somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মের মুখোশে রাজনীতি: ইসলামী দলগুলোর স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থান প্রকাশ্যে

২০ শে জুলাই, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধর্মের মুখোশে রাজনীতি: ইসলামী দলগুলোর স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থান প্রকাশ্যে

বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল এক রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে, যেখানে ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, ২ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন, লক্ষ কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছেন। এই সংগ্রাম ছিল একটি ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য। অথচ সেই স্বাধীন বাংলাদেশের ভেতরেই বহু ইসলামী দল এখনো সরাসরি কিংবা আড়ালে এই দেশের জন্মকেই অস্বীকার করে চলছে।

সাম্প্রতিক সময়ে এক জামায়াত-ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক মঞ্চে জামায়াতে ইসলামির সঙ্গে একত্রিত হয়ে যারা অংশ নিয়েছে, তারা একবারেই নিজেদের আসল চেহারা জনসম্মুখে তুলে ধরেছে। এদের মধ্যে রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ফ্রন্ট, আহলে সুন্নাত জামাত, ইসলামী ঐক্যজোট ইত্যাদি নামধারী দলসমূহ, যারা মুখে ইসলাম, কিন্তু ভেতরে স্বাধীনতাবিরোধী আদর্শের ধারক ও বাহক।

ইতিহাসের দায়: জামায়াত এবং তাদের অনুসারীরা
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি ছিল অগ্রগণ্য। তারা রাজাকার, আলবদর, আলশামস গঠন করে পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর হয়েছিল। যুদ্ধাপরাধের দায়ে এই দলের বহু নেতার ফাঁসি হয়েছে—গোলাম আযম, আলী আহসান মুজাহিদ, কাদের মোল্লা, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মোঃ কামারুজ্জামান, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সহ অনেকে।

এই দল আজও “শহীদ” শব্দ ব্যবহার করে তাদের বিচারপ্রাপ্ত নেতাদের স্মরণ করে। এবং সম্প্রতি তারা আবারও প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছে, যেখানে বিভিন্ন তথাকথিত ইসলামী দল তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে।

ধর্মের অপব্যবহার ও মোল্লাতন্ত্রের তাণ্ডব
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, যারা মুখে রাজনীতি করে না বললেও, ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে তাণ্ডব চালিয়ে সরকার পতনের চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছিল। তাদের ১৩ দফা দাবির মধ্যে ছিল

১, নারীদের শিক্ষা ও কর্মজীবন নিষিদ্ধ করার আহ্বান,
২,ব্লগার হত্যাকে জায়েজ করার মনোভাব,
৩,ধর্মনিরপেক্ষতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা।
তাদের দাবির মূল লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রকে তালেবান কায়দায় পরিচালনা করা।

আজকের চক্রান্ত: একাত্তরের শত্রুরা আবারও একজোট
যেসব দল আজ জামায়াতের সাথে এক মঞ্চে দাঁড়িয়েছে, তারা সকলেই একাত্তরে জামায়াতের ভূমিকার নিন্দা তো করেনই না, বরং নানাভাবে সেই ইতিহাস ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতা চরমোনাই পীর রেজাউল করীম বারবার মুক্তিযুদ্ধকে 'ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ' বলে অপমান করেছেন।

রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য ও তৎপরতা
নানা ইসলামী দলের বক্তা ও নেতা-উপনেতারা ওয়াজ মাহফিলে প্রকাশ্যে:

বঙ্গবন্ধুকে 'কাফের' বলেছে,
জাতীয় সংগীত ও পতাকার বিরুদ্ধে কথা বলেছে,
কওমি শিক্ষাকে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বাইরে রাখতে চায়,
হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্য ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়েছে।

রাষ্ট্রের জন্য হুমকি
এই দলগুলো আসলে এক নতুন পাকিস্তান কায়েমের স্বপ্নে বিভোর। তারা ১৯৭১-এ হেরেছে, কিন্তু মনে-প্রাণে এখনও পাকিস্তানের আদর্শেই বিশ্বাসী। তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো:
গণতন্ত্র ধ্বংস করে ইসলামি শাসনতন্ত্র চাপিয়ে দেওয়া,
ধর্মীয় বিভেদ বাড়িয়ে জাতিকে খণ্ডিত করা,
এবং বাংলাদেশের মূল চেতনা গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, মানবাধিকার এসবকে মুছে ফেলা।

উপসংহার: তাদের প্রতিরোধে গণচেতনার জাগরণ জরুরি
ধর্মীয় অনুভূতিকে হাতিয়ার করে যারা রাজনীতি করছে, তারা শুধু ধর্মের অবমাননাই করছে না, রাষ্ট্র ও জাতিকেও বিভ্রান্ত করছে। তাদের বিরুদ্ধে এখনই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
স্বাধীনতাবিরোধীদের নতুন রূপে প্রকাশ জামায়াতের ছায়াতলে সংগঠিত হওয়া ইসলামি দলগুলো আসলে বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য এক ভয়ঙ্কর হুমকি।
আমরা ভুলে যাইনি একাত্তরকে, ভুলে যাইনি রাজাকারদের। আমরা ভুলব না এই নতুন মুখোশধারীদেরও।

সালাউদ্দিন রাব্বী


সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ১১:২২
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×