somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষের জন্য তিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক প্রশ্ন.

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রত্যেক মানুষের জন্য এ তিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক প্রশ্ন...
আমি জন্মের আগে কোথায় ছিলাম?
এখানে কেন এলাম?
আমার গন্তব্য কোথায় কিংবা আমি এখান থেকে কোথায় যাব?
অতীতে আমরা এখানে ছিলাম না বর্তমানে আমরা এখানে আছি এবং শীঘ্রই আমাদের এ জীবনের অবসান হবে। আমরা প্রত্যেকই একটি নির্দিষ্ট দিনে জন্মগ্রহণ করেছি এবং একটি নির্দিষ্ট দিনে মৃত্যু বরণ করবো। জন্ম যে জীবনের শুরু, মৃত্যুতে তার পরিসমাপ্তি। আমরা প্রত্যেকই জীবনের এই মুল সত্যটা সম্পর্কে জ্ঞাত অথচ আমাদের মাঝে খুব কম সংখ্যকই এ ব্যাপারে চিন্তা করে। এমন একটি সমাজে আমাদের বসবাস যেখানে এ প্রশ্ন গুলোকে বোকামিসুলভ চিন্তা ধারার ফলশ্রুতি মনে করা হয় এবং ঠিক সমভাবেই এগুলোকে ‘ফ্যাশনবল’ বা ‘স্মার্ট’ বিবেচনা করা হয় না। এ সমাজে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত সম্পুর্ণরুপে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পেছনে অর্থাৎ কিভাবে প্রচুর ধন সম্পদের আধিকারী হওয়া যায় সে চিন্তায় ব্যস্ত রাখে। ‘কমপক্ষে ৫০-৬০ বছর বাঁচবো’-এই দৃষ্টিতে সমাজের প্রত্যেকই নিজেদের জীবন সাজানোয় বিভোর। ফলস্বরুপ আমরা প্রত্যেকই জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি, পরিকল্পনা এবং সমন্বয় সাধনের কাজে নিজেদেরকে পুরোপুরি ব্যস্ত রেখেছি। বর্তমানে আমাদের সমাজে সুবিধা অর্জনকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। প্রত্যেকের জীবনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে অধিক সম্পদ অর্জন ও আনন্দ উপভোগ করা। এটাই সবার জীবনের মূল উদ্দেশ্য।
সদ্য শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করা তরুণদের প্রধান ধান্ধা ক্যারিয়ারের সিঁড়ীতে আরোহণ করা। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য কাকে ধরতে হবে, সন্থুষ্ঠ করতে হবে এবং কাকে ঘুষ দিতে হবে এগুলই তাদের সামগ্রিক চিন্তা ভাবনা। চাকরি পাওয়ার পর রাতদিন BOSS কে সন্তুষ্ট করার জন্য কাজ করতে হয়। আর বসকে সন্তুষ্ট করার মানেই সকাল নয়টা থাকে রাত নয়টা পর্যন্ত কর্মব্যস্ততা এবং তার ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করা।
অন্যদিকে কারো কারো একমাত্র ধান্ধা হচ্ছে ইংল্যান্ড, অষ্টেলিয়া, আমেরিকার ভিসা সংগ্রহ করা। এজন্য বিভিন্ন ইংরেজি শিক্ষা কোর্সে-এ অংশ গ্রহণ করে তার ইংরেজি দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে TOFEL, IELTS, SAT, GMAT, GRE-তে ভাল স্কোর করে বহির্বিশ্বের বিভিন্ন University তে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে। দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য হাজার হাজার টাকা খরচ করে। পরিশেষে নিরাশ হয়ে জাল পার্সপোর্ট এবং Illegal উপায়ে দেশ ত্যাগের চেষ্টা করে।
যে কোন উপায়ে ধন সম্পদ বৃদ্ধি করাই ত্রিশোর্ধ্বদের মূল ধান্ধা। জমি ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে অধিক জমির মালিক হওয়া। বড় ধরনের শিল্পপতি হওয়া। এরই জন্য সে ব্যাংকে যায় এবং উচ্চ সুদে ডিপোজিট একাউন্টে টাকা রাখে এবং বাড়ি তৈরী করার জন্য, বিলাশবহুল এপার্টমেন্ট কেনার জন্য লোন সংগ্রহ করে। টাকাই তার জীবনের চুড়ান্ত ধান্ধায় পরিণত হয়। তার প্রাত্যহিক জীবনের কর্মকান্ড একমাত্র অর্থনৈতিক লাভ ক্ষতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অর্থনৈতিক লাভ ক্ষতিই কোন কাজে তার সংযুক্তি অসংযুক্তিই নির্ধারণ করে দেয়। প্রচুর ধন সম্পদ মানেই হচ্ছে সম্মান, অধিক সুখ্যাতি, অধিক স্থিতিশীলতা এবং অধিক নিরাপত্তা।
এ ধরণের ব্যক্তিকেন্দ্রিক এবং বস্তুকেন্দ্রিক অন্ধ সংস্কৃতি আমাদের সমাজকে পাশবিক পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। যখন ধন-সম্পদ, আনন্দ-উপভোগই প্রত্যেকের জীবনের সাফল্যের মানদন্ড, তখন কেন আমরা সমাজের চলমান বিশৃঙ্খলা দেখে বিস্মিত হই? দুর্নীতি, চাদাবাজি, মাস্তানি, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, খুন, ছিনতাই ইত্যাদি এ সমাজ ব্যবস্থার স্বাভাবিক পরিণতি। এসব সমস্যার মূল কারণ হচ্ছে সমাজে চলমান জীবন সম্পর্কে ভুল চিন্তা ভাবনা।
ইসলাম এসেছে মানুষেকে জীবন এবং এর এই উদ্দেশ্য সম্পর্কে চিন্তা করাতে যে জীবনের একটি পরিসমাপ্তি আছে। মৃত্যু হচ্ছে বাস্তবতা। আল্লাহ মানুষকে এসব বাস্তবতা সম্পর্কে কুরআন এ বহুবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তার জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে চিন্তা করে-
সূরা আত-তাকাসুরে আল্লাহ বলেন –
“প্রাচুর্যের প্রতযোগিতা তোমাদেরকে মহাচ্ছন্ন করে রাখে, যতক্ষন না তোমরা কবরে উপনীত হও। এ ঠিক নয়, তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে।” (১০২:১-৩)
এবং সূরা আল- আনাআ’মে আল্লাহ বলেন –
“এবং পার্থিব জীবনে ক্রীড়া কৌতুক ব্যতীত কিছুই নয়। মুত্তাকিদের জন্য পরকালের আবাসই শ্রেষ্ঠতর তোমরা কি তা বোঝ না?”(৬:৩২)
বর্তমানে আমাদের জীবনের পরকালের সাথে সম্পুনরূপে সম্পর্কহীন। কিন্তু মৃত্যুপরবর্তী জীবন, জবাবদিহিতা এবং বিচার দিবস হচ্ছে চরম বাস্তবতা। এজন্য ইসলাম ধন সম্পদ এবং আনন্দ উপভোগকে জীবনের সাফল্যের মাপকাঠি হিসেবে দেখে না। বরং আল্লাহ্‌র সন্থুষ্ঠীর সন্ধানি হচ্ছে জীবনে সাফল্যের এবং আল্লাহর ইবাদতই হচ্ছে তার জীবনের লক্ষ্য – যে উদ্দেশ্যে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ মুহূর্তে আমাদের চারপাশে চলমান অন্ধ এবং চিন্তাশুন্য সংস্কৃতির পরিবর্তনের জন্য ইসলামকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে উপস্থাপন করা আমাদের উপর অবশ্য করনীয় দায়িত্ব। ইসলাম এসেছে মানুষকে এই অজ্ঞতা থেকে মুক্ত করতে। এতে মানুষকে তার জীবন সম্পর্কিত যাবতীয় জিজ্ঞাসার বুদ্ধিবৃত্তিক সমাধান দেয় এবং একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রগতিশীল শান্তিকামী সমাজের পরিপূর্ণ ব্যবস্থা প্রদান করে।
“আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরদের ভেতরে যা আছে তা পরিবর্তন করে।” (১৩:১১)...
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×