নীল জ্যাকারান্ডা
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : নীলকন্ঠ, নীলচুড়া, নীল পারদ, নীল গুলমহর (হিন্দি)
Common Name : Jacaranda, Blue Jacaranda, Black poui, Fern tree
Scientific Name : Jacaranda mimosifolia
বাংলাদেশে এই গাছটির বিস্তার খুব একটা চোখে পড়ে না। জ্যাকারান্ডার বাংলা নাম নিয়েও নানান মত আছে। মূলতো নীলকন্ঠ বলে ডাকা হলেও আমাদের অতিপরিচিত নীল অপরাজিতা ফুলের আরেক নাম নীলকন্ঠ।
মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনে দেখেছি "নীল পারদ" লিখেছে। তাবে জ্যাকারান্ডার হিন্দি নাম "নীল গুলমহর" হওয়াতে অনেকেই একে বাংলায় "নীল কৃষ্ণচূড়া বা নীলচূড়া" নামে ডাকে। সত্যি বলতে এর ফুলের সাথে কৃষ্ণচূড়া ফুলের কোনো মিল নেই। তবে কৃষ্ণচূড়া গাছের পাতার সাথে জ্যাকারান্ডা গাছের পাতার বেশ মিল আছে।
জ্যাকারান্ডা বেশ বড়োসরো হয়ে উঠে কৃষ্ণচূড়া গাছের মতোই। বসন্তে গাছের সব পাতা ঝরে যায়, আর নীলচে বেগুনী ফুল ফুটতে শুরু করে। পত্রহীন গাছ নীলচে বেগুনী ফুলে ছেয়ে যায়। তখন সেই ফুল গাছের রূপ ভাষায় বর্ননার করা দুরহ। ফুল যখন ঝরতে শুরু করে তখন মনে হয় গাছের তলায় যেন নীলচে বেগুনী চাদর বিছিয়ে রেখেছে কেউ। তবে আমাদের বাংলাদেশে যেকয়টি জ্যাকারান্ডা গাছ আমি দেখেছি তাদের কোনোটিতেই ফুলে ফুলে ছেয়ে যেতে দেখি নাই, যেমনটা অস্ট্রেলিয়ার গাছগুলিতে ছেয়ে যেতে দেখি ছবিতে। সম্ভবতো আবহাওয়াগত কারণেই এমনটা হয়ে থাকবে। জ্যাকারান্ডার আদিনিবাস ছিলো মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, কিউবা, জ্যামাইকা ও বাহামার উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলগুলোতে। জ্যাকারান্ডাকে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এমনকি অস্ট্রেলিয়াতেও অনুপ্রবেশ করানো হয়েছে। সাধারণত আলংকারিক বৃক্ষ হিসেবে রাস্তার ধারে সারিবদ্ধ ভাবে লাগানো হয়।
অস্ট্রেলিয়ার গ্রাফটন শহরকে জ্যাকারান্ডা রাজধানী বলা হয়। শহরের বেশির ভাগ রাস্তার পাশে সারিবদ্ধ ভাবে অসংখ্য জ্যাকারান্ডা গাছ লাগানো আছে। সেপ্টেম্বর-অক্টবর মাসে পুরো গ্রাফটনের রাস্তাগুলো জ্যাকারান্ডা ফুলে ফুলে বেগুনী হয়ে যায়। সেই সময় সেখানে Jacaranda festival অনুষ্ঠিত হয়। অস্ট্রেলিয়ার অনেক রাস্তার নাম জ্যাকারান্ডার নামে নামকরণ করা হয়েছে।
জ্যাকারান্ডাকে নিয়ে নানার গল্প-কবিতা, গান আছে। Steve Tilston এর Jacaranda গানটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। তাছাড়া ১৯৮৫ সালের একটি স্প্যানিশ গানের কথাকে ভেঙ্গেচুরে আমিও একটি কবিতা লেখার চেষ্টা করেছিলাম "তোমার চোখে জ্যাকারান্ডার আলো" নামে।
তোমায় আমি বাসি ভাল তোমার রূপের জন্য
অপরূপ স্নিগ্ধতা রয়েছে সেথায়
তোমায় আমি বাসি ভাল তোমার চোখের জন্য
নীল জ্যাকারান্ডা ফুটেছে সেথায়
তোমায় আমি বাসি ভাল তোমার ওষ্ঠের জন্য
যখন ঠোঁট চেয়েছে ভালবাসা কি বুঝে নিতে
তোমায় আমি বাসি ভাল তোমার অধরের জন্য
তোমার ঠোঁটের মিছরি দানার মিষ্টি চুষে নিতে
তোমায় আমি বাসি ভাল
কষ্ট যত যেতে ভুলে তোমারই সান্নিধ্যে
তোমায় আমি বাসি ভাল
কষ্ট যত ভুলিয়ে দিতে আমারই সান্নিধ্যে
তোমায় আমি বাসি ভাল
মেঘের মত এলোমেলো তোমার চুলের জন্য
তোমায় আমি বাসি ভাল
জ্যাকারান্ডার নীলচে চোখের জন্য।
ছবি তোলার স্থান : হাতিরঝিল, ঢাকা, বাংলাদেশ।
ছবি তোলার তারিখ : ২৫শে মার্চ, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৪৭