অথচ দেখুন আজকের ঢাকা! একটা কুকুর যে ঘুরে বেড়াবে কোথাও দাড়াবে সে জায়গাটুকুও নাই!
কিন্তু আশির দশকে যারা বিশ্বাস করতো, "ঢাকা শহরে শিয়াল ডাকবে" তারা সে সময়কার সচেতন ও জ্ঞানী লোক ছিলেন।তখন আমি স্কুলে পড়ি অনেক বার অনেককে বলতে শুনেছি একথা, "ঢাকা শহরে শেয়াল ডাকবে।"
তাহলে তাঁরা এতো ইনভার্স ভবিষ্যৎবানী কিভাবে করেছিল ? কি ঘটেছিল তখন যা তাদের এমন উদ্ভট ভবিষ্যৎ দেখিয়েছিল ?
স্বাধীনতার পরের বাংলাদেশ যদি কয়েকটি দশকে ভাগ করে দেখা যায়, তাহলে দেখা যাবে ৭০ এর দশক ছিল, যুদ্ধ বিদ্ধস্ত একটি দেশ ও নানা বিপ্লব প্রতিবিপ্লবের দশক।তুলনা মূলক ৮০ দশক ছিল দেশটির উঠে দাড়ানো, সঠিক পথে পরিচালনার ভিত্তি ও উন্নয়নের দশক।আর ৯০ এর দশকে এসে আবার বিপরীত যাত্রা, পরিবাতান্ত্রীক সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে অযোগ্য, অসভ্য, অদক্ষ মানুষের নেত্রীত্বে সন্ত্রাস, কালোটাকা, পেশিশক্তি, দলবাজী, দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান, সমাজ, রাষ্ট্র, ভবিষ্যৎ, পরিকল্পনা এমনকি ব্যক্তি চরিত্র নৈতিকতায় পচন ধরিয়ে একটি কুৎসিত দুর্বিত্তায়নের রাজনীতির দশক।২০০০ এর দশক পূর্ববর্তী দশকেরই অনুরুপ কিন্তু মাত্রা অনেক অনেক বেশি।অভিজ্ঞতা আলোকে আরও অনেক দ্রুত পতন পচন ও পতনশীল দশক।আর ২০১০ এর দশকের কথা বলতে গেলে গত বিশ বছরের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ২ বছরেই গত দশকের সমান পতন হয়েছে, বাকি ৮ বছরে যে বিশ্বে বাংলাদেশ গ্রাম রাষ্ট্র থেকে একটি সন্ত্রাসের বস্তীরাষ্ট্রে পরিণত হবে- এটুকু ভবিষ্যৎবানী করতে কাউকে খুব একটা সচেতন হওয়ারও দরকার নেই।
এবার আসুন ৮০ দশকেই কেন সঠিক বললাম ? সবদিক তুলে ধরলাম না।বাংলাদেশের মানুষের উন্নয়নের একটা দিকই দেখি।বিচার, মামলা মোকাদ্দমা।মাটি আর বিচার এই দুই পেয়ে গেলে এদেশের আশি ভাগ মানুষ সরকারের কাছে আর কিছু তেমন চায়নি কখনও।আশির দশকে উপজেলা গঠন ও গ্রামের মানুষের দোর গোড়ায় বিচার নিয়ে যাওয়া ছিল প্রকৃত পক্ষে বাংলাদেশকে বিকেন্দ্রীকরনের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।পাশাপাশি বিভাগে হাইকোর্ট বেঞ্চ।এই ধারা অব্যহত থাকলে আজ ঢাকা শহর কেন্দ্রী এই নারকীয় বাংলাদেশ হতো না, কারন সম্পদ যা এদেশের এই মাটি আর মানুষ, সেই মানুষকেই যখন শহরে আসতে হতো না তখন আজের এই শহরই নিজের প্রয়োজনেই গ্রামে ফিরে যেত।ভাবুনতো আশির দশকের বাংলাদেশের গ্রামের মানুষের আর কি চাহিদা ছিল রাষ্ট্রের কাছে।অথচ সে সময় দেশের প্রতিটি উপজেলায় ফৌজদারী ও দেওয়ানী আদালত।গ্রামের মানুষের জমির বিবাদ নিষ্পত্তির জন্য যেখানে যুগের পর যুগ জেলা হাকিমের আদালতে লেফ্ট রাইট করতে হতো তা তখন ইউনিয়নের পাশে উপজেলা সদরে।সুনামগঞ্জে ট্রলার আর বাস ভরে খুনের মামলার হাজিরা দিতে আসতে হতো না।সে সময় অনেক উপজেলায় ঐ কোর্ট বিল্ডিংটিই ছিল প্রথম বিল্ডিং।উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন কাঠামো তখন যে আদলে তৈরী হয়েছিল তা অব্যহত থাকলে আজ পুরো বাংলাদেশটাই বিকেন্দ্রী করন হয়ে গ্রামের মানুষের ঘরে চলে যেত।মাটি আর বিচার এই দুইর পর বাংলাদেশের জনগণের যদি চাহিদা থাকে সে যোগাযোগ, মূলত বাংলাদেশে এখন যে সড়ক নেটওয়ার্ক দেখি এর ব্যাকবোন আশির দশকেই গড়ে ওঠে।
এই সব হিসেব কষেই আশির দশকে এসে মনে হয়েছিল, ঢাকায় ভবিষ্যতে শেয়াল ডাকবে।অথচ এই ঢাকা আজ কুত্তা বসবাসেরও অযোগ্য।
পাঠকের কাছে অনুরোধ শুধু এরশাদকে বাদ দিয়ে সে সময়কার রাষ্ট্র পরিচালনার গতিধারা দেখে আরেকবার ভেবে উত্তর খুজুন।