“আজ আমি ছাত্রদের রক্তে রঞ্জিত। এর পর কোন গুলি হলে তা ছাত্রকে না লেগে যেন আমার গায়ে লাগে।”
- কথাগুলো বলেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের তৎকালীন অধ্যাপক ও প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহা।
যিনি নিজের জীবন দিয়ে আগলে রেখেছিলেন তাঁর ছাত্রদের। শুধুমাত্র একজন প্রক্টর হিসেবে নয়, একজন বাবা হিসেবেও। যিনি তাঁর ছাত্রদের নিজ সন্তানের চেয়ে ছোট করে দেখতেন না কখনোই।
১৯৬৯ সালের এই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা গণঅভ্যুত্থানের অগ্রনায়কের ভূমিকা পালন করেছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই শুরু হয়েছিল পাক হানাদার বাহিনী হটাও আন্দোলন। সেদিন নিজের জীবনের বিনিময়ে বাঁচিয়েছিলেন হাজারো শিক্ষার্থীর জীবন।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে তিনি দেশের জনগণকে পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি, ছাত্রনেতা আমানুল্লাহ আসাদুজ্জামান, ১৫ ফেব্রুয়ারি, সার্জেন্ট জহুরুল হক এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক শহীদ শামসুজ্জোহার মৃত্যু দেশেবাসীকে স্বাধীনতা আন্দোলনের দিকে ধাবিত করে। শামসুজ্জোহাকে দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে গন্য করা হয়। বাংলা ভাষা আন্দোলনের সময়ও তিনি প্রত্যক্ষভাবে আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন।
জোহা স্যারের আত্মত্যাগ ও আমাদের চেতনাঃ
জোহা স্যার শুধুমাত্র একজন শিক্ষকই ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন পিতা। ছাত্ররা তাঁর কাছে ছিল সন্তানসম। তাই তো সন্তানের বুকে তেড়ে আসা গুলির সামনে নিজের বুক পেতে দিয়েছিলেন। রক্ষা করেছেন ছাত্রদের। পালন করেছেন তাঁর উপর অর্পিত দ্বায়িত্ব। একজন প্রক্টরের তো এমনই হওয়া উচিৎ। যার বুকে ছাত্ররা থাকবে নিরাপদ। মায়ের বুক থেকে ক্যাম্পাসে আসা প্রতিটি ছাত্রের নিরাপদ কোল একজন প্রক্টরের কোল। সেই কোলই পেতে দিয়েছিলেন জোহা স্যার।
কিন্তু আজকের আমরা জোহা স্যারের আত্মত্যাগ থেকে কি শিক্ষা নিচ্ছি? সেই জোহা স্যারের পরের সময় থেকে আমরা কি কোন ক্যাম্পাসে এতো নিরাপদ কোন প্রক্টর পেয়েছি যার কোল সত্যিকার অর্থেই ছাত্রদের জন্য নিরাপদ? তাহলে আমাদের শিক্ষাটা কোথায়?
লাল দল, সাদা দল, হলুদ দল, কালো দল কত নামে কত দল আজ শিক্ষকদের! কত রাজনীতি! কিন্তু ছাত্রদের জন্য নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক কেন এতো কম?
কবে আমাদের মাঝে জোহা স্যার আবার ফিরে আসবেন? নাকি এই প্রক্টর মানের পদটা বাকি দিনগুলোতে বারবার বিকৃত করবেন জোহা স্যারের অম্লান স্মৃতি?
আমরা আমাদের সেই জোহা স্যার চাই।
© রায়হানুল ফেরদৌস রাজ
ঝিনাই-কুঁড়ির পাড়
পঞ্চগড়
ছবিঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:০৪