বঙ্গবন্ধু: স্বপ্ন ও রক্তের গল্প
বাংলার আকাশে যখন মেঘ জমে অন্ধকার নেমে আসে, তখনই দূর দিগন্তে একটি আলোর শিখা জ্বলে ওঠে। সেই আলোর নাম শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু, যিনি ছিলেন বাঙালির স্বপ্ন, সাহস আর ভালোবাসার আরেক নাম।
জন্ম ও শৈশব
১৯২০ সালের ১৭ মার্চ, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার ছোট্ট গ্রামে জন্ম নেন তিনি। মা সায়েরা খাতুনের কোলে, পিতা শেখ লুৎফর রহমানের স্নেহে বেড়ে ওঠা এই শিশু খুব ছোট থেকেই ছিলেন আলাদা। গ্রামের কারও চোখে জল দেখলে তিনি কেঁদে ফেলতেন, কারও অভাব দেখলে নিজেরটুকু দিয়ে দিতেন। কে জানত, এই স্নেহময় শিশুই একদিন বাঙালির পিতা হবেন!
কৈশোরের সাহস
কৈশোরে শেখ মুজিব ছিলেন সত্যবাদী, নির্ভীক। অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করতেন, অন্যের দুঃখ নিজের মনে নিতেন। স্কুলে পড়তে পড়তেই রাজনীতির পথে পা বাড়ান। পাকিস্তানি শাসকদের অন্যায় আর বৈষম্য তাঁর মনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই আগুনই তাঁকে বানায় এক অদম্য সংগ্রামী।
রাজনৈতিক জীবন ও স্বাধীনতার পথচলা
শেখ মুজিব ছিলেন সাধারণ মানুষের নেতা। তিনি বাংলার মাটি, বাংলার মানুষ, বাংলার ভাষাকে হৃদয়ে লালন করতেন। ৭ মার্চ ১৯৭১, রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে তাঁর বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত সেই অমর আহ্বান--
"এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম"
মুহূর্তেই জাগিয়ে তোলে পুরো জাতিকে। তাঁর নেতৃত্বেই ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর লাল-সবুজের পতাকা উড়ে যায় স্বাধীন বাংলার আকাশে।
১৫ আগস্টের কালরাত:
-------------------------
কিন্তু বিধাতা যেন এত সুখ সহ্য করতে পারলেন না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ভোরে, ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের প্রিয় বাড়িতে ঘটে যায় ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর হত্যাকাণ্ড। কয়েকজন বিপথগামী সেনা সদস্য গুলি চালিয়ে থামিয়ে দেয় এক মহান জীবনের পথচলা। সেদিন শহীদ হন বঙ্গবন্ধু, তাঁর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলসহ প্রায় সমগ্র পরিবার। শুধু একটি পরিবার নয়সে দিন পুরো বাংলাদেশ কেঁদেছিল, আকাশ-বাতাস শোকে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।
উপসংহার
বঙ্গবন্ধু নেই, কিন্তু তাঁর স্বপ্ন আছে, তাঁর ভালোবাসা আছে, তাঁর আদর্শ আছে। তিনি শিখিয়েছেন স্বাধীনতা মানে কেবল পতাকা নয়, স্বাধীনতা মানে ন্যায়, সমতা ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা।
আজও যখন আমরা ১৫ আগস্টের সেই ভোরের কথা ভাবি, বুকের ভেতর হাহাকার জেগে ওঠে, চোখ ভিজে যায়। তবুও আমরা জানি,
যতদিন বাংলার আকাশে সূর্য উদিত হবে, ততদিন বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকবেন আমাদের হৃদয়ে।


অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



