somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

[ফিরে দেখা - ব্যক্তিগত জীবন] মৌচাক মার্কেটের সামনে তেরাস্তার মোড়ের জ্যাম, গাড়ির প্যাঁ-পোঁ, নানানবয়সীর হৈচৈ-হুড়াহুড়ি, তার মধ্যে বাঁশিতে পল্লীগানের সুর

০১ লা নভেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

*উৎসর্গঃ ব্লগার আসিফ মুভি পাগলা


নব্বই দশকের শুরুর দিকে মৌচাক মার্কেটে ঢোকার মুখে একজন মোটা, কালো, মধ্যবয়স্ক মুচি বসতেন। তাকে দেখলেই আমার অয়োময় নাটকের নিবারনের কথা মনে পড়ত। আশেপাশে যে আরো দু'য়েকজন মুচি ছিল, তারা কেউ এই ভদ্রলোককে একদম সহ্য করতে পারত না, সবসময় ঝগড়া ছিল। কিন্তু কাস্টমারদের মধ্যে উনি খুব জনপ্রিয় ছিলেন। যতটা না তার কাজের জন্য, তার চেয়ে অনেক বেশি তার বাঁশি বাজানোর অসাধারন প্রতিভার জন্য। জুতার কাজ শেষ হবার পর একটু অনুরোধ করলেই ব্রাশ, কালি ফেলে তুলে নিতেন তার বাঁশিটা আর চমৎকার সুর তুলতেন। মৌচাকের সামনের তিনরাস্তার মোড়ের জ্যাম, গাড়ির প্যাঁ-পোঁ, মার্কেটে আসা নানানবয়সীর হৈচৈ-হুড়াহুড়ি আর তার মধ্যে বাঁশিতে পল্লীগানের সুর - সবকিছু মিলিয়ে একটা অদ্ভুত আবেশাচ্ছন্ন সময়।

বাঁশি আর বেহালার মধ্যে কি যেন একটা বৈশিষ্ট্য আছে, শুনলেই মনে হয় হৃৎপিন্ডটাকে চিড়ে দিয়ে কাঁদছে। কিন্তু এই কাঁদার মধ্যেও কি যেন একটা সুখ আছে আর প্রায় বিনা পয়সা এই সুখ পাওয়ার লোভেই আমি কয়েকদিন পরপর এই ভদ্রলোকের কাছে জুতা পালিশ করতে যেতাম।

আমার মতই বাঁশি শোনার লোভে অনেক বেশি কাস্টমার তার কাছে কাজ করাতে আসত। এটাই বোধহয় অন্য মুচিদের রাগের কারন! সহকর্মীদের সাথে তার ব্যবহারও অবশ্য খুব ভাল ছিল না।

এরপর দেশের বাইরে চলে গেলাম। মধ্যে কয়েকদিনের জন্য একবার দেশে গেলেও মৌচাকের ওদিকে যাবার সুযোগ পাইনি। ৬-৭ বছর পর ৯৯ সালের দিকে অনেক দিন পর আবার মৌচাকে গেলাম তার বাঁশি শোনার জন্য। ততদিনে ওখানে ওভারব্রিজ হয়ে তুলকালাম অবস্থা। মুচিরা জায়গা বদলে ওভারব্রিজের নিচে চলে গেছে। কিন্তু বাঁশিওয়ালাকে তাদের মধ্যে দেখলাম না। অন্য মুচিদের কাছে খুব একটা যেতাম না বলে তাদের চেহারাও মনে নাই। পুরোনো মুচিদের সাথে বাঁশিওয়ালার যে মধুর (?!) সম্পর্ক, তাদের কিছু জিজ্ঞেস করতে সাহস হচ্ছিল না। বেশ সংকোচ নিয়ে কিছুক্ষন পর জিজ্ঞেস করলাম একজনকে। যা ভেবেছিলাম, শোনামাত্রই রেগে গেল - "মামু, দিলেন তো মেজাজটা বিলা কইরা"। শেষপর্যন্ত জানা গেল, বাঁশিওয়ালা নাকি বেশ কিছু দিন আগে পাততাড়ি সেখান থেকে গুটিয়ে অন্য কোথাও চলে গেছে। বাঁশি শুনতে না পেরে মনটা বেশ খারাপ করে চলে আসলাম। পরে অবশ্য মনে হল যে লোকটা মিথ্যা কথাও বলতে পারে। হয়ত সেদিন কোন কারনে ছিল না, দু'দিন পর আবার গেলেই পাওয়া যাবে। নানান ধরনের ঝুটঝামেলায় আর যাওয়া হল না। কয়েকদিন পর আবার ফিরে আসলাম পরবাসের আবাসে।

আজকে অনেক বছর পর ফেসবুকে একজন ব্লগারের একটা স্ট্যাটাস দেখে ("উপলব্ধি ১ : পেশাদার গায়কদের চাইতে রিকশাওয়ালাদের গান শুনতেই বেশী ভাল লাগে । তাদের অনেকেরই গানের গলা নাই কিন্তু আবেগ আছে ।") বাঁশিওয়ালার কথা খুব মনে পড়ল। সবসময় 'মামা' ডাকের কারনে তার নাম হয়ত কোনদিন জানতামই না বা জানলেও আজকে আর মনে করতে পারছি না।

-------------------------------------------------------------------------------
* ব্লগার আসিফ মুভি পাগলা ব্লগে খুব নিয়মিত নন। তাকে মূলত পাওয়া যায় ফেসবুকে। আমি ফেসবুকে তাকে অনুসরন করি তার ক্লাসিক স্ট্যাটাসগুলির কারনে। চরম সব দার্শনিক কথাবার্তা আর হাস্যরসের অপূর্ব মিশেলে ভর্তি থাকে সেগুলি। আমার পছন্দের একজন মানুষ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৩৯
৬৬টি মন্তব্য ৬৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো - ছবি ব্লগ

লিখেছেন শোভন শামস, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯

"পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো", কিংবা "পোস্টকার্ড রো" বা "সেভেন সিস্টারস" নামে পরিচিত, বাড়িগুলো। এটা সান ফ্রান্সিসকোর আলামো স্কোয়ার, স্টেইনার স্ট্রিটে অবস্থিত রঙিন ভিক্টোরিয়ান বাড়ির একটি সারি। বহু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×