somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পথের কথা - ০১

০৮ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্বীকারোক্তি :
লেখাটির শুরু হয়েছে সোনাগাজী সাহেবের একটি মন্তব্যের ঘরে প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে। আমি কোনো ভ্রমণ বা দেশের দেখা প্রত্নতত্ত্বের স্থাপনার ছবি দিলেই তিনি জানতে চান সেখানকার লোকজন কেমন, তাদের জীবন যাত্রা কেমন, তারা কি করেন, তাদের জীবিকা কি ইত্যাদি।




সত্যি কথা বলতে আমি মানুষ জনের সাথে খুব একটা ভাব করতে পারি না।
তাছাড়া বেড়াতে যখন যাই তখন একটা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট একটি পরিকল্পনা মাফিক চলতে হয়। সেখানে মানুষ জনের সাথে মেশা গল্পগুজব করার সময় খুব একটা থাকে না। চলতি পথে হয়তো কারো সাথে টুকটাক কথা বলা যায়। এরচেয়ে বেশী কিছু না।

তবে আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি ট্যুরিস্ট স্পটগুলির আশপাশের মানুষ, বেড়াতে আসা ট্যুরিস্টদের টাকার চলমান বোকা বাক্স বলে মনে করে। ঐসমস্ত এলাকর বেশীরভাগ লোক ধান্দাবাজ টাইপের হয় (হয়তো শুধু ট্যরিস্টদের সামনেই।) এমনকি বাচ্চাগুলিও বড়দের দেখে দেখে সেইসব শিখে নেয়। তবে কিছু ভালো লোক সব খানেই থাকে।

ট্যুরিস্টস্পটের বাইরে গ্রামের লোকগুলি এখনো খুবই আন্তরিক, খুবই মানবিক। তাদের সামনে আমরা শুহুরে লোকেরা অনেকটা রোবটের মতো, এবং স্বর্থপর।

গত ২৯-০৭-২০২২ ইং রোজ শুক্রকার। জুলাই মাসের শেষ শুক্রবার। বরাবরের মতোই Save the Heritages of Bangladesh-এর ডে-ট্রিপ ছিলো। এবারের গন্তব্য ছিলো শরিয়তপুর। সকাল থেকেই নানান পুরনো স্থাপনা ঘুরে ঘুরে দেখেছি। সারাদিন প্রচন্ড গরম গেছে। গাড়ি থেকে নেমে একটু হেঁটে স্থাপনাগুলি দেখে ছবি তুলার সময় টুকুতেই আমার গায়ের পাতলাা সাদা ফতুয়াটি বারবার ঘামে ভিজে যাচ্ছিলো।

সকাল ১১টার দিকে তেমনি ভাবেই গাড়ি থেকে নেমে অনেকটা পথ গ্রামের মেঠ পথে হেঁটে ঘামতে ঘামতে ভেজা ফতুয়া নিয়ে পৌছেছি রুদ্রকর গ্রামের রুদ্রকর মঠের সামনে। মঠটির ৩ পাশ থেকে গাছপালা এমন ভাবে ঝাকিয়ে আছে যে কোনো ভাবেই ছবি তোলা যাচ্ছে না। একপাশে সুবিশাল পুকুর থাকার কারণে সেই পাশটিতে কোনো গাছ নেই। পুকুরের উলটো পাশে গেলে ভালো ভিউ পাওয়া যাবে। তাই আমি সহ ৪০ জনের গ্রুপের অনেকেই হাঁটা শুরু করেছি পুকুরের উলটো পাশে যেতে। কেউ কেউ রয়েছে মঠেই, সেলফি তুলছে।

ততোক্ষেণে আকাশে কালো মেঘ জমেছে। অনেকেই মঠের বাম পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে পুকুরের উলটো পাশে যাওয়ার জন্য। আমার সেথে আরো তিন জন ডান পাশে হাঁটা ধরেছেন। আমিই সবার আগে। হাঁটতে হাঁটতে যখন পুকুরের উলটো পাশে প্রায় চলে এসেছি তখন শুরু হয়েছে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি। ঘামে ভেজা ফুতুয়া আর গামছা এবার বৃষ্টিতে ভিজতে শুরু হয়েে। ছবি তোলার মত যায়গায় যখন পৌছেছি তখন বৃষ্টি মোটামুটি বাড়তে শুরু করেছে। দুই-তিনটি ছবি তুলতেই ক্যামেরাতে বৃষ্টির জল পড়তে শুরু করলো। গামছা দিয়ে ক্যামেরা ঢেকে একটি ঝাকালো গাছের নিজে দাঁড়ালাম। অন্য একজন দাঁড়িয়েছেন আমার কাছাকাছি, বাকি দুজন দৃষ্টির আড়ালে চলে গেছেন। বৃষ্টির লক্ষ্যণ খারাপ, দেখতে দেখতে সারা শরীর ভিজে গেছে। আমার পাশের মুরব্বীকে বললাম সামনে বাড়ি আছে সেখানে যাই। আমি হাঁটা ধরার পরে দেখলাম উনি অন্য পথে অন্য একটি বাড়ির দিকে যাচ্ছেন। আমি একটি বাড়ির পাশেই প্রচন্ড ঝাকালো একটি আম গাছের তলে গাছের শিকরেই বসে পড়লাম। কারণ ঝুম বৃষ্টির মধ্যেও তখনো গাছের নিচটা শুকনো। কিছুক্ষণ বসে থাকতেই গাছের পাতা বেয়ে বড় বড় জলের ফোঁটা পরতে শুরু করলো। বুঝে গেলাম জলের ফোঁটার সংখ্যা এখন দ্রুত আরো বাড়বে। ঠিক তখন একটি চিকন-চাকন লম্বা ছেলে পাশের পুকুরে গোসল করার জন্য বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো। সে আমাকে দেখে বললো-
-আপনি বৃষ্টিতে ভিজে যাবেন। আমার বাড়িতে গিয়ে বসেন। চলেন আমার সাথে।
-ঠিক আছে চলেন। বলে আমি তার পিছু নিয়ে পাশের পাট শোলার রান্না ঘর পেরিয়ে একটি টিনের কাচা ঘরে গিয়ে উঠলাম।
মোটামুটি বড় এক রুমের একটি টিনের দোচালা ঘর, সামনে টিনের বারান্দা, কাচা মাটির ফ্লোর। বারান্দায় দরজার দুপাশে দুটি চৌকি। আমি পাশেই থাকা একটি চেয়ারে সবলাম আরাম করে ভেজা শরীর নিয়ে।

আমার ভেজা শরীর দেখে একটি গামছা দেয়া হলো শরীর মোছার জন্য। যদিও আমার কাছে একটি গামছা ছিলো, যেটি অলরেডি ঘাম আর বৃষ্টিতে ভিজে আছে। আমি একটি মগের জলে আমার গামছাটি ধুয়ে নিয়ে সেটি দিয়ে নিজেকে সামান্য মুছে নিয়ে সেটি শুকানোর জন্য দরজার উপরে ঝুলিয়ে দিলাম।

পাশের চৌকিতে একজন চাচা মিয়া শোয়ার ছিলেন। তিনি উঠে বসে আমার সাথে আলাপ করলেন। আমার কোথা থেকে আসছি, কেনো আসছি, কোথায় আসছি, কোথায় যাবো ইত্যাদি নানান বিষয় নিয়ে আলাপ করতে করতে বেশ কিছুটা সময় কেটে গেলো। বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষ্যণ নেই। এদিকে শুক্রবার বলে একটু আগে আগেই জুম্মার নামাজের আজান হয়ে গেলো। এরমধ্যে বাড়ির ভিতর থেকে এক বাটি ফজলি আম, এক বাটি গাছ পাঁকা কাঠালের কোয়া, এক বাটি চানাচুর, এক বাটি বিসকুট, দুই গ্লাস সরবত, এক গ্লাস পানি দিলো আমার সামনে। যদিও আমার মোটেও খুধা লাগেনি তবুও আমি কোনো সংকোচ না করেই বিস্কুট ছাড়া সব কিছুই একটু একটু করে খেলাম।

একসময় বৃষ্টি কমে এলো। আমি বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম। তখন চাচা-চাচী দুপুরের খাবার খেয়ে যেতে বললেন। আমি জানালাম আমাদের ৪০ জনের খাবার একটি রেস্টুরেন্টে অর্ডার দেয়া আছে। সময় মতো সেখানে গিয়েই খেতে হবে। উনারা আমাকে দুপুরের খাবার না খাওয়াতে পেরে একটু যেনো মন মরাই হয়ে গেছেন। আমি আবারও চাচীকে বুঝিয়ে বলে সালাম দিয়ে বৃষ্টি ভেজা কাদা মাটির উঠনে নেমে এলাম। একবারও পিছনে না তাকিয়ে ধীরে ধীরে সাবধানে পথে উঠে হাঁটা ধরলাম আমাদের জন্য অপেক্ষমান গাড়ির দিকে।

উৎসর্গ : জেনারেল সোনাগাজী
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১১:২২
১৫টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিশ্বাসীকে লজিকের কথা বলার দরকার কি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:১৭




হনুমান দেবতা এবং বোরাকে কি লজিক আছে? ধর্ম প্রচারক বলেছেন, বিশ্বাসী বিশ্বাস করেছেন ঘটনা এ পর্যন্ত। তাহলে সবাই অবিশ্বাসী হচ্ছে না কেন? কারণ অবিশ্বাসী বিশ্বাস করার মত কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের শাহেদ জামাল- ৭১

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:৫৪



শাহেদ জামাল আমার বন্ধু।
খুব ভালো বন্ধু। কাছের বন্ধু। আমরা একসাথেই স্কুল আর কলেজে লেখাপড়া করেছি। ঢাকা শহরে শাহেদের মতো সহজ সরল ভালো ছেলে আর একটা খুজে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভাবছিলাম ২ লক্ষ ব্লগ হিট উপলক্ষে ব্লগে একটু ফান করব আড্ডা দিব, কিন্তু এক কুৎসিত অপব্লগার সেটা হতে দিলোনা।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:০৫



এটি ব্লগে আমার ২৬০ তম পোস্ট। এবং আজকে আমার ব্লগের মোট হিট ২০০০০০ পূর্ণ হয়েছে। আমি আনন্দিত।এই ছোট ছোট বিষয় গুলো সেলিব্রেট করা হয়তো ছেলে মানুষী। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শয়তান বন্দি থাকলে শয়তানি করে কে?

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:২০



রমজানে নাকি শয়তানকে বেধে রাখা হয়,তাহলে শয়তানি করে কে?

বহুদিন পর পর ব্লগে আসি এটা এখন অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। বেশ কিছু বয়স্ক, মুরুব্বি, সম বয়সি,অল্প বয়সি একটিভ কিছু ব্লগার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কট বাঙালি

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:২৪



কদিন পরপরই আমাদের দেশে বয়কটের ঢল নামে । অবশ্য তাতে খুব একটা কাজ হয় না । বাঙালির জোশ বেশি দিন থাকে না । কোন কিছু নিয়েই বাঙালি কখনই একমত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×