somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আল্লাহ্‌'র ভয়ে এবং স্মরণে ক্রন্দন করা

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌'র ভয়ে ক্রন্দন করা মানদুব (Recommended) এবং এর দলীল হচ্ছে কুর'আন এবং সুন্নাহ্‌:

কুর'আন-এর দলীলের ক্ষেত্রে:


"তোমরা কি এই বিষয়ে আশ্চর্যবোধ করছো? এবং হাসছো-ক্রন্দন করছো না?" [সূরা আন-নাজম: ৫৯-৬০]

"তারা ক্রন্দন করতে করতে নতমস্তকে ভুমিতে লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের বিনয়ভাব আরো বৃদ্ধি পায়।" [সূরা আল-ইস্‌রা:১০৯]

"তাদের কাছে যখন দয়াময় আল্লাহ্‌'র আয়াতসমূহ পাঠ করা হতো, তখন তারা সেজদায় লুটিয়ে পড়তো এবং ক্রন্দন করতো।" [সূরা মারইয়াম:৫৮]

সুন্নাহ্‌'র দলীলের ক্ষেত্রে:

ইবনে মাস'উদ বর্ণনা করেছেন যে রাসূলুল্লাহ (সা) আমাকে বলেন:

"আমাকে কুর'আন তিলাওয়াত করে শোনাও।" তিনি (আবদুল্লাহ্‌ বিন মাস'উদ (রা)) বললেন: 'আমি কি আপনাকে কুর'আন তিলাওয়াত করে শুনাবো অথচ যখন এটা আপনার উপরই নাযিল হয়েছে।' প্রতুত্তরে রাসূল (সা) বললেন: "আমি অন্য কারো মুখে কুর'আন তিলাওয়াত শুনতে বেশী ভালোবাসি।" অতঃপর আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে মাস'উদ (রা) তাকে (সা) সূরা নিসা তিলাওয়াত করে শুনালেন। তিনি (রা) যখন নিম্নোক্ত আয়াতটি তিলাওয়াত করছিলেন: "আর তখন কি অবস্থা দাঁড়াবে, যখন আমি ডেকে আনবো প্রতিটি উম্মতের মধ্য থেকে অবস্থা বর্ণনাকারী (স্বাক্ষী) এবং আপনাকে ডাকবো তাদের উপর অবস্থা বর্ণনাকারীরূপে (স্বাক্ষীরূপে)"। [সূরা আন-নিসা:৪১]; রাসূল (সা) বললেন: 'যথেষ্ট হয়েছে।' যখন ইবনে মাস'উদ রাসূলুল্লাহ্‌ (সা)-এর চেহারার দিকে তাকালেন, দেখলেন তাঁর দু'চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।" [মুত্তাফিকুন আলাইহি]

আনাস (রা.) বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) এমনভাবে আমাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখছিলেন যে আমি পূর্বে এমনভাবে তাঁকে বলতে শুনিনি:


"আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তবে তোমরা হাসতে কম, কাঁদতে বেশি। অতঃপর সাহাবীগণ (রা) তাদের মুখ ঢেকে ফেললেন কারণ তারা কাঁদছিলেন এবং ফুপাচ্ছিলেন।" [মুত্তাফিকুন আলাইহি]

আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) বলেন:


"শেষ বিচারের দিন সাত শ্রেণীর লোক আল্লাহ্‌'র আরশের নীচে ছায়া পাবে যেদিন তাঁর (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। ...এবং সে ব্যক্তি যে একাকী গোপনে আল্লাহ্‌-কে স্মরণ করে এবং তার চোখদুটি অশ্রুতে ভরে উঠে।"[মুত্তাফিকুন আলাইহি]

ইবনে উমর (রা) বর্ণিত: যখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সা)-এর ব্যাথা চরমে পৌছালো তখন তাকে (সা) জিজ্ঞেস করা হলো, কে নামাজের ইমামতি করবে? তিনি (সা) বললেন:


"আবু বকরকে বলো নামাজে ইমামতি করার জন্য।" 'আয়েশা (রা) বললেন: "আবু বকর একজন নরম হৃদয়ের মানুষ এবং তিনি হয়তো তাঁর ক্রদনের কাছে পরাভূত হয়ে যেতে পারেন।" আল-বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এবং হাদীসটি আল-মুসলিম কর্তৃক নিম্নোক্তভাবে বর্ণিত হয়েছে:


'আয়েশা (রা.) বলেন: "হে আল্লাহ্‌'র রাসূল (সা), আবু বকর একজন নরম হৃদয়ের মানুষ এবং তিনি কুর'আন তিলাওয়াতের সময় তার ক্রন্দনকে নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হবেন না...।" [মুত্তাফিকুন আলাইহি]

আনাস (রা.) হতে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) উবাই বিন কা'ব (রা.)-কে বলেন,


"আল্লাহ্‌ 'আজ্জা ওয়া যাল নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি তোমাকে (এ আয়াতটি) তিলাওয়াত করে শুনাই: "যারা অবিশ্বাস করেছিল..." [সূরা বাইয়্যিনাহ:১]; তিনি রাসূল (সা)-কে প্রশ্ন করলেন: "আল্লাহ্‌ কি আপনার কাছে আমার নাম উল্লেখ করেছেন?" জবাবে তিনি (সা) বললেন: "হ্যাঁ"। একথা শুনে উবাই কাঁদতে আরম্ভ করলেন।" [মুত্তাফিকুন আলাইহি]

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) বলেন:

لَا يَلِجُ النَّارَ رَجُلٌ بَكَى مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ حَتَّى يَعُودَ اللَّبَنُ فِي الضَّرْعِ وَلَا يَجْتَمِعُ غُبَارٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ

"আল্লাহ্‌'র ভয়ে ক্রন্দনকারী ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না দুধ দোহনের পর তা আবার উলানে ফেরৎ যায়; এবং আল্লাহ্‌'র রাস্তায় জিহাদের সময় উত্থিত ধুলি এবং জাহান্নামের আগুন হতে উত্থিত ধোঁয়া কখনোই একত্রিত হবে না।" আত্‌-তিরমিযী হতে বর্ণিত, যিনি একে হাসান সহীহ্‌ উল্লেখ করেছেন।

আবদুল্লাহ্‌ বিন শাকির (রা) হতে বর্ণিত:


"আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সা)-এর নিকট এমন এক সময়ে পৌঁছালাম যখন তিনি (সা) সালাত আদায় করছিলেন। তিনি (সা) ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছিলেন এবং তার বুক থেকে ফুটন্ত কেটলীর মতো শব্দ আসছিল।" আন-নববী বলেন: "হাদীসটি আবু দাউদ এবং আত্‌-তিরমিযী তার আশ-শামা'য়িল-এ এর ইসনাদকে সহীহ্‌ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।"

ইব্রাহীম বিন আবদ আর রহমান বিন আউফ বর্ণনা করেন যে, ইফতার করার জন্য আবদ আর রহমান বিন আউফ (রা.)-এর কাছে যখন কিছু খাবার আনা হলো, তখন তিনি বললেন:


"মুসা'ব বিন 'উমায়ের শহীদ হন। তিনি আমার চেয়ে উত্তম ছিলেন। তার মৃতদেহকে ঢাকতে এমন এক টুকরো কাপড় ছাড়া আমাদের কাছে আর কিছুই ছিল না, যা দ্বারা তার মাথা ঢাকলে পা বের হয়ে যাচ্ছিল এবং পা ঢাকলে মাথা বের হয়ে যাচ্ছিল। হামজা শহীদ হন এবং তিনিও আমার চেয়ে উত্তম ছিলেন। অতঃপর আল্লাহ্‌ আমাদেরকে পৃথিবীতে অনেক নিয়ামতের মধ্যে রেখেছেন। আমি এই ভয়ে খুবই ভীত যে আল্লাহ্‌ হয়তো এই পৃথিবীতে আমাদের সব পুরষ্কার দিয়ে দিয়েছেন।" অতঃপর তিনি (রা) ফুপিয়ে ফুপিয়ে এমনভাবে ক্রন্দন করতে লাগলেন যে আর কিছুই খেতে পারলেন না।

আল-'ইরবাদ বিন সা'রিয়্যা (রা) বলেন:



"রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) আমাদের সামনে এমন খুতবা দিলেন, যার ফলে আমাদের হৃদয় আল্লাহ্‌'র ভয়ে পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো এবং চোখ দিয়ে অশ্রু নেমে এল...।" [আবু দাউদ ও আত্‌-তিরমিযী]; দ্বিতীয়জন হাদীসটিকে হাসান সহীহ্‌ বলেছেন।

আনাস (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) বলেছেন:

من ذكر الله ففاضت عيناه من خشية الله حتى يصيب الأرض من دموعه لم يعذبه الله تعالى يوم القيامة

"যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌-কে স্মরণ করে এবং এতে আল্লাহ্‌'র ভয়ে তার চোখ থেকে অশ্রু বেড়িয়ে আসে, কিয়ামতের দিন ততক্ষন পর্যন্ত আল্লাহ্‌ তাকে শাস্তি দিবেন না যতক্ষন না তার অশ্রু জমীনে গিয়ে পড়বে।" আল-হাকিম হাদীসটি উল্লেখ করেছেন এবং সহীহ্‌ বলেছেন এবং আয-যাহাবী এর সাথে একমত পোষণ করেছেন।

আবু রায়হানা বলেন: আমরা রাসূলুল্লাহ্‌ (সা)-এর সাথে একটি অভিযানে অংশ নিয়েছিলাম এবং তখন তাঁকে বলতে শুনেছি:



"সে চোখের জন্য দোযখের আগুন হারাম যা আল্লাহ্‌'র ভয়ে কাঁদে, আল্লাহ্‌'র রাস্তায় জিহাদের ময়দানে সর্বদা জাগ্রত থাকে এবং আমি তৃতীয়টি ভুলে গেছি। কিন্তু পরবর্তীতে আমি শুনেছি তিনি বলছেন, 'আল্লাহ যা নিষিদ্ধ করেছেন এরকম কোন কিছু দেখা থেকে বিরত থাকার জন্য দৃষ্টিকে নীচে নামিয়ে রাখে।" আহমাদ এবং আল-হাকিম হতে বর্ণিত। আল-হাকিম এটিকে সহীহ্‌ বলেছেন, এবং আয-যাহাবী এবং আন-নাসা'ঈ এ বিষয়ে তার (আল-হাকিম) সাথে একমত পোষণ করেছেন।

ইবনে আবু মুলায়কাহ্‌ থেকে বর্ণিত, আমরা হিজরে আব্দুল্লাহ্‌ বিন আমর-এর সাথে বসে ছিলাম, যিনি বলেন:

"কাঁদো, এবং যদি তোমরা কাঁদতে না পারো, তবে অন্তত: (আল্লাহ্‌'র ভয়ে) কাঁদার ভান করো। যেই সত্ত্বার হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম খেয়ে বলছি, যদি তোমাদের কেউ সত্যি সত্যি জানতো কী অপেক্ষা করছে তবে তোমরা আল্লাহ্‌'র নিকট ততক্ষণ পর্যন্ত কাকুতি-মিনতি করতে যতক্ষণ না তোমাদের গলা ভেঁঙ্গে যায় এবং ততক্ষণ পর্যন্ত সালাত আদায় করতে যতক্ষণ না তোমাদের কোমর ভেঁঙ্গে যায়।"

এটা বর্ণিত আছে যে, আলি (রা) বলেছেন:


"বদরের যুদ্ধের দিন আল-মিকদাদ ছাড়া আমাদের আর কারো নিকট একটি ঘোড়া ছিল না এবং রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) ছাড়া আমি আর কাউকে সে রাতে ইবাদতে মশগুল দেখিনি, তিনি (সা) একটি গাছের নীচে ইবাদত করছিলেন এবং সকাল পর্যন্ত ক্রন্দন করেন।" এটি ইবনে খুজাইমা তার সহীহ্‌তে উল্লেখ করেছেন।

ছাওবান (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) বলেছেন:

"সেই ব্যক্তি কল্যানপ্রাপ্ত যে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে, তার আবাসস্থল তার জন্য প্রশস্থ হয়েছে এবং সে তার ভুলের জন্য ক্রন্দন করেছে।" আত্‌-তাবারানী হাদীসটি উল্লেখ করেছেন এবং একে হাসান আখ্যা দিয়েছেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:০৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×