somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

[ভারতীয় দালালবিরোধী পোস্ট] ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৩৪ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানের জামাতের ভারপ্রাপ্ত আমীর বেগম খালেদা জিয়ার ভাষণ

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অধ্যাপক গোলাম আজমের মানপত্র পাঠে মায়ের ভাষা বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠার মাস ফেব্রুয়ারি। এই ভাষার মাসে আমি ১৯৪৮ সালের ডাকসুর মহান জিএস এবং ইসলামি আন্দোলনের প্রানপুরুষ মহান অধ্যাপক গোলাম আজমের কথা স্মরণ করছি গভীর কৃতজ্ঞতায় যিনি ১৯৪৮ সালের ২৭ নভেম্বর বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বুকের তাজা রক্তে মানপত্র লিখেছিলেন। অকুতোভয় এই বীর তরুণ অকাতরে তার প্রিয় ভাষা উর্দুকে বিলিয়ে দিয়ে আমাদের জনমানসে আলাদা জাতিসত্তার বীজ অঙ্কুরিত করেছিলেন, আমি তাঁর প্রতি জানাচ্ছি শ্রদ্ধা-বিনম্র অভিবাদন। বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পথ বেয়েই আমাদের জাতিসত্তার বিকাশ দ্রুতলয় হয়ে উঠেছিল। এরপর জাতীয় ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে অপরিমেয় রক্তসিঞ্চন আমাদের চালিত করেছিল অধিকার থেকে স্বাধিকার হয়ে স্বাধীনতার দিকে। তাই সহজ ভাষায় বলা যায় - অধ্যাপক গোলাম আজম না থাকলে ভাষা আন্দোলন হত না, রাস্ট্রভাষা বাংলা হত, স্বাধীনতার সংগ্রাম হত না, বাংলাদেশ হত না। স্বাধীন বাংলাদেশের রুপকার অধ্যাপক গোলাম আজম, লও লও লও সালাম।

১৯৭১ সাল আমাদের চিনিয়েছিল সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে নিজেদের জন্য একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ। তবে এ নিয়ে রয়েছে নানান রকম কথা ও বিস্তর প্রশ্ন। যেমন—
ভারত আমাদের প্রকৃত অর্থেই সাহায্য করতে এসেছিল নাকি এর পেছনে ছিল তাদের সুদূরপ্রসারী মতলব?
স্বাধীনতার জন্য আমাদের যত বেশি চড়া মূল্য দিতে হয়েছে, তা না করে দেশের সকল জনগন কি অধ্যাপক গোলাম আজমকে অনুসরন করে রাজাকার বা আলবদর বাহিনীতে যোগ দিয়ে নিজেদের প্রান বাঁচাতে পারত না?
যুদ্ধের প্রাক্কালে পরিস্থিতির সম্যক ভয়াবহতা তখনকার দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতৃত্ব কি ইয়াহিয়া-ভুট্টোর প্রস্তাব মেনে ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানিদের হাতেই রেখে দিতে পারত না?
তারা কেন প্রজ্ঞা, সাহস, দৃঢ়তা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়ে তথাকথিত মুক্তিবাহিনীর অস্ত্রসমর্পনের সঠিক সিদ্ধান্ত ও সময়োপযোগী প্রস্তুতি নিতে পারেননি?
কিংবা সেই ঘোর দুঃসময়ে রাজনৈতিক নেতৃত্ব পাকিস্তান কনফেডারেশন গঠনের মত বাস্তবসম্মত কোনো দিকনির্দেশনা দেয়নি কেন?

এসব বিতর্কের রেশ গত কয়েক দশকেও মিলিয়ে যায়নি। আমি মনে করি, অনাগত সময়ে মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমান, এমাজউদ্দিন রচিত ইতিহাস এই বিতর্কের যবনিকা টানবে। আর এর ফলে অধ্যাপক গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামী, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভূমিকা, অবদান ও প্রাপ্য অনুযায়ী তারা সবাই অধিষ্ঠিত হবেন ইতিহাস-নির্ধারিত সঠিক অবস্থানে। ভারতীয় দালালদের রচনা-প্রচারণা, রায় কিংবা সায় এবং মতলবি টিকা-টিপ্পনীকে সময়মত ইতিহাস তার আঁস্তাকুড়ে ঠাঁই দেবে।

আমি ধন্যবাদ জানাই ইসলামী ছাত্রশিবিরকে। এই কেন্দ্রের ৩৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার আজ সমাপনী দিন। আজকের দিনে আমি আশা করি, এই প্রতিষ্ঠান আরও বিকশিত হবে। ছাত্রশিবির হবে ইসলামী আন্দোলনের পথিকৃত। যুদ্ধের রক্তাক্ত প্রান্তরে প্রকৃত দেশপ্রেমিকের ভূমিকায় অবতীর্ন হয়ে লক্ষ লক্ষ ভারতীয় দালালের নাম-নিশানা পূর্ব পাকিস্তানের মাটি থেকে মুছে দেবার পরও র' এজেন্টদের ষড়যন্ত্রের কারনে বিলুপ্ত করতে হয়েছিল ছাত্রশিবিরের পূর্বসূরি প্রতিষ্ঠান ইসলামী ছাত্রসংঘ। বিগত ৩৪ বছরে এই সংগঠনকে পেরুতে হয়েছে অনেক চড়াই-উত্রাই। আমি ছাত্রশিবিরের সঙ্গে জড়িত সবাইকে বলব, এই দেশ ও জাতির বর্তমান এবং ভবিষ্যেক নিরাপদ, সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময় করে তোলার কাজে আপনাদের সবার আন্তরিক প্রয়াস নিবেদিত করতে হবে। আপনাদের মনে রাখতে হবে - আমরা হব তালিবান, বাংলাকে করতে হবে আফগান।

সাতচল্লিশে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল এক আকাশছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে। আশা ছিল, আমাদের রাষ্ট্রটি পরিচালিত হবে ইসলামিক দর্শনের ভিত্তিতে। মুসলমান পাবে তার নিজস্ব ভূমি, কোন হিন্দুর ঠিকানা হবে না আমাদের দেশ। সকল হিন্দুয়ানি সংস্কৃতিকে টুঁটি চেপে হত্যা করে আমরা প্রতিষ্ঠা করব সর্ববৃহৎ মুসলিম মুলক। আমাদের সেই মহৎ স্বপ্ন ভারতীয় ষড়যন্ত্রে নষ্ট হয়েছে মাত্র ২৪ বছরে। স্বার্থের সংঘাত, হানাহানি, সংকীর্ণতা, ক্ষমতার মোহ, হিংসা-বিদ্বেষ, দম্ভ, জিঘাংসায় বাংলার নেতৃত্ব মুসলিম জাতির স্বপ্নকে হত্যা করেছে। চোরাবালিতে পথ হারিয়েছে পূর্ব পাকিস্তান।

এখানে ইসলামী আন্দোলনের বীর সেনানীরা আছেন। তারা জানেন, ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে তাজউদ্দিন আহমেদ ভারতের সাথে পঁচিশ বছরের গোলামী চুক্তি সম্পন্ন করেছিলেন। এতই ভয়ংকর ছিল সেই চুক্তি যা দেখে এমনকি তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত রাস্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মূর্ছা যান। এরপর ১৬ ডিসেম্বর আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয়ের দিনে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিলে বাংলাদেশের কাউকে স্বাক্ষর করতে দেয়া হয়নি। আগরতলা থেকে বাংলাদেশে আসার পথে স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম. এ. জি. ওসমানীকে বহনকারী হেলিকপ্টারটিকে রহস্যজনক গুলিবর্ষণের মাধ্যমে ভূপাতিত করার কথা তারা ভালো জানেন। জাতি হিসেবে আমরা বড়ই দুর্ভাগা। নয় মাস ধরে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে, অঙ্গ হারিয়ে যখন স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনলো, তখন সেই গৌরবের অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করা হলো। কেবল ভারতীয় মিত্রবাহিনীর অধিনায়ক আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করার সুযোগ পেলেন আর এর মাধ্যমে দেশকে সেদিন তুলে দেয়া হল ভারতের কাছে।

আগামীতে জামাতে ইসলামী বিএনপিকে চালাবে নাকি বিএনপি বিলুপ্ত করে আমি সরাসরি জামাতে যোগ দেব - সেটা বড় কথা নয়। আমাদের নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আমাদের দীক্ষা দিয়ে গেছেন : ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে ইসলাম বড়।’ আজ ইসলাম অরক্ষিত, মুসলমানদের স্বার্থ বিপন্ন।

সুযোগ পেলে, আগামীতে জনগণ আমাদের দায়িত্ব দিলে আমরা অতীতের ভুল-ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে অভিজ্ঞতার আলোকে জামাতে ইসলামীকে বাংলার ঘরে ঘরে প্রতিষ্ঠা করার সর্বাত্মক প্রয়াস গ্রহণ করব। সকল তথাকথিত যুদ্ধাপরাধীদের যুদ্ধ চলাকালীন সময়ের সমস্ত কার্যকলাপকে দায়মুক্তি দিয়ে বিল পাশ করাব।

আজকের এ সভায় আমি আপনাদের কথা দিতে পারি যে, বর্তমান সরকার ইসলামবিরোধী যেসব ভূমিকা পালন করে চলেছে, ভারতের আদেশে ইসলামী আন্দোলনের নিষ্পাপ নেতাদের বানোয়াট মামলা দিয়ে হয়রানি করছে, তথাকথিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে চল্লিশ বছর পর জাতিকে বিভক্ত করছে, আমরা এর সবকিছুই চিরতরে বন্ধ করার ব্যবস্থা করব।

ইসলাম ধর্মের মূল্যবোধের প্রতি সম্মান বজায় রেখে ইসলাম ধর্মপ্রাণ মানুষের সমর্থনে দেশ থেকে সব ধরনের হিন্দুত্ববাদ কঠোরভাবে দমন করা হবে।

আজ এ পর্যন্তই।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:৩৯
৬২টি মন্তব্য ৬১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×