ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের নির্দেশনা অনুযায়ী ছাত্রশিবির কর্মীরা সারা দেশে একের পর এক টার্গেট কিলিং ঘটাচ্ছে বলে দাবি করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটি)। বুধবার মাদারীপুরে সরকারি নাজিমউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক ও পুরোহিত রিপন চক্রবর্তীর ওপর হামলা করে জঙ্গিরা। ওই সময় হাতেনাতে আটক হওয়া গোলাম ফায়জুল্লাহ ফাহিম ওরফে ফায়জুল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে দাবি সিটির সংশ্লিষ্টদের। এর আগে গ্রেফতার হওয়া কয়েকজন জঙ্গিও জিজ্ঞাসাবাদে একই ধরনের তথ্য দিয়েছিল। খবর যুগান্তর'র।
বুধবার রাতেই ফায়জুল্লাহকে নিয়ে মাদারীপুর থেকে ঢাকায় আসে পুলিশ। সিটি ইউনিট তাকে নিয়ে দিনভর রাজধানীর দক্ষিণখান ও ফার্মগেট এলাকায় অভিযান চালায়। দক্ষিণখানে ফায়জুল্লার বাসা, ছাত্রশিবিরের দুটি মেস ও ফার্মগেটে রেটিনা কোচিং সেন্টারে অভিযানের পর তাকে আবার মাদারীপুর পাঠানো হয়েছে। আজ তাকে মাদারীপুরের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাইবে পুলিশ। এরপর পুনরায় তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিটির প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সারা দেশে একের পর এক টার্গেট কিলিং হচ্ছে। তারা প্রাথমিকভাবে পুরোহিত, ধর্মগুরু, যাজক, ভান্তেসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শতাধিক ব্যক্তিকে টার্গেট করেছে। এছাড়া বিদেশী নাগরিক ও প্রগতিশীল লেখক বুদ্ধিজীবীও তাদের টার্গেটে রয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর মোসাদ সারা বিশ্বে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করছে। এসব হত্যাকাণ্ডের অর্থদাতা হিসেবে কাজ করছে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর পরিবার ও জামায়াত-বিএনপিপন্থী অর্ধশত ব্যবসায়ী।’
সিটি ইউনিটের আরেকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য স্লিপার সেলের সদস্যরা তিন লাখ টাকা করে পাচ্ছে। যার মধ্যে দেড় লাখ টাকা অগ্রিম এবং বাকি দেড় লাখ টাকা কিলিং মিশন বাস্তবায়নের পর দেয়া হচ্ছে। কেউ হত্যাকাণ্ড ঘটানোর সময় ধরা পড়লে কিংবা মারা গেলে তাদের পরিবারকে মোটা অংকের অর্থ দেয়া, পরিবারের ভরণপোষণের প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে। আর কেউ ধরা পড়লে সংশ্লিষ্টদের দেয়া হচ্ছে জামিন করানোর প্রতিশ্রুতিও।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানায়, ‘সারা দেশে জঙ্গিদের ৩০ থেকে ৪০টি স্লিপার সেল রয়েছে। প্রতিটি সেলে ৪ থেকে ৬ জন করে সদস্য রয়েছে। তবে তাদের ওপরে কারা আছে- সে ব্যাপারে তেমন কিছু জানে না স্লিপার সেলের সদস্যরা। শুধু এক থেকে দু’জনের নাম জানাতে পারে তারা। স্লিপার সেলের সদস্যরা সাধারণত প্রত্যন্ত অঞ্চলে কম নিরাপত্তা বেষ্টিত এলাকার ব্যক্তিদের টার্গেট করছে। যেখান থেকে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে দ্রুত পার পাওয়া সম্ভব। হত্যার আগে রেকি (মহড়া) করে এলাকা পর্যবেক্ষণ করছে। স্লিপার সেলের সদস্যরা অধিকাংশই ছাত্র শিবিরের সঙ্গে যুক্ত। তারা আগে ছাত্র শিবির করত বলে ইতিমধ্যে প্রমাণ মিলেছে। হত্যাকাণ্ড ঘটানোর কৌশল হিসেবে তারা জেএমবি, এবিটিসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের নাম ব্যবহার করছে। এসব হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে নেতৃত্ব দেয়া ২০ থেকে ২২ জনের নামও জানতে পেরেছে সিটি।’
মাদারীপুরে আটক ফায়জুল্লাহ সম্পর্কে সিটি ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান, সে কয়েক বছর আগে ছাত্র শিবিরের কর্মী ছিল। এখনও তার সঙ্গে ছাত্র শিবিরের সম্পর্ক রয়েছে। পাশাপাশি ছাত্র শিবির পরিচালিত কোচিং সেন্টার- রেটিনার (ফার্মগেট) সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। বৃহস্পতিবার ফাইজুল্লাহর বাসা, উত্তরখানের দুটি মেস ও রেটিনায় অভিযান চালানো হয়েছে। রেটিনা কার্যালয় থেকে দুটি ল্যাপটপসহ বেশ কিছু নথিপত্র জব্দ করা হয়েছে। এছাড়াও শিবিরের মেস ও ফায়জুল্লার বাসা থেকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পাওয়া গেছে।
এদিকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আটক ফায়জুল্লাহ জানায়, তাদের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের দারিয়াপুর। ২২ বছর ধরে তার পরিবার ঢাকায় থাকে। সে ঢাকার উত্তরার একটি কলেজের এইচএসসিতে পড়ছে। ১২ জুন সে ঢাকা থেকে বের হয়। ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে তার বাবা গোলাম ফারুক দক্ষিণখান থানায় একটি জিডি করেছিলেন।
মাদারীপুরের সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নূরুল হক মিয়া জানান, ‘বুধবার নাজিমউদ্দিন কলেজের শিক্ষকদের উপস্থিতিতে পুলিশের সামনে আটক ফায়জুল্লাহ সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেছে ‘তাকে আটকে রাখা সম্ভব হবে না এবং কেউ তার কিছু করতে পারবে না।’ পরে জানা গেছে তার পরিবার প্রভাবশালী এবং তার মামা সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
সূত্র: thebengalitimes
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১৬ ভোর ৫:২৯