somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি এখন ধর্ষিতা.... প্রারম্ভিকা

২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১০-০৪-১১
সুধার ডায়রি থেকে,
হ্যা, জানি ওকে। কিন্তু তুই ওর সম্পর্কে জানতে চাস কেন? সামিয়া কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে উত্তর দিল ফোনের ওপ্রান্ত থেকে।
খুব অবাক হয়েছিলাম আমিইও আজকে। আমি এ বিষয়টাতে একদম মানসিকভাবে প্রস্তুত নই; কিন্তু বাবার জন্য চিন্তা হয়রে খুব। আর যন্ত্রনা দিতে পারছি না মানুষটাকে। বোঝা মনে হয় নিজেকে খুব! আমি বলতে লাগলাম। মাথাটা খুব যন্ত্রনা দিচ্ছে, একটু চোখ বন্ধ করে শুতে হবে কথা শেষ হবার পর সামিয়ার সাথে।

সামিয়ার সাথে একজনকে নিয়ে কথা বলছি। সে হত পারে আমার ভবিষ্যত সঙ্গী! আজকে আমার জন্য একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। ছেলেটা কেমন সামিয়াই বলতে পারে, চিনে ও ছেলেটাকেকে। আমার বয়স ও তেমন হয়নি, বিয়ে করারও কোন ইচ্ছা নেই। কিন্তু বাবা মায়ের চাপে পড়ে বিয়ে করতে হচ্ছে। আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। এখন মেয়েদেরকে বড় হলেই বিয়ে করিয়ে দিয়ে তাড়িয়ে দেবার প্রচেষ্টা থাকে এখানে। মেয়ে বড় হয়ে গেলে বাপের ঘাড়ে বসে পরিবারে অন্য সকল সদস্যের তাচ্ছিল্য সহ্য করার চেয়ে তাই নাকি বেশ ভালো। কিন্তু এ হতে পারে যারা উপার্জন করতে পারে না, তাদের জন্য! আমি করতে পারি, তাহলে আমি কেন এক কাতাড়ে দাড়াব? কে জানে এত প্রশ্নের উত্তর? আমি এত জানি না, আজকাল জানতেও চাই না। কখনই বাবা-মায়ের আদেশ-অনুরোধ উপেক্ষা করিনাই। আজকেও করলাম না। আমি বিয়ে করে চলে গেলে এরা যদি শান্তি পায় তাহলে আমি আজি বিয়ে করে চলে যেতে রাজি আছি। সেই সুত্রেই আজকে একটা ছেলের সাথে পরিচিত হলাম। ছেলে খুব আহামরি মরি কেউ নয়, কিন্তু সচ্ছল ও ভদ্র!

বিয়ে খুব বড় কিছু নয় আমার কাছে, জীবনে চার-পাঁচবার করার ইচ্ছাও নেই; কিন্তু এমন কারো সাথে হোক আশা করি যে আমাকে আর যাই হোক, শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করবেনা। কেননা আমাদের দেশে নারী-নির্যাতনের মামলা ঠুকলেই সবাই উঠে পড়ে মেয়েটার কোন পরকিয়া ছিল নাকি দেখতে, সে চরিত্রহীনা ছিল কিনা দেখেতে। আমি এত ঝামেলায় পড়তে চাই না, আমি সুখী ও হতে চাই না। আমার শুধু দ্বায়িত্ববান কাউকে চাই, যে স্ত্রী শব্দটার অর্থ জানবে! এমন কাউকে চাই আমার যে আমার নিজের উপার্জন থেকে বাবা-মাকে কিছু দিতে গেলে হস্তক্ষেপ করবেনা। বাবা মায়ের আমি ছাড়া কেই বা আছে তাদের দেখবে?

মাঝে মাঝে মনে পড়ে, ছোটবেলায় বাবা অনেক মন খারাপ করেছিল যখন আমার ছোট বোনের জন্ম হয়। সেদিন বুঝিনি কেন। প্রশ্ন করেছিলাম ছোট ফুফুকে, ফুফু প্রশ্ন শুনে আমাকে জড়িয়ে কেদেছিল, কিন্তু উত্তর দেয়নি। এর পরে ফুফুর বিয়ে হয়ে যায়, ফুফু বিদেশে চলে যায়, আমার উত্তর পাওয়া হয় নি। অন্য কাউকেও জিজ্ঞেস করতে সাহস পাইনি, তাই প্রশ্ন করিনি। আমার কোন ভাই(আপন) নেই। বাবা এ নিয়ে খুব মনকষ্টে থাকতেন, জানতাম, জানি; এ জন্যই বারবার বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছি নিজের, যাতে নিজে পড়ালেখা করে সাবলম্বী হয়ে এ মানুষগুলোকে দেখিয়ে দিতে পারি আমার ভাই থাকলে সে আমার চেয়ে বেশি কিছু করতে পারত না। এমন কত দিন ছিল যখন আমার চাচাত ভাইদেরকে বাবার স্নেহ পেতে দেখে মনক্ষুন্ন হয়েছে আমার! ঈদে বাবা )ওদের জন্য আগে জামা কিনতেন, আমি আর আমার বড় বোন আর ছোট বোন সবার শেষে পেতাম। একবার ঈদের আগের রাতে আমরা তিনবোন কেদেছিলাম খুব, বাবা সবার জামা কিনে এনেছিলেন, শুধু আমাদেরটাই ভুলে গেলেন! এখন সে ঘটনা মনে করলে হাসি পায়, খুব হাসি পায়! কত বোকা আর সেন্টিমেন্টালই না ছিলাম! যে বাবা নিজের সন্তানদের সাথে জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশন করতে পারে, সে কিভাবে মনে রাখবে আমাদের? আমরা তো মেয়ে! হুমায়ুন আহমেদই হয়ত বলেছিলেন, এ পৃথিবীতে একটাও খারাপ বাবা নেই, আমি এ জীবনে তাকে জবাব দিয়েছি বারবার, আছে হুমায়ুন আহমেদ, খারাপ বাবা আছে পৃথিবীতে!

আমার কথা শুনে হয়ত আমাকে স্বার্থপর মনে হচ্ছে, আমার কথা শুনুন, আমি স্বার্থপরই! আমার দুই বোন সেদিক থেকে বেশ ভালো, ওরা বাবাকে নিয়ে এমন কথা বলতে পারবে না। আপুটা বিয়ের পরও আর কারো সাথে না হলেই বাবার সাথে প্রতি সপ্তাহে কথা বলে। ওরা বাবাকে বেশ ভালোবাসে, আমি নিজেও প্রায়ই অনুভব করি বাবা ওদের আমার চেয়ে বেশি ভালোবাসে। বাসবেনাই কেন? আমি বাবাকে তেমন ভালবাসি না তো, তাই বাবাও আমার পরোয়া করে না। একটা গল্প আছে না, এক ছেলে খুব ঘৃনা করত মাকে। একদিন সে মায়ের উপর রাগ করে চলে গেল পাহাড়ের কাছে। সেখানে গিয়ে সে চিৎকার করে বলেছিল, আমি তোমাকে ঘৃনা করি! এবং পাহাড়ের কারনে প্রতিধ্বনি আসতে লাগল, আমি তোমাকে ঘৃনা করি। পরে ছেলেটি মায়ের কাছে গিয়ে এসব খুলে বলে, তখন ছেলেটির মা তাকে বুঝিয়ে বলে, সে যেন পাহাড়ের কাছে গিয়ে বলে আমি তোমাকে ভালবাসি, তাহলেই ভালো উত্তর আসবে। ছেলেটি তা করল; পাহাড় থেকে প্রতিধ্বনি আসলো, আমি তোমাকে ভালবাসি। এবং সে থেকে সে কাউকে ঘৃনা করত না। আমার ক্ষেত্রে আফসোস হচ্ছে, কেননা আমার বাবা কখনই আমাকে এভাবে শিখিয়ে দেয় নি, একটা দুরত্ব রয়ে গেছে বাবার সাথে, ছোটবেলা থেকেই। এই দুরত্ব হয়ত কোনদিনই আর মিটবে না!

দেখো আমার কান্ড, কোথা থেকে কোথা চলে গিয়েছি কথার ছলে! কিন্তু এসব এত সহজে বের হয়ে আসেনা অন্য কারো সামনে। হয়ত অচেনাদের কাছে মনের কিছু দুঃখ বিলিয়ে দেয়া সহজ হয়। যাইহোক, এবার আসি আমার হলেও হতে পারে আমার হবু বর এর কথা নিয়ে। দেখতে সুদর্শন, কিন্তু বেশ লম্বা নয় উচ্চতায়। পাঁচ ফুট পাঁচ, তবে সেটা বড় কথা নয়, তারচেয়ে বড় কথা হল, আমি আজকে হিল পড়ে গিয়েছিলাম, ঘটক বলেছিলেন অনেক লম্বা ছেলে। সে শুনে আমি হিল পড়েছি, যাতে কাছাকাছি থাকতে পারি উচ্চতায়। হাহাহা, কথা হল আমি নিজেও পাঁচ ফুট চার, পড়েছি তিন ইঞ্চি হিল। হয়ে গেছি পাঁচ ফুট সাত!!! বেচারা আমি উঠে দাড়াতেই হয়ত লজ্জা পেয়েছে, কনে বরের চেয়ে লম্বা, বড্ড বেমানান তো। গালটা মৃদু লাল হয়েছিল তার, লক্ষ্য করেছিলাম। হাসি চেপেছিলাম অনেক কষ্টে তখন। এরপর কথা হল, ও হ্যা, তার নাম বলা হয়নি। তার নাম বিভোর। সাচ এ জেন্টলম্যান। শুধু কথা কম বলে, বেশ গম্ভির মনে হয়নি যদিও। হয়ত আসলে বেশি কথা বলে, তাই চুপ থাকতে চেয়েছিল। নাহলে আমাকে পরিক্ষা করতে ব্যস্ত ছিল, যা হোক। আমি এত ভাবছি কেন? তার পরিবার বেশ ভালো, বাবার পছন্দ, মা তো চিরকাল নীরব থাকেন, এখনও চুপ ছিলেন। বাবার পরিচিত কারো আত্বীয় সে। আমি আজকে কিছু বলিনি তাকে, সাধারন কিসে পড়ি কি করি এসব বলেছি। তবে ঠিক করে ফেলেছি যেহেতু এর সাথে আমার বিয়ে হতে পারে, তাই একে আগে আগে আমার শর্ত জানিয়ে দেব। পরে যাতে ঝামেলা না বাধাতে পারে, তাছাড়া ছেলেদের ঠিক নেই, আজ একথা বলে কাল ভুলে বসবে। সুতরাং, আমাকে সাবধান থাকতে হবে, কোন ভুল করা যাবেনা। বাবা-মা আর ছোট বোনের ভবিষ্যত আমার সাথে জড়িত!

ডায়রিতে এ পর্যন্ত লেখার পর ফোন আসলো সুধার ফোনে, কড়কড়ে আওয়াজ দিলো মোবাইলটা। সে কল ধরতে ব্যস্ত হয়ে গেল। আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। কম্পিত গলায় উত্তর দিল সে, ওপাশ থেকে একটা পুরুষকন্ঠে উত্তর আসলো, মৃদু হাসির সাথে!
____________________________________(চলবে)

ছবি: আমার নিজের আঁকা ও তোলা!
ভালো থাকুন!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৬
২০টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×