বেশ কয়েক মাস আগে আমাদের এলাকার কয়েকজন বড় ভাই ঠিক করেন তারা টাঙ্গাইলের ২০১ গম্বুজ মসজিদ দেখতে যাবেন। বয়সে আমি ছোট হলেও উনারা আমাকে কিছুটা পছন্দ করেন বলে আমাকেও সাথে যাবার অফার করেন। আমি রাজি হই, এবং শর্ত জুড়ে দেই "১৪০+১৪০ কিলোমিটার পথ যাওয়া-আসা করে মাত্র একটা মসজিদ দেখে আমার পোষাবেনা। যদি ২০১ গম্বুজ মসজিদের সাথে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান যোগ করা হয় তবেই আমি যাবো।" সেই সফরটি মোটামুটি ভালই ছিলো। তারপরে উনাদের আগ্রহে মাওয়া-পদ্মা সেতু হয়ে একটি ট্রিপ হয়। এবার আবার আরেকটি সফরের আয়োজন করা হয়েছে।
মানিকগঞ্জ-টাঙ্গাইল ঐতিহ্য সফর
ভ্রমণ তারিখ : ৬ই মে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ, শনি বার।
সম্ভাব্য দ্রষ্টব্য স্থাপনা সমূহ :
১। নালড়া পুরনো নগরি :
নালড়ায় আছে সত্যবাবুর জমিদার বাড়ি, জ্ঞানকুটির পাঠাগার, রমেশ সেনের বাড়ি এবং একটি পুরনো কলোনিয়াল আবাসিক এলাকা। সেখানে ৮টি কলোনিয়াল বাড়ি টিকে আছে।
২। বেতিলা জমিদার বাড়ি :
বেতিলা খালের অপর পাশে আছে বেতিলা জমিদার বাড়ি। এখানে পাশাপাশি প্রায় একই রকম দেখতে দুটি বাড়ি আছে। একসময় বেতিলা খাল দিয়ে ধলেশ্বরী ও কালিগঙ্গা নদীতে বজরা, মহাজনী নৌকা আসা যাওয়া করতো। পাটের ব্যবসায়ি জ্যোতি বাবু ছিলেন এই জমিদার বাড়ির পূর্বপুরুষ। বেতিলা জমিদার বাড়ি বর্তমানে সরকারী আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
৩। ধানকোড়া জমিদার বাড়ি / বাবু হেমচন্দ্র রায় চৌধুরী বাড়ি :
ভারতের দিল্লি থেকে নরসিংহ রায় চৌধুরী বাংলাদেশের মানিগঞ্জের ধানকোড়ায় এসে জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। দেশ ভাগের মধ্য দিয়ে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলে জমিদার বাড়ির বংশধররা ১৯৫২ সালে ভারতে চলে যান।
৪। হাওয়াখানা পুকুর :
বালিয়াটির জমিদার হীরালাল রায় চৌধুরীর নির্মাণ করা হাওয়া খানা পুকুর এটি।
৫। বালিয়াটি জমিদার বাড়ি :
১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে লবণ ব্যবসায়া প্রচুর টাকার মালিক হয়ে গোবিন্দ রাম সাহা বালিয়াটি জমিদার পরিবারের গোড়াপত্তন করেন। মোট সাতটি স্থাপনা নিয়ে এই জমিদার বাড়িটি অবস্থিত। এই বালিয়াটি জমিদার বাড়ি বা প্রাসাদটির সবগুলো ভবন একসাথে স্থাপিত হয় নি। এই প্রাসাদের অন্তর্গত বিভিন্ন ভবন জমিদার পরিবারের বিভিন্ন উত্তরাধিকার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে স্থাপিত হয়েছিল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়টি এরাই প্রতিষ্ঠা করেছিলো।
৬। মধ্যবাড়ি ও গোলাবাড়ি : বালিয়াটি জমিদারদে কর্মচারিদের বাড়ি।
৭। ছয়আনি জমিদার বাড়ি :
বালিয়াটি জমিদারি ছয়আনি অংশের জমিদার বাড়ি।
৮। পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি :
ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে কলকাতা থেকে রামকৃষ্ণ সাহা মন্ডল নামে একজন ধনাঢ্য ব্যাক্তি টাঙ্গাইল জেলার পাকুটিয়ায় এসে ইংরেজদের কাছ থেকে ক্রয় সূত্রে মালিক হয়ে পাকুটিয়ায় জমিদারী শুরু করেন। ১৯১৫ সালের ১৫ই এপ্রিল প্রায় ১৫ একর এলাকা জুড়ে জমিদারের তিন নাতীর নামে উদ্ভোদন করা হয় প্রায় একই নকশার পর পর তিনটি অট্টালিকা। তখন জমিদার বাড়িটি তিন মহলা বা তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। জমিদার বাড়ির সামনে বিশাল মাঠ আর মাঠের মাঝখানে রয়েছে টিনের তৈরি দ্বিতল নাচঘর। আছে পূজামন্ডপ। দেশ বিভাগের পরে তৎকালীন সরকার কর্তৃক পুরো সম্পদ অধিগ্রহণের পর ১৯৬৭ সালে এই সম্পদের উপর গড়ে তোলা হয় বিসিআরজি ডিগ্রী কলেজ।
৯। ভজো বাড়ি / বজ্র গোপাল সাহা বাড়ি : বাড়িটি সম্পর্কে কিছুই জানা নাই আমার।
১০। যাদব বাবুর প্রাসাদ : বাড়িটি সম্পর্কে কিছুই জানা নাই আমার।
১১। জাদু কুটির : বাড়িটি সম্পর্কে কিছুই জানা নাই আমার।
১২। নাগরপুর জমিদার বাড়ি + ঝুলন দালান : ৫৪ একর জমিতে নাগরপুর জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন যদুনাথ চৌধুরী। ১৯৪৭ এর দেশ বিভক্তির পর সরকার জমিদার বাড়ির সকল সম্পদ অধিগ্রহণ করে। বর্তমানে বাড়ির মূল ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নাগরপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজ। জমিদার বংশের নিত্যদিনের পূজা অনুষ্ঠান হত ঝুলন দালানে। শ্রাবনের জ্যোৎস্না তিথিতে সেখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের নাটক, যাত্রা মঞ্চায়িত হত।
১৩। ঘোড়ার দালান : জমিদারী পরিচালনা এবং বাবসায়িক প্রয়োজনে প্রচুর ঘোড়া পুষতো জমিদার। ঘোড়া এবং তার তদারকীতে নিয়োজিতদের থাকার জন্য নির্মাণ করা হয় ঘোড়ার দালান।
১৪। পুণ্ডরী কাখসো দাতব্য হাসপাতাল : এটি সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য আমার জানা নেই।
১৫। উপেন্দ্র সরবর দিঘি : জমিদার রায় বাহাদুর মোট ১১ একর জমিতে এই দিঘিটি খনন করেন। দিঘির চারদিকে সুপ্রসস্ত ১২টি ঘাটলা আছে। তাই স্থানীয়ভাবে ১২ ঘাটলা দিঘি নামে পরিচিত। স্বচ্ছ পানির জন্যে দিঘিতে ৬টি সুগভীর কুয়া খনন করা হয়েছিল।
১৬। শিব মন্দির : দিঘির পাশেই একটি শিব মন্দির রয়েছে।
১৭। তেওতা জমিদার বাড়ি :
পঞ্চানন সেন সতেরশ শতকে এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেন। তিনি এক সময় খুবই দরিদ্র ছিলেন। দিনাজপুর অঞ্চলে তিনি তামাক উৎপাদন করে প্রচুর ধনসম্পত্তির মালিক হওয়ার পর এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। তেওতা জমিদার বাড়িটি মোট ৭.৩৮ একর জমি নিয়ে স্থাপিত। প্রাসাদের মূল ভবনটি লালদিঘী ভবন নামে পরিচিত। সবগুলো ভবন মিলিয়ে এখানে মোট কক্ষ রয়েছে ৫৫টি। এখানে একটি নটমন্দির ও একটি নবরত্ন মঠ রয়েছে।
পঞ্চানন সেন বাড়িটি নির্মাণ করলেও পরবর্তীতে এখানে জমিদারি প্রতিষ্ঠিত করে জয়শংকর ও হেমশংকর নামের দুজন ব্যক্তি। ভারত বিভক্তির পর তারা দুজনেই ভারত চলে গেলে বাড়িটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়।
এখানে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাথে প্রমীলা দেবীর দেখা ও পরিচয় হয়। নজরুল প্রমীলা দেবীর প্রেমে পরে লিখেছিলেন- তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়, সেকি মোর অপরাধ!
আশাকরি বিকালের মধ্যে এগুলির বেশিরভাগই দেখা শেষ করে সন্ধ্যেটা যুমার পাড়ে কাটিয়ে রাত ১১টার আগেই বাড়িতে ফিরে আসতে পারবো।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০২৩ রাত ১০:৩৯