বিগত ৭২ ঘন্টায় দেশে ৩টি নৃশংস হত্যাকান্ড সংঘঠিত হয়েছে - চট্টগ্রামে মুসলিম পুলিশ কর্মকর্তা'র স্ত্রী, নাটোরে খ্রিস্টান ব্যবসায়ী এবং ঝিনাইদহে এক হিন্দু পুরোহিত।
এর মাঝে দুটি একান্তই নিয়মতান্ত্রিক ভাবে ট্রিটেড হচ্ছে - কিছু অজ্ঞাতপরিচয় অাততায়ীর হাতে একটা মানুষ খুন হলে যেভাবে যা হয় আর কি। তৃতীয়টি মিডিয়া কভারেজ পাচ্ছে প্রচুর। কারন ভিকটিম একজন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী। বাবুল আক্তার আমার নিজের কাছেও "হিরো কপ"। আর আমার পরিবারও এরকমই দুটি হত্যাকান্ডের শিকার।
আজ সোশ্যাল মিডিয়াতে একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার Muhammad Sanwar Hossain তার স্ট্যাটাসে যুদ্ধ ঘোষনা করেছেন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে। তাঁর স্ট্যাটাসটি নিম্নরূপঃ
#জঙ্গি_নিয়ে_আমি_আর_কাজ_করবো_না
হ্যা, আমি আর জঙ্গি-ফঙ্গিতে নাই। অনেকেই তো পুলিশের চাকুরী করে, কিন্তু সবাই কি জঙ্গি নিয়ে কাজ করে? করে না। তাহলে এত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ আমি কেন করবো? আমিও অন্য কোন বিভাগে চলে যাচ্ছি। কে চায় পেশাগত দায়ীত্ব পালনের দায়ে পরিবারের সদস্যদের হারাতে? কেউ না, তাই আমিও না।
ঠিক এই রকম একটি সিদ্ধান্তই দেখতে চেয়েছিল জঙ্গিরা। তাই শুনিয়ে দিলাম। তবে শুধু শুনানোর জন্য নয়, আমি আসলেই জঙ্গি নিয়ে আর কাজ করবো না। যেটা করবো সেটা হচ্ছে যুদ্ধ, যুদ্ধ করবো। আগে করতাম কাজ, এখন করবো যুদ্ধ।... কাজের পরিবেশ তো আর নেই, যুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে গেছে। পরিবারের নিষ্পাপ সদস্যের উপর আঘাত, যুদ্ধ না তো কি? তাই এখন জঙ্গি নিয়ে কাজ মানেই যুদ্ধ।
#একটু_বিশ্লেষণে_যাচ্ছি:
পুলিশ আর অপরাধীর মধ্যে সাপে-নেওলে সম্পর্ক সব দেশেই আছে। দেশে দেশে কুখ্যাত মাফিয়াচক্রের সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বৈরিতা সবথেকে চরম। এই মাফিয়ারাও একে অপরকে বলে থাকে:
#Never_Ever_Touch_A_Cop
(কখনও পুলিশের গায়ে হাত দিও না)
পুলিশের গায়ে হাত দিলে কি বিপর্যয় হয়, আর পুলিশের আইনগত দায়ীত্ব মেনে নিলে কি ক্ষতি হয়, তার তুলনামূলক হিসাব তাদের আছে। তাই সচরাচর কোন দেশেই পুলিশের সাথে ব্যক্তিগতভাবে কেউ জড়ায় না। তারপরও কখনও কখনও তারা পুলিশের উপর হামালা চালায়। কিন্তু পরিবারের কোন ক্ষতি করে না। এটা তাদের #থাম্ভ_রোল।
এদেশের জঙ্গিরা এখন সেই 'থাম্ভ রোল'-এর অনেক নীচে নেমে গেছে। পুলিশসহ অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনীর উপর হামলা তো করছেই, বরং তাদের পরিবারের সদস্যদের উপরও হামলা শুরু করে দিয়েছে। তা না হলে আর জঙ্গি/জংলি বলা হয় কেন।
অথচ, বিভিন্ন সময় জঙ্গি পরিবারের অন্যান্য নিষ্ক্রিয় সদস্যরা সনাক্ত হলেও তাদের ইজ্জত করা হয়। তাদের পরিবারের পর্দানশীল নারী, ছোট ছোট বাচ্চা এবং বয়োবৃদ্ধদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হয়।.... তাহলে ওরা কেন এমন করছে?
তাহলে ওরাই বা কারা?
প্রশ্নের জবাব খুব তাড়াতাড়ি আসছে.... ইনশাল্লাহ। দাত ভাঙ্গা জবাব দেওয়া হবে সে যে-ই হোক। শুধু সময়ের অপেক্ষা। সেই '৭১ থেকে আজ পর্যন্ত মানুষের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে পুলিশের যতটুকু গেছে তা আর অন্য কোন পেশায় যায়নি। এই ত্যাগটুকুই পুলিশের অনেক সীমাবদ্ধতা আর ভুল-ত্রুটিগুলোকে লেভেল করে দিচ্ছে। সামনে উদ্বৃত্ত কিছু রাখার জন্য কাজ হচ্ছে।
আশা করি জঙ্গিবাদ (আমি বলি উগ্রবাদ) সমূলে উৎপাটনে আমাদের নিষ্পাপ 'ভাবী'র এই মূল্যবান রক্ত আমাদের কাজের গতি, ক্ষিপ্রতা এবং অনুপ্রেরণা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। দেশের নিরাপত্তামূলক কাজের জন্য ভাবীকে হারালাম, ভাবী #শহিদের_মর্যাদা পাবেন।
তাই প্রতিশোধ নয়, উৎপাটন হোক আমাদের অঙ্গীকার। ঠান্ডা মাথায় কিভাবে যুদ্ধ করতে হয় তা শুধু পুলিশই জানে, তাই এখনই শুরু করার পালা।
আমার কষ্ট এখানে, সহকর্মীর স্ত্রী নৃশংস ভাবে খুন হবার পরেই পুলিশ নড়ে চড়ে বসেছে, অথচ ২০১৩ থেকে বাংলাদেশের ওপর ইসলামিস্ট জংগীদের যে খুনের মহোৎসব চলছে সে বিষয়ে এর আগে পর্যন্ত পুলিশের কেউ এভাবে ভাবেননি। সেই সময়, শুরুর দিকে শক্তভাবে ব্যাবস্থা নিলে আজ অনেকেই এভাবে অকালে এই নৃশংস হত্যার শিকার হতেন না।
বিগত ৭২ ঘন্টায় ৩টি নৃশংস হত্যা এবং পুলিশের যুদ্ধ ঘোষনা বিষয়ক
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৬ রাত ২:২২