somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কৃষ্ণচূড়া

০৭ ই মে, ২০১০ দুপুর ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কৃষ্ণচূড়া বা রক্তচূড়া বা গুলমোহর
কৃষ্ণচূড়া গাছের যে আরেক নাম গুলমোহর একথাটা অনেক কম লোকোই জানেন, কিন্তু কৃষ্ণচূড়াকে চেনেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার। এখন কৃষ্ণচূড়ার সময়, ফুটে আছে গাছে গাছে লালে লাল হয়ে। এই লালের সমারহ কৃষ্ণচূড়ারই মহিমা। মনে হয় ঢাকায় যে সমস্ত ফুল গাছ দেখা যায় তার মধ্যে কৃষ্ণচূড়ার স্থানই সবার উপরে। কৃষ্ণচূড়াই একমাত্র ফুল যাকে ঢাকার প্রায় প্রতিটি রাস্তাতেই দেখতে পাওয়া যায়।



আমাদের দেশে কৃষ্ণচূড়া ফোটার সময় এখই, অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন। কিন্তু দুনিয়ার অন্য প্রান্তের কৃষ্ণচূড়া কিন্তু আমাদের সময়ের সাথে মিল রেখে ফুল ফোটায় না, বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সয়ম কৃষ্ণচূড়াকে ফুটতে দেখা যায়। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ফ্লোরিডায় ফোটে জুন মাসে আবার ক্যারাবিয়ান অঞ্চলে ফোটে মে থেকে সেপটেম্বর পর্যন্ত। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ায় ফুটতে দেখা যায় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, কিন্তু আরব আমিরাতে ফুটতে শুরু করে সেপ্টেম্বরে। এখানে ছোট্ট করে বলে রাখা যায়, কৃষ্ণচূড়া বা রাধাচূড়া কোনোটাই কিন্তু আমাদের দেশীয় গাছ বা ফুল নয়। এদের আদি উৎস বড় কৃষ্ণচূড়ার পূর্ব আফ্রিকা আর ছোটোকৃষ্ণচূড়া বা রাধাচূড়া এসেছে ওয়েস্ট ইণ্ডিজ থেকে।


প্রকৃতির খেলা দেখুন, কিছুদিন আগে ফুটেছে রক্ত রাঙ্গা পলাশ আর মান্দর। এদের দাপট শেষ হতে না হতেই এবার সেই লাল রঙ্গের লালীমা নিয়ে হাজির হয়েছে কৃষ্ণচুড়া। অবশ্য কৃষ্ণচূড়া যে শুধু লাল রং এর হয় তা নয়, প্রধাণত লাল হলেও কমলা লাল ও হলুদ রং এর হতে দেখা যায়। অনেকে লাল আর কমলা-লাল রং এর ফুলগুলিকেই কৃষ্ণচূড়া মনে করে আরা হলুদগুলিকে ভাবে রাধাচূড়া। আসলে রাধাচূড়া হলুদ বা হলদেলাল হয় ঠিকই, কিন্তু কৃষ্ণচূড়ার সাথে এর প্রধাণ পার্থক্য হচ্ছে গাছের আকারের। কৃষ্ণচূড়া হয় বড় থেকে মাঝারি আকারের গাছ, আর রাধাচূড়া যাকে অনেক সময় বলা হয় ছোটো কৃষ্ণচূড়া সেটা হয় ছোটো আকারের গাছ। কবছর আগে ঢাকার (জিয়া) বিমান বন্দরের রাস্তার পাশে প্রচুর পরিমাণে এ‌ই রাধাচূড়ার গাছ লাগানো হয়েছিল। গেলেই দেখতে পাবেন ছোট ছোটো রাধাচূড়া গাছে কৃষ্ণচূড়ারই মতো দেখতে ফুল ফুটে আছে। অনেক বছর আগে মহেশখালীতে বেড়াতে গিয়ে আদিনাথ মন্দিরের নিচে যে মন্দিরটি আছে সেখানে বেশ বড়-সড় একটি রাধাচূড়া দেখেছিলা, জানিনা এখনো আছে কিনা। রাধাচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম Caesalpinia pulcherrima।


রাধাচূড়া গাছ


রাধাচূড়া ফুল
আবার কনকচূড়া নামের আরেকটি ফুল আছে যা দেখতে অনেকটাই রাধাচূড়ার মতই হলুদ রং এর। ফোটেও একই সময়ে আর গাছটিও প্রায় কৃষ্ণচূড়ার মতই দেখতে।


কনকচূড়া গাছ
অনেক লোকই এই কনকচূড়াকে রাধাচূড়া বলে ভুল করে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Peltophorum roxburghii।


কনকচূড়া ফুল




কৃষ্ণচূড়া গাছে উজ্জল সবুজ ঝিরি ঝিরি পাতা একে অন্যরকম দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য দান করেছে।
শুধু মাত্র সৌন্দর্য নয় বরং এর নিভিড় ছায়া উষ্ণ আবহাওয়ায় অনাবিল প্রশান্তি দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। গাছ যখন একটু বড় হয় তখন ডাল-পালা চারদিকে ছড়িয়ে দেয় মাটির দিকে মুখ করে। আমাদের দেশে শীত-গ্রীষ্মে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে যায় অনেকটাই। প্রায় পত্রহীন গাছে গাছে বড় বড় থোকায় থোকায় ঝাপটে আসে কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুল। দূর থকে দেখা যায় শুধুই লালের লীলা, অল্প যা কিছু পাতা থাকে তা লজ্জায় লাল হয়ে মিলয়ে যায় লালের সাথেই।


কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো বড় চার থেকে পাঁচটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়ি গুলো প্রায় ৫ থেকে সাড়ে ৭ সেন্টিমিটারের মত চওড়া হতে পারে। পাপড়িগুলি এমন ভাবে মেলে থাকে মনে হয় যেন বাঘের থাবা।


খুববেশিসম্ভব এর জন্যই কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম হয়েছে Delonix regia। Delonix শব্দটি এসেছে গ্রীক শব্দ delos আর onux থেকে। যার আক্ষরিক অর্থ স্পষ্ট দৃশ্যমান থাবা। regis শব্দের অর্থ royal, তাই কৃষ্ণচূড়াকে রাজকীয় গাছো বলে পারেন। কৃষ্ণচুড়ার অনেক গুলি ইংরেজী নাম রয়েছে- - royal poinciana, flamboyant tree, flame tree, peacock flower ইত্যাদি।
অনেকে মনে করেন পৃথিবীর সবচেয়ে রঙ্গীন গাছ এই কৃষ্ণচূড়া। গ্রীষ্মে লাল রংএর ফুলে প্রায় নিষ্পত্র গাছ আচ্ছন্ন হয়ে গেলেও বর্ষা পর্যন্ত গাছে ফুলের রেশ থাকে।


রবি ঠাকুর বলেছেন;
“গন্ধে উদাস হাওয়ার মত উড়ে তোমার উত্তরী
কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জুরী।”



কৃষ্ণচুড়া গাছ যৌগিক পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। ফল শিমের মত চ্যাপ্টা ৩০-৬০ সে.মি. লম্বা।


বীজ থেকে সহজেই চারা জন্মে। চারাগুলি দ্রুত বাড়ে আর কয়েক বছরের মাঝেই সে গাছে ফুল আসে। কৃষ্ণচূড়া গাছ আনেকটা যায়গা নিয়ে লাগানো উচিত। আর সব চেয়ে সুন্দর হয় যদি কৃষ্ণচূড়ার কাছাকাছিই এমন গাছ লাগানো যায় যাতে হরুদ বা নীল রংএর ফুল ফোটে। যেমন কৃষ্ণচুড়া আর কনকচূড়া কিংবা জারুল ইত্যাদি।


আমি যতটুকু জানি তার ভিত্তিতেই এই লিখা। আমার জানায় যদি কোনো ভুল থাকে তাহলে জানানোর অনুরোধ রইলো, সেই সাথে সকল প্রকার ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করছি।

সূত্রঃ
কৃষ্ণচূড়া
কৃষ্ণচূড়া
রাধচূড়া
কনকচূড়া
দ্বিজেন শর্মার ফুলগুলি যেন কথা।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১১ দুপুর ২:০৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×