একটা সময়ছিল রাতজেগে ভূতের গল্প শুনতাম। রাত যতই ঘনিয়ে আসতো, ভূতের গল্প শুনার জন্য আগ্রহ বেশী জেগে উঠত। কিছু লোকছিল সত্য মিথ্যা মিলিয়ে সুন্দর করে ভূতের গল্প সাজিয়ে বলতো। আমি তাদের পিছনে গুরগুর করতাম ভূতের গল্প শুনার জন্য। আসলে আমাদের দেশে ভূত আছে কি-না আমি নিজেই জানতাম না। তবে তাঁরা ভূতকে নিয়ে নানাভাবে বর্ণনা করতো। তাদের প্রতি আমার ধারণা ছিল যে তাঁরা ভূতের সাক্ষাৎ পেয়েছিল। না-হয় তারা ভৌতিক অভিজ্ঞতার গল্প জানে কি করে ? একদিন বিকালবেলা আমার এক দূরসম্পর্কে মামার সাথে সাক্ষাৎ। মামা একটু ঠান্ডার মাঝে গরম মেজাজি মানুষ। ঠান্ডার মাঝে গরম মেজাজি মানুষ এটা আবার কি ধরনের ? উনাকে যে কেউ দেখে ভাববে উনি ঠান্ডা মেজাজি মানুষ কিন্তু উনাকে মাঝে মাঝে দেখাযায় অল্পতেই রেগে উঠে। অনেক সময় আমার ধারণা হয় যে তিনি একজন মানসিক রোগী। সে যাইহোক, হঠাৎ মামার সাথে সাক্ষাৎ-
- মামা কেমন আছে ? ইদানিং তো আপনাকে আগে মতো দেখাই যাচ্ছেনা।
- তুমি দেখো না অন্যরা আমাকে ঠিকেই দেখে।
- মামা আপনি অন্যদের কাছে থাকেন তাই তারা আপনাকে দেখে। মামী কেমন আছেন ?
- সকাল পযর্ন্ত বলতে পারবো. সকালে দেখে আসছিলাম ভালই আছে।
- মামা আপনি কি কখনো ভূত দেখেছেন?
- খেয়ে কোন কাজ নাই-তো তাই আজাইরা পেছাল করতে আসছো।
- মামা আপনি মনেহয় আমার কথায় রেগে গেলেন ?
- না বাবা আনন্দে সাথেই বলছি। কেনো তুমি কি ভূত দেখেছো ?
- না মামা, সেই সৌভাগ্য আমার আজও হয়নি।
- অধৈর্য হওয়ার ধরকার নেই, আশায় থাকো, কোন একসময় তাদের দেখা পেতেও পারো সেই দিন বুঝবা সৌভাগ্য না দুর্ভাগ্য।
- দোয়া করবেন মামা আমি যাতে তাদের দেখা পেয়ে যাই। সেই অপেক্ষায় রইলাম।
- দোয় প্রয়োজন নেই, আমি তোমাকে একটু পরামর্শ দেই। তবে অর্থ ব্যয় করতে হবে।
- ঠিক আছে মামা বলেন শুনি কত টাকা ব্যয় করতে হবে?
- বেশী না ৫ টাকা দামের একটি মোমবাতি হলেই হবে।
- একটা কি আপনাকে দিতে হবে ?
- আমি কি বলছি আমাকে দিতে হবে। কোথায় দিতে হবে আমি বলেদিচ্ছি। বারহাট্টা কলেজের দক্ষিণ পাশে একটি রাস্তা আছে ঐ রাস্তার পশ্চিম মাথায় গিয়ে উত্তর দিকে দেখবে হিন্দুপাড়ার জঙ্গলের পাশে একটি শ্বশান রয়েছে, সেখানে তুমি রাত ১২টায় একা গিয়ে মোমবাতিটি জ্বালিয়ে একটু সময় অপেক্ষা করবে। অল্প কিছু সময়ের মাঝেই আশা করি তুমি তাদের সাক্ষাৎ পেয়ে যাবে।
- মামা আপনি কি এখানে গিয়েছিলেন ?
- আর কোন উচ্চারণ না করে এ মুহূর্তে বিদায় হও।
- ঠিক আছে মামা যদি যাই সেখানে তাহলে আমি আপনারকে জানাবো।
- আরে মিয়া, আমাকে না জানিয়ে তোমার বাড়িতে জানিয়ে যেও।
- ঠিক আছে এবার আসি, ভাল থাকবেন মামা।
মামার সাথে কথাবার্তা বলে বুঝলাম যে তিনি উত্তেজিত হয়ে গেছে। সামনের দিকে হেঁটে চললাম সামান্য কিছু দূর যাওয়ার পর পিছনদিকে মামার প্রতি নজর দিলাম। মামা আমার দিকে তাকিয়ে মনেমনে মিরমির করে কি যেন বলছে। আমার ধারণা যে মামা আমার সাথে সাক্ষৎ করে আশ্চর্য বোধ করছেন।
অনেক সময় নিজে নিজে ভাবি যে আমাদের দেশে ভূতের অস্তিত্ব নেই। যদিও অনেক আগে মানুষের মুখে শুনে আসছি ভূতের কথা, এখন মনেহয় ভূত নেই। শিশুকাল থেকেই বাড়ীর আত্মীয় ও বড়োদের মুখে ভূতের গল্প শুনে ছোটবেলায় খুব ভূতের ভয় পেতাম। বিশেষ করে রাতেরবেলায় একা একা যখন শুয়ে থেকে ভৌতিক ঘটনা ভাবতাম তখন আমার বুক শুকিয়ে আসতো। অনেক সময় ভয়ে কম্বল বা লেপের নীচে পা ও রাখতাম না যদি ভূতে পা বা হাত টেনে ধরে। বেশীরভাগই ভূত সংক্রান্ত চিন্তা-ভাবনা রাতেরবেলায় আসে। নেত্রকোনা জেলায় বারহাট্টা মধ্যেবাজারে কংস নদীর পাশে (বারহাট্টা সেলুঘাটে পুর্বপাশে) একটি শ্বশানঘাট রয়েছে। রাতের বেলায় ভাবলাম যে সেখাসে যাবো। তবে জায়গাটি আমার কাছে ভয়ঙ্কর মনে হতো কিন্তু ভয়ঙ্কর এই স্থানে রাতেবেলা যাওয়া সম্ভব নয়। যেতে হলে দিনেবেলায় যাবো।
খুব ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠলাম। শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর, তার মাঝেই একা হেঁটে হেঁটে চললাম শ্বশানঘাটের উদ্দেশে , বিভিন্ন ভয়ের কৌতুহল মনের মাঝে ভেঁসে উঠছে। তারপরও শ্বশানঘাটের কাছে যেতে শুরুকরলাম, হঠাৎ দেখি কি যেনো একটি আমাকে দেখে দৌড়দিলো আমি থমকে দাঁড়িয়ে গেলাম। সেকেন্ডের মধ্যে উধাও হয়ে গেল ঠিক বুঝলাম না। হঠাৎ করে বুকটা তরতর করে কেঁপে উঠল। কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে ভাবলাম, সম্ভবত এটা শিয়াল হবে। দূরে কিছু মানুষের আসার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।...........
- আজ আর নয় বাকিটুকু পরের লেখায় হবে। ভালো থাকুন সবাই।