somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তন্দ্রাবিলাস – হুমায়ূন আহমেদ (কাহিনী সংক্ষেপ)

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১০:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বইয়ের নাম : তন্দ্রাবিলাস
লেখক : হুমায়ূন আহমেদ
লেখার ধরন : মিসির আলি বিষয়ক উপন্যাস
প্রথম প্রকাশ : জানুয়ারি, ১৯৯৭
প্রকাশক : দিব্য প্রকাশনা
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৯৬ টি



সতর্কীকরণ : কাহিনী সংক্ষেপটি স্পয়লার দোষে দুষ্ট


কাহিনী সংক্ষেপ :
সকাল বেলা একটি যুবতী মেয়ে এসে বসে আছে মিছির আলির সামনে, নাম তার সায়রা বানু। কিন্তু একটু পরে মিসির আলি ধরে ফেললেন মেয়েটির নাম সায়রা বানু না এবং মেয়েটি প্রচুর মিথ্যে কথা বলছে। মেয়েটিকে মিসির আলি চলে যেতে বললেন। মেয়েটির নাম চিত্রা। মেয়েটি চলে গেলো কিন্তু রেখে গেলো তার ব্যাগগুলি। মিসির আলি মেয়েটির বাড়ির টেলিফোন নাম্বার চাইলে সে একটা কাগজে লিখে দিলো। দশ দিন পরেও যখন চিত্রা তার ব্যাগ নিতে আসলো না, তখন মিসির আলি কাগজ বের করে দেখেন সেখানে ইংরেজিতে লেখা আছে হেল্প মি।

ব্যাগে ঠিকানা খুঁজতে গিয়ে দেখতে পেলেন সেখানে দামি কাগজে মিসির আলির জন্য দীর্ঘ একটি চিঠি লেখা আছে। চিঠিতে চিত্রা লিখেছে শিশুকালে বান্দরবান থেকে ফেরার সময় কার এক্সিডেন্টে তাঁর মা মারা যায়ন। পরে তাঁর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। কিন্তু ছোট মা ছিলো রাগী ও কিছুটা অসুস্থ মানুষ। রেগে গেলেই তিনি আত্মহত্যার হুমকি দিতেন। একদিন তিনি সত্যি সত্যিই আত্ম হত্যা করেন। মামারা মামলা করলেও শেষ পর্যন্ত প্রমাণ হয় ছোটমা মানষীক ভাবে অসুস্থ ছিলেন।

বিশাল দোতালা বাড়িতে চিত্রা একা একা বড় হতে শুরু করে। চাকর বাকরদের দোতালায় উঠা নিষেধ ছিল। চিত্রা স্কুল থেকে ফিরে একা একা দোতালায় খেলতো। ছোট বাচ্চারা যেভাবে মনে মনে কোন খেলার সাথী তৈরি করে, একা একাই তাঁর সাথে কথা বলে, চিত্রাও তেমনি তাঁর ছোট মাকে কল্পনায় খেলার সাথী করে নেয়।

হঠাৎ একদিন চিত্রার জ্বর হয়, তখন সে দেখে ছোট মা তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে। পাশের টেবিলে একটি বই ছিল। চিত্রা বইটি চাইলে ছোটমা বইটি চিত্রাকে এনে দেয়। কিন্তু সেটা অসম্ভব একটা ব্যাপার। এরপর থেকে প্রায়ই ছোট মা আসতে থাকে। চিত্রা ছোটমার কথা কাউকে বলে না। এভাবে দিন কাটতে থাকে চিত্রার বয়স বাড়তে থাকে। ওর বাবা আবার বিয়ে করে নীতুকে। চিত্রা তাকে নিতু আন্টি বলে ডাকে। নীতু আন্টি বাড়িতে এসেই চিত্রার জন্য একজন ওর বয়সী কাজের মেয়ে গ্রাম থেকে আনিয়ে দেয়। মেয়েটির নাম শরিফা। শরিফা রাতে চিত্রার সাথে ঘুমতে শুরু করে। রাতে চিত্রাকে সে আদিরসাত্মক গল্প শোনাতে শুরু করে।

নীতু আন্টি আসার পরে চিত্রার নিসঙ্গতা কাটতে থাকে। নীতু আন্টির সাথে চিত্রার সুন্দর একটি সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরপর থেকে ছোট মা আসা কমিয়ে দেয়, কয়েক মাস পর পর হঠাৎ আসে। শরিফা মেয়েটির সাথেও চিত্রার ভাব হয়। একদিন শরিফার মা এসে শরিফাকে দেশে নিয়ে যায় শরিফাকে বিয়ে দিবে বলে। বিয়ে হয়ে গেলে শরিফা আর আসবে না।

একদিন রাতে হঠাৎ করেই ছোট মা এসে হাজির হয়। চিত্রা বুঝতে পারে এই ছোট মা ও আগে আসা ছোট মায়ের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। ছোট মা বলে শরিফা খারাপ মেয়ে তাই শরিফাকে তিনি শাস্তি দিবেন।

নীতু আন্টিকে রাতের বেলা চিত্রা ছোটমার কথা বলেন। তিনি চুপচাপ সব শুনে যান। এরপর তিনি আর কখনো ছোটমার কথা তোলেননি তবে রাতে তিনি চিত্রার সাথে ঘুমতে শুরু করেন। এর মধ্যে চিত্রার রাতে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। সারা রাত জেগে থাকে। ফলে দিনের বেলা ঝিমুনির মত হয়। তখন চিত্রা যেস্বপ্ন দেখে সেটা সত্যি হয়ে যায়। আবার চিত্রা চাইলে মনে মনে কিছু ভেবে রেখে স্বপ্ন দেখতে পারে। চাইলে সে দেখা স্বপ্নও বদলে দিতে পারে। সব শেষ যে স্বপ্নটা দেখে সেটা ফলে যায়। শরিফার বিয়ে হয়ে গেলে সে আর আসবে না বলে চিত্রা স্বপ্ন দেখে বিয়ের পরে তার বরের সাথে ঝগড়া হয়ে শরিফা ফিরে আসে। চিত্রার স্বপ্ন সত্যি হয় সাইকেল ও টাকা না পেয়ে শরিফার বর শরিফাকে তুলে নেয় না, শরিফা ফিরে আসে চিত্রার বাড়িতে।

একদিন শরিফার বর আসে চিত্রাদের বাড়িতে। নীতু আন্টি তাকে বলে পরের বুধবারে এসে সাইকেল, টাকা আর শরিফাকে নিয়ে যেতে। তখনই তিনি একটি সাইকেল আনিয়ে রাখেন। কিন্তু সেদিনই স্বপ্নে ছোটমা চিত্রাকে বলে শরিফাকে শাস্তি দিবেন। সেদিনই ছাদ থেকে কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে শরিফাকে হত্যা করে।

মৃত্যুর পর থেকে মৃত শরিফা এসে চিত্রার খাটের নিচে থাকে। একদিন রাতে শরিফার ফোপানির শব্দশুনে নীতু আন্টি শরিফাকে দেখে ফেলেন। এরপর থেকে তিনি রাতে ঘুমাতে পারেন না, শরিফার সাথে কথা বলেন। দেখতে দেখতে তাঁর মাথা খারাপ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত তাকে তাঁর বাবর বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে হয়। পরে চিত্রা একদিন শরিফার স্বামিকে খবর দেয় সাইকেন নিতে। সাইকেলের সাথে সাথে শরিফাও চলে যায় তাঁর স্বামীর সাথে। মাসখানেকের মধ্যে শরিফার স্বামীও পাগল হয়ে যায়।

চিত্রার বাবা চিত্রাকে বিদেশে নিয়ে যায় সাইক্রেটিস দেখাতে। চিত্রা ডাক্তারের সাথে সেই ভাবেই কথা বলে যেভাবে ডাক্তার শুনতে চাইছে। দেশে ফিরে চিত্রার বাবা চিত্রার শোয়ার ঘর চেঞ্জ করে দেন। ঘরে বক্সখাট ও কম্পিউটার দেন। কম্পিউটার শিখাবার জন্য একজন লোক রেখে দেন। একদিন রাতে চিত্রা তাঁকে ভয় দেখালে পরদিন সকালে সে চলে যায়।

মিসির আলি তার পর্যবেক্ষণ আর অনুসন্ধানী শক্তি বলে বের করে ফেলেন চিত্রা আসলে তাঁর বাবা মার পালক সন্তান ছিল। বিষয়টা যখন বুদ্ধিমতি চিত্রা ধরতে পারে তখন তাঁর জগতটা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। নীতু আন্টি চিত্রার সাথী হিসেবে চিত্রার আপন বোনকে নিয়ে আসেন, চিত্রা বিষয়টি বুঝে যায়। বিয়ে করে যাতে শরিফা চলে না যায় তাই চিত্রাই শরিফাকে হয়ত হত্যা করেছে।

----- সমাপ্ত -----


=======================================================================

আমার লেখা হুমায়ূন আহমেদের অন্যান্য কাহিনী সংক্ষেপ সমূহ

আমার লেখা অন্যান্য কাহিনী সংক্ষেপ সমূহ:
ভয়ংকর সুন্দর (কাকাবাবু) - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
মিশর রহস্য (কাকাবাবু) - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
খালি জাহাজের রহস্য (কাকাবাবু) - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
ভূপাল রহস্য (কাকাবাবু) - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
পাহাড় চূড়ায় আতঙ্ক (কাকাবাবু) - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
সবুজ দ্বীপের রাজা (কাকাবাবু) - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়


তিতাস একটি নদীর নাম - অদ্বৈত মল্লবর্মণ

ফার ফ্রম দ্য ম্যাডিং ক্রাউড - টমাজ হার্ডি
কালো বিড়াল - খসরু চৌধুরী
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১০:১৩
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×