব্যবহার করে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১২ সেই একই প্লাটফর্ম ব্যবহার করে নাহিদ মাহতাব নামের এক আইনজীবি প্রকারান্তরে ব্যাভিচার ও লিভটুগেদার করার পরামর্শ দিয়ে , এসবকে বৈধ বলতে চেয়েছেন উপরোক্ত প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে। ওই প্রশ্নের পরের প্রশ্নে আরেকজন স্বীকার করেছেন, তিনি পরকিয়া করেন, সেই প্রশ্নের উত্তরেও নাহিদ মাহতাব পরকিয়ার বিরুদ্ধে কিছু না বলে দুই সন্তানের এক জননীর সংসার ভাঙ্গিয়ে তাকে বিয়ে করা যায় বলে উপদেশ দিয়ে পরকিয়ার পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন।
এসব কিন্তু নাহিদ বা সারা যাকেরের ব্যাক্তিগত মতামত নয়। বরং প্রথম আলোর প্রাতিষ্ঠানিক মতামত এবং প্রথম আলো বিভিন্ন সময় এই ধরনের নানা রকম অপকর্মে নূতন প্রজন্মকে উৎসাহিত করে আসছে।
বিয়ে বিষয়টি এসেছেই ধর্ম থেকে। তাই বিয়ের নিয়ম প্রতিটি ধর্মে সুস্পষ্ট ভাবে বলা আছে। সেই নিয়মের বাইরে গিয়ে কোন নারী-পুরুষ নিজেদের যৌনাচারকে বিয়ে বলে অভিহিত করলেও তা কোন ভাবেই বৈধতা পাবে না। এমনকি বাংলাদেশের আইনেও তার বৈধতা নেই। কিন্তু নাহিদ মাহতাব কথিত কালেমা পড়ে বিয়েকে অনিয়মিত বিয়ে হিসেবে অভিহিত করে তাকে বৈধ বলেছেন। এরপর কোন একসময় নিবন্ধন করে নিলে নাকি তা নিয়মিত বিয়ে হবে।
এই সংজ্ঞা তিনি কোথায় পেয়েছেন? বাংলাদেশে বিয়ে সম্পর্কিত আইন ইসলাম যেভাবে বলেছে সেভাবে করা হয়েছে। তিনি একজন আইনজীবি হিসেবে কিসের ভিত্তিতে কোন সাক্ষী ছাড়া কথিত বিয়েকে বিয়ে বলে বৈধতা দিয়েছেন? এ অধিকার কে তাকে দিয়েছে?
এরপর তিনি বলেছেন, "পরবর্তী সময় আপনারা নিবন্ধনের মাধ্যমে বিয়েটি নিয়মিতকরণ করতে পারেন।" এই কথাটি কতবড় সামাজিক অনাচার সৃষ্টি করতে পারে তা চিন্তা করা যায়? দুই জন ছেলে-মেয়ে না জেনে কালেমা পড়ে কথিত বিয়ের নামে অবৈধ যৌনাচার করছে। এ অবস্থায় তারা হয়তো ভুল বুঝতে পেরে সিনিয়রের কাছে পরামর্শ চেয়েছেন। তখন আইনজীবি হিসেবে হোক, সিনিয়র হিসেবে হোক নাহিদ মাহতাবের বলা উচিত ছিল, তোমাদের বিয়ে ধর্মীয় বা আইনী কোন ভাবেই হয়নি। এ অবস্থায় তোমরা হয় সাক্ষী সহ বিয়ে করো বা কোর্ট ম্যারেজের যে সিস্টেম আছে তা ফলো করো এবং এখন যা করছ তা সম্পূর্ণ অবৈধ।
অথচ তিনি বললেন, তোমরা এখন যে অবস্থায় আছো সেভাবে চালিয়ে যাও, পরবর্তীতে (এখন নয় কিন্তু) কোন একসময় রেজিস্ট্রি করে নিও বা বৈধ ভাবে বিয়ে করে নিও। অর্থাৎ এখন যেভাবে ব্যাভিচার করে যাচ্ছ তা করে যাও, লিভটুগেদার করতে থাক। পরবর্তীতে ভাল লাগলে রেজিস্ট্রি করে নিও। এটিই কি তার কথা দিয়ে বুঝা যায় না? তার এই উপদেশ মতে দেশে যেসব অসভ্যতা, ব্যাভিচার, অবৈধ যৌনাচার চলছে তাকে কেউ আর অবৈধ বলতে পারবে না। যারা করছে তারাও মনে করবে এভাবে ব্যাভিচার করা যায়, আইনত বা ইসলাম মতো এসবে কোন সমস্যা নেই। এই কথাটি যদি কেউ বুঝে নেয়, তাতে কি ভুল হবে?
কি উদ্দেশ্য জাতিকে এত ভয়ংকর এক অসভ্যতার দিকে ডাক দিলো তথাকথিত আইনজীবি নাহিদ মাহতাব ও প্রথম আলো? জাতিকে তারা কোথায় নিয়ে যেতে চায়? এই আহবান কি তিনি না বুঝে বা না জেনে দিয়েছেন? তাদের অতীত কর্মকান্ড দেখলে পরিস্কার হবে না বুঝে নয়, পরিকল্পিত ভাবে নূতন প্রজন্মকে ব্যাভিচারে লিপ্ত হওয়ার আহবান জানানো হয়েছে। এই ধরনের ধর্মীয় ও বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের বাইরে গিয়ে পরামর্শের নামে নূতন প্রজন্মের নৈতিক চরিত্র ধ্বংসের যে ষড়যন্ত্র চলতে তা প্রতিহত করতে হবে এখনই। প্রতিবাদ জানাতে হবে সকল পর্যায় থেকে...
রিলেটেড পোস্ট- ওহ, অবাধ যত্রতত্র যৌনতা তাহলে স্বাভাবিক বিষয়?!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:০৪