somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা কী ভুলে যাচ্ছি ন্যায়বিচার?

১৬ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ৭:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা কী ভুলে যাচ্ছি ন্যায়বিচার?

ভূমিকা
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস রক্তাক্ত, জটিল এবং বিবেকবর্জিত ভুলে যাওয়ার প্রবণতায় আক্রান্ত। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সমর্থিত রাজাকার, আল-বদর বাহিনী সরাসরি গঠিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দোসর হয়ে ৩০ লক্ষ মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে এবং আনুমানিক ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম লুণ্ঠিত হয়েছে। অথচ এই জামায়াত-শিবির চক্রেরই এখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার দাবি উঠছে, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বুলি আওড়ানো হচ্ছে।

অন্যদিকে, ২০২৪ সালে তথাকথিত ‘গণআন্দোলনের’ নামে সংঘটিত কিছু সহিংস ঘটনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ৫০০+ হত্যার অভিযোগ উঠেছে। যদিও এ বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত, বাস্তব সংখ্যা, এবং এসব মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। তথাপি আন্তর্জাতিকভাবে কিছু মহল দাবি করছে আওয়ামী লীগ এখন আর ‘গণতান্ত্রিক সরকারের’ যোগ্য নয়।

এই অসামঞ্জস্য, এই দ্বিচারিতা এবং ইতিহাসের অপমানের বিরুদ্ধে কিছু প্রশ্ন ও বিশ্লেষণ তুলে ধরতেই এই প্রবন্ধ।

১. ১৯৭১: যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা ও ধর্ষণের অপরাধে জামায়াতের ভূমিকা

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর বিরোধিতা ছিল প্রকাশ্য এবং সুসংগঠিত। তারা পাকিস্তান সরকারের পক্ষ নিয়ে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনীর মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা, সংখ্যালঘু হিন্দু, প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ জনগণকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

মানবাধিকার লঙ্ঘন: আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো জামায়াতের ভূমিকাকে গণহত্যার অংশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT-BD) জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের অনেককে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। সাঈদী, নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান প্রমুখদের ফাঁসি হয়েছে বিচারিক প্রক্রিয়ায়।

ধর্ষণকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে লজ্জাজনক ও নৃশংস অধ্যায়।

তাহলে প্রশ্ন উঠে: যুদ্ধাপরাধীদের দল হিসেবে জামায়াত এখন কীভাবে নির্বাচনের দাবি করতে পারে?

২. ২০২৪ সালের ‘গণআন্দোলন’ ও হত্যার অভিযোগ: সত্য না রাজনৈতিক ভাষ্য?

বিরোধী জোট এবং তথাকথিত নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ২০২৪ সালে সরকারের বিরুদ্ধে ‘অবৈধ নির্বাচন’, ‘গণতন্ত্রের কবর’ ইত্যাদি ইস্যুতে আন্দোলনের ডাক দেয়। এ সময় সহিংসতা, বাস-গাড়ি পোড়ানো, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে বহু লোক নিহত হন। বিরোধী পক্ষের দাবি প্রায় ৫৮০ জন নিহত। কিন্তু এসব সংখ্যা কতটা বিশ্বাসযোগ্য?

তথ্যসূত্র: অধিকাংশ তথ্য আসে একতরফাভাবে বিবৃতির মাধ্যমে; যেটির নিরপেক্ষ যাচাই হয়নি। কোনো আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ বা ফরেনসিক রিপোর্ট প্রকাশ হয়নি।

বিচার হয়নি: অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণই অস্পষ্ট। কেউ পুলিশের গুলিতে মারা গেছে, কেউ সহিংস সংঘর্ষে, কেউ আবার ভিন্নভাবে।

মুভমেন্টের প্রকৃতি: এসব আন্দোলনে জামায়াত-শিবির, নিষিদ্ধ হেফাজত, ও বিএনপির জোট সক্রিয় ছিল; যাদের অতীতে সহিংস ইতিহাস রয়েছে।

৩. বিচারহীনতার সংস্কৃতি না বিচারবহির্ভূত রাজনীতি?

বাংলাদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি রাজনৈতিকভাবে দু’দিক থেকেই ব্যবহৃত হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীরা চার দশক দায়মুক্তি ভোগ করেছে, বিএনপি-জামায়াত জোট তাদের মন্ত্রী বানিয়েছে। অন্যদিকে বর্তমান সরকার অনেক ক্ষেত্রেই মানবাধিকার ইস্যুতে যথাযথ স্বচ্ছতা দেখাতে পারেনি। কিন্তু এর মানে কি জামায়াত ও তাদের দোসররা আবার ক্ষমতার রাজনীতিতে ফিরে আসবে?

৪. ইতিহাস যদি ভুলে যাই ভবিষ্যত আমাদের ক্ষমা করবে না

যদি আজকে জামায়াত-শিবির বা তাদের ছদ্মবেশধারীরা আবার রাজনীতির বৈধতা পায়, তাহলে ১৯৭১ সালের শহীদদের আত্মা কাঁদবে। যদি ২০২৪ সালের ‘গণআন্দোলন’কে ইতিহাসের বিকল্প সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাহলে বিচারক ও গবেষক হিসেবে আমাদের দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছি।

উপসংহার: ন্যায়বিচার, তথ্য ও বাস্তবতা এই তিনের ভিত্তিতে মূল্যায়ন হোক

গণতন্ত্র মানে কেবল নির্বাচন নয়; বিচার, ন্যায় এবং ইতিহাসের প্রতি দায়বদ্ধতাও এর অংশ। আওয়ামী লীগ সরকার ভুল করলে তা সমালোচনার যোগ্য, তবে ইতিহাস বিকৃত করে জামায়াত-শিবিরের মতো মানবতাবিরোধী শক্তিকে রাজনীতির বৈধতা দেওয়ার নাম গণতন্ত্র হতে পারে না। গণতন্ত্র মানে ইতিহাস ভুলে গিয়ে ঘাতককে সাধু বানানো নয়।

সুপরিশেষে প্রশ্ন রইলো:
যে দল ১৯৭১ সালে গণহত্যা করেছে, তাদের আজ নির্বাচনের অধিকার থাকে কিভাবে?
আর যে দল মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে, তারা কী কেবল আন্তর্জাতিক চাপে আজ গণতন্ত্রের অযোগ্য হয়ে গেল?

-- সালাউদ্দিন রাব্বী

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ৭:২১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×