অল্প কিছুদিন আগেই এক নিকটাত্মীয়ের বাসা থেকে নিজ বাড়ি ফিরছিলাম,সময়টা ছিল মধ্যাহ্ন।চট্টগ্রাম,নিউ মার্কেটের অপরপ্রান্তে জলসা মার্কেটের সামনের এক টংএ চা খাচ্ছিলাম আর গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম।রোদের প্রখরতা বেশি হওয়ায় তাপমাত্রার পরিমাণও ছিলো খুব বেশি।হঠাৎ চিৎকার-চেচামেচি শুনলাম,জটলা দেখে এগিয়ে গেলাম সে দিকে।দেখলাম অনেক গুলো লোক মিলে চব্বিশ কি ছাব্বিশ বছর বয়সী এক যুবককে বেধড়ক মারছে আর যুবক কেঁদে-কেঁদে বলছে 'ভাই আমার কথা শুনেন ওরা মিথ্যা বলছে'।তখনও আমি ঘটনা সম্পূর্ণ বুঝে উঠতে পারিনি,দেখলাম প্যন্ট-সার্ট পরা এক ভদ্রলোক ভিড় ঠেলে এগিয়ে গিয়ে ছেলেটির মাথায় দুটি ভয়ংকর রকমের আঘাত করে জটলা ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন,আমার চোখে চোখ পরতেই সহাস্যে বলে উঠলেন "ঝাপ্টাবাজ,দেশের যে কি হাল হচ্ছে"।এই বলে আর সময় নষ্ট না করে ৩নং রোডে চলাচলকারী লোকাল রেইঞ্জারে উঠে বসলেন,কিছুক্ষণের মাঝেই পরিপূর্ণ যাত্রী নিয়ে রেইঞ্জার হাওয়া।
ততক্ষণে জটলা ফাঁকা,যারা মারছিলো তারাও মিশে গেছে সাধারণ মানুষের মাঝে,ছেলেটাকেও আর দেখলাম না।ব্যপারটা কিছুতেই মাথা থেকে ফেলতে পারছিলামনা,ছেলেটার নাক বেয়ে রক্তপড়া আর কান্না দেখে মনটা খারাপ হয়ে যায়।পাশে দাড়ানো এক ভ্রাম্যমাণ ফুসকা বিক্রেতার কাছে শুনলাম ছেলেটার কোনো দোষ নেই,ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জের ধরেই কিছু বখাটে ওই ছেলেটিকে ছিন্তাইকারি বলে জনতার হাতে মার খাইয়েছে!এই কথা শুনে মন খারাপটা মেজাজ খারাপে পরিনত হয়।একদল কলকাঠি নাড়ায় আর মূর্খের দল না বুঝেই.........................!
আমি নিশ্চিত,যে ভদ্রলোকটি মেরেছে সে একজন ভীতু প্রজাতির মানুষ এবং তার সহযোদ্ধাদের অনেকেও তাই।হয়তো বাসায় গিয়ে তারা বীরত্বের কথা শোনাবে কিংবা বউয়ের ভয়ে কাচুমাচু হয়ে বলবে "জানো?আজ বড় বাঁচা বেঁচেছি।আর একটু হলেই ওই বেটা আমার সেল ফোন,মানিব্যাগ সব নিয়ে যেত।ভাগ্যিস পাব্লিক ধরে প্যাদানি দিয়েছে"।এই ঘটনা ছাড়াও দেশের আনাচকানাচে প্রতিনিয়ত অনেকগুলো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে যার দায় কেবলমাত্র সে সকল সাধারণ মানুষের যারা অন্যের চোখে দেখে,অন্যের কানে শোনে।
এরাই আমার বাংলার আম জনতা,যখন যে হুজুগ ওঠে তাতেই গা ভাসিয়ে দেয়।হুজুগে,আহাম্মক বাঙ্গালি সব,হাওয়া যেদিকে তারা সেদিকে।যতদিন এদের মানষিকতা না বদলাবে ততদিন এদেশ কোনো ক্ষেত্রেই এগোবেনা।তবে আমি নিরাশ হতে চাইনা,নৈতিকতা আর মুল্যবোধ সবার মাঝে আসবে এই কামনাই করি।