শুধু মাত্র ঢাকা শহরে কমপক্ষে ৩০ লাখ বেকার আছে।
এই ত্রিশ লাখের মধ্যে আমি একজন। আমাদের দেশে ১১ কোটির বেশি লোক কর্মক্ষম আছে। দুঃখের বিষয় দেশে কমপক্ষে চার কোটির বেশি বেকার আছে। এদিকে সমস্ত দেশে সরকারী চাকরীজীবির সংখ্যা ১৫ লাখ হবে। এই সরকারী চাকরিজীবিরাই সম্ভবত বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গেছে। দেশে বেসরকারী চাকরিজীবির সংখ্যা কত(?) আমি জানি না। যাই হোক, আমার আজকের লেখার বিষয় গল্প। অফিসের গল্প। প্রতিটা অফিসে প্রতিদিন অসংখ্য মজার মজার ঘটনা ঘটে। ঢাকা শহরে অসংখ্য অফিস আছে। এই অসংখ্য অফিসে অসংখ্য লোক চাকরী করে। অফিসের মজার মজার ঘটনা গুলোই আমি বলব আজ। ঘটনা চক্রে আমি ঢাকা শহরের অর্ধেকের বেশি অফিস মনে হয় ভিজিট করে ফেলেছি। নানান ধরনের অফিসে নিজের চোখে যা-যা দেখেছি তাই আজ বলল। কথায় বলে, অফিস হলো সেকেন্ড হোম। সরকারী অফিস গুলো নোংরা হয়। লোক গুলোর ব্যবহারও ভালো হয় না। আমার ধারনা শিক্ষা, ভূমি, সিটি করপোরেশ আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সবচেয়ে বেশি দূর্নীতি হয়।
এক হিসেবে অফিস হলো মাছের বাজারের মতো।
একটা অফিসে অনেক রকম লোক কাজ করে। অনেক রকম তাদের মন মানসিকতা। প্রতিটা অফিসে বারো রকমের মানুষ, বারো রকমের জায়গা থেকে আসে। একদল লোক আছে, অফিসে এসেই সবার আগে চা বা কফি চায়। চা খেতে খেতে খবরের কাগজ পড়ে অথবা কম্পিউটার অন করে ফেসবুক চালায়, কেউ কেউ অনলাইন নিউজ পোর্টাল গুলো দেখে নেয়। কেউ কেউ সহকর্মীর সাথে চলমান কোনো ইস্যু নিয়ে বক বক শুরু করে দেয়, প্রায় অফিস ছুটির আগ পর্যন্তই এই বক বক চলতে থাকে কোনো না কোনো বিষয় নিয়ে। একটা অফিসে সবচেয়ে বেশি ছোটাছুটি করে অফিসের পিয়ন গুলো। এই চা দে, ফটোকপি করে নিয়ে, বড় স্যার বের হবে- ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলো, ফাইল টা দাও, অমুককে ফোন দাও, আমার ডেস্ক পরিস্কার করা হয়নি কেন? কাজ না করে মোবাইল টিপাটিপি কেন? তোমাকে পানি দিতে বললাম না! চিঠিটা কুরিয়ার করে আসো, কুইক। একটা পরামর্শ দেই- দুষ্ট সহকর্মীদের সব সময় এড়িয়ে চলাই ভালো। প্রতিটা অফিসে কিছু অলিখিত নিয়ম থাকে- সেগুলো সঠিকভাবে মেনে চললে অনেক সমস্যা তৈরি হওয়া থেকে বেঁচে যাওয়া যায়।
মেয়েরা অফিসে কি করে?
অফিসে অবিবাহিত মেয়েরা পাশের সহকর্মীর কাছ থেকে মুখটা একটু আড়াল করে ঠোঁটে লিপস্টিক দেয়, সারাদিনে অন্তত চার পাঁচ বার।। একটু পর-পর আয়নায় মুখ দেখে। ওড়না ঠিক করে। কাজ বাদ দিয়ে মোবাইলে কার সাথে যেন ফিসফিস করে কথা বলে। কখনও কখনও ব্যলকনি বা ওয়াশরুমে গিয়ে মোবাইলে কথা বলে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে চ্যাট করতে মেয়েরা ভীষন ওস্তাদ। মেয়েরা অফিসের চা খেতে পছন্দ করে না। তাই পছন্দের সহকর্মীকে নিয়ে রাস্তার পাশে চা খেতে যায়। অফিসে এক মেয়ে আরেক মেয়ে সহকর্মীর সাথে শাড়ি, গহনা, মেকাপ আর নিজেদের প্রেমিক নিয়ে গল্প করতে খুব পছন্দ করে। মেয়েরা অল্পতেই বড় স্যারদের পটিয়ে ফেলতে পারে। তারা কারনে অকারনে ছুটি নেয়। ছুটি পেয়েও যায়। অফিসে দেরী করে আসলেও তাদের কোনো সমস্যা হয় না। সেলফি তুলে ফেসবুকে দেয়। আর এমন ভাব দেখায় সারাদিনে অফিসে এরা প্রচন্ড কাজ করে। অনেক অফিসে মামা চাচার জোরে অতি নির্বোধ সব লোকজন বড় বড় পদে বসে থাকে।
অফিসে এক শ্রেনীর তেজবাজ আছে।
তারা কোনো কাম কাজ না করেও বেতনের টাকা বাড়িয়ে নেয়। অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও ভোগ করে। অফিসে প্রচন্ড ফাঁকি দেয় অথচ বড় স্যারদের কাছে ভালো থাকে। কোনো কাম কাজ না করেও এমন ভাব দেখায় কাজ করে সব উলটে ফেলেছে। এই শ্রেনী আবার খুব দ্রুত প্রমেশনও পেয়ে যায়। এরা দারুন চাটুকার হয়। আরেক শ্রেনী আছে সারাদিন শুধু খেটে মরে, আবার স্যারদের চোখে ভালো হতে পারে না। এদের প্রমেশন হয় না, বেতনও বাড়ে না। প্রতিটা অফিসে দুই চারজন দুষ্টলোক থাকবেই। এই দুষ্টলোক শুধু পুরুষ নয় নারীও আছে। প্রতিটা অফিসে দুই চারজন বিষাক্ত নারী-পুরুষ আছে। এরা বড় ভয়াবহ। অফিসের সবচেয়ে খারাপ শ্রেনী হলো- এই বিষাক্ত নারী-পুরুষের দল। এরা একজনের কথা আরেকজনকে সত্য মিথ্যা বলে পুরা ব্যাড়াছ্যাড়া লাগিয়ে দেয়। প্রতিটা মুহুর্ত এরা সুযোগ খুঁজে কিভাবে আপনাকে স্যারদের চোখে খারাপ বানাবে। কিভাবে আপনার চাকরি খাবে। বড়ই কুটিল শ্রেনী এরা। এরা নিশ্চয় ছোটবেলা থেকে আদর ভালোবাসা পায়নি।
অফিসে দুই একজন ভালো লোকও থাকে।
এরা কারো ক্ষতির চিন্তা করে না। বরং পারলে উপকার করে। অথযা বক-বক করে না। অফিসের ফোনে ফোন করে না। মিথ্যা বিল করে একাউন্স থেকে টাকা নেয় না। অফিসের কম্পিউটারে গেমস খেলে না, ব্লগ চালায় না, ফেসবুকিং করে নাক। মুভি ডাউন লোড দিয়ে বাসায় নিয়ে যায় না। অযথা সময় অপচয় করে না, নিয়মিত নামাজ পড়ে, পিয়নদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে না। সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলে।
যারা চাকরি করছেন তাদের আমি অনুরোধ করবো- অফিসে আপনি আপনার দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করবেন। কে কাজ করলো আর কে কাজ করলো না সেদিকে নজর দেবার আপনার দরকার নেই। আপনি আপনার কাজ নিষ্ঠার সাথে করে যান। সাফল্য আসবেই। সবার কথা হাসি মুখে শুনবেন। একজনের কথা আরেকজনকে বলবেন না। কাজ ফেলে অযথা বক বক করবেন না। প্রতিটা সহকর্মীর সাথে, এমনকি একজন পিয়নের সাথেও সুন্দর করে কথা বলবেন। অফিসে কারো কাছ থেকে টাকা ধার নিবেন না। পন্ডিত সাজবেন না, পন্ডিত হবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:০৬