somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

এই সমাজ- ১

০১ লা জুন, ২০১৯ রাত ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



''টুকরো টুকরো সাদা মিথ্যা, রাস্তায় পাওয়া ডায়েরী থেকে, জীবনের গল্প, আজকের ডায়েরী, ঢাকার পথে পথে'' এরকম শিরোনামে আমি ব্লগে লিখি। অবশ্য এসব শিরোনামের বাইরেও অনেক রকম লেখা লিখি। পাঁচ সাত বছর আগেও একই শিরোনামে নানান রকম লেখা লিখেছি। সে লেখা গুলো বহুদূর নিয়ে যেতে পারি নি। লিখতে এবং পড়তে আমার ভীষন ভালো লাগে। মনে হয় জীবনে এর চেয়ে শান্তির আর কিছুই নেই। আমি অতি ক্ষুদ্র এবং তুচ্ছ মানুষ। তবু আমার অনেক কিছু বলার আছে। আমি বলতে চাই। জানাতে চাই। বলার জন্য, এবং জানার জন্য ব্লগের চেয়ে ভালো জায়গা আর কোথায় আছে! দীর্ঘ দশ বছরের বেশি সময় ধরে সামুর সাথে আছি। হয়তো আমৃত্যু পর্যন্ত থাকবো। যে সমাজে আমি বাস করি, সে সমাজের অনেক ভাল ব্যাপার, মন্দ ব্যাপার আছে। আমাকে সে গুলো বলতে হবে। তাই আজ থেকে এই সমাজ শিরোনাম দিয়ে নতুন লেখা শুরু করলাম। নিজের পেটের ভেতর কথা রেখে কোনো লাভ নেই। বলে ফেললেই হালকা লাগে। শান্তি শান্তি লাগে। কাজেই লেখা চলছে, চলবেই।


চতুর্থ রোজার দিনের কথা।
আমার বাসার কাছে মসজিদের সামনে ফলের দোকানে দাঁড়িয়ে আছি। উদ্দেশ্য ইফতারীর জন্য কিছু ফল কিনব। কি কি ফল কিনব, কতটুকু কিনব মনে মনে হিসাব করছি। ঠিক এই সময় একজন লোক এলেন ফল কিনতে। দোকানদারকে বললেন, আপেল কত করে?
বিক্রেতা বলল, ২৩০ টাকা।
লোকটি বেশ রাগ দেখিয়ে বলল, সব জাগায় আপেল ২০০ টাকা করে। তুমি ত্রিশ টাকা বেশি চাচ্ছো কেন?
দোকানদার বলল, আমাকে প্রতিদিন পুলিশকে ৩০০ টাকা করে দিতে হয়।
লোকটা বলল, কোন পুলিশ? কি নাম?
বিক্রেতা, পুলিশের নাম বলল। কোন থানার পুলিশ তাও বলল।
সাথে সাথে ফল কিনতে আসা লোকটা থানায় ফোন করলো। দুলা ভাই, আমি অমুক মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। থানার অমুকে এসে এই ফল বিক্রেতার কাছ থেকে প্রতিদিন ৩০০ টাকা নিয়ে যায়। এজন্য ফলের দাম আমার কাছে বেশি রাখছে। এই ফলের দোকান থেকে যেন আর টাকা নেওয়া না হয়।

সত্যি সত্যি এই ফলের দোকান থেকে এরপর অনেক দিন চাঁদা নেওয়া হয় নাই। আমি নিজে খোজ খবর রেখেছি।
আজ আবার আমি এই ফলের দোকানে গিয়েছি। ফল বিক্রেতা বলল, ভাগ্য খারাপ। গতকাল থেকে আবার চাঁদা দিতে হচ্ছে। তবে কয়েকটা দিন বেশ ছিলাম। কোনো চাঁদা দিতে হয় নাই। ফল বিক্রেতা আরও বলল, প্রতিদিন থানার পুলিশ গাড়ি বা বাইক দিয়ে আসে। এই গলির মধ্যে মোট সতের টা দোকান। সব গুলো দোকান থেকে আমিই প্রতিদিন টাকা তুলে পুলিশের হাতে দেই। না দিয়ে তো কোনো উপায় নেই।


সেদিন শ্যামলী যাবো, বাসে উঠেছি।
প্রচন্ড গরম, প্রচন্ড ভিড় বাসে। সময় তখন দুপুর দুইটা। আমি বাসের হ্যান্ডেল ধরে দাঁড়িয়ে টপটপ করে ঘামছি। আমার সামনের সিটে কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়ে বসে আছে। তারা খুব বেশি নির্লজ্জ। একে তো রোজার মাস। তার উপর প্রচন্ড গরম, রাস্তায় জ্যাম। শ্যামলী যাওয়া খুব দরকার, দেরী হয়ে যাচ্ছে। এদিকে ছেলে মেয়ে দু'টা নোংরামি করছে। করেই যাচ্ছে। বাসে নানান বয়সী লোক আছে। আমরা কত গুলো মানুষ গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছি। সেদিকে যেন তাদের নজর নেই। আমার মন মেজাজ এমনিতেই প্রচন্ড খারাপ। ইচ্ছা করছে ছেলে মেয়ে দু'টাকে থাপ্পড় দেই। তারা সমানে কচলা-কচলি করেই যাচ্ছে। এযুগের ছেলে মেয়ে গুলো এত লজ্জাহীন কেন? তারা দু'জন দুজনের হাত সেই প্রথম থেকেই ধরে রেখেছে। একটু পর পর ছেলেটা হাসতে হাসতে মেয়েরটার গায়ের উপর পড়ে যাছে। আমিসহ আমার আশে পাশের কয়েকজন যে ওদের মাথার উপর দাঁড়িয়ে আছি- সেদিকে তাদের খেয়াল নেই। তাদের দু'জনের মধ্যেই হু কেয়ারস ভাব।

আমার মেজাজ খারাপ চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়েই যাচ্ছে।
আমি যে অন্যদিকে সরে দাড়াবো সে উপায়ও নেই। বাস ভরতি লোক। এক সময় ছেলেটাকে বললাম, এই শুয়োর তোর সমস্যা কি রে? ঢলাঢলি করছিস ক্যান? এই মেয়ে কি তোর বউ? আর বউ হলেও তুই বাসের মধ্যে ঢলাঢলি করতে পারিস না। ছেলেটা রাগী চোখে আমার দিকে তাকালো। যে আমাকে মেরেই ফেলবে। মেয়েটাকে বললাম, তুমি যে এই ছেলের সাথে বাসে গা ঘষাঘষি করে আছো- তোমার বাসায় জানে? এই জন্য কি তোমার বাবা মা কলেজে পাঠায়? এখন তোমার লেখাপড়া করার বয়স। রঙ ঢং করার বয়স না। এই ছেলেকে দেখেই বুঝা যায় তোমার সাথে নষ্টিফষ্টি করে ভাগবে। ওর চেহারের মধ্যে আছে লুচ্চামি। তুমি কেন তা বুঝতে পারছো না।

এদিকে ছেলেটা ক্রমাগত কাকে যেন ফোন করে যাচ্ছে।
আমি বললাম, যাকেই ফোন দেছ, লাভ নাই। আজকে তোরে খাইছি হারামজাদা। লুচ্চামির স্বাদ মিটিয়ে দিব। বাসের লোকজনের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারছি তারা আমার সাথেই আছে। ছেলেটাকে বললাম, এই সব বাদ দে। লেখাপড়ায় মন দে। এক যুগের বেশি সময় আগে লেখাপড়া শেষ করেছি। বন্ধু বান্ধব তো আমাদেরও ছিল। আরে প্রেম তো আমিও করেছি। স্বচ্ছ পবিত্র প্রেম ভালোবাসা ছিল আমাদের। তোদের মতো নোংরামি ছিল না। ভালো হয়ে যা। এই সময় বাসের একজন যাত্রী আমাকে বলল, ভেরি গুড ইয়াংম্যান।

শ্যামলীর কাছাকাছি চলে এসেছি।
নামার আগে বদ ছেলেটাকে বললাম, তুই যেন কাকে কাকে ফোন দিলি। তারা কি এলো? আমি তো এখনই নেমে যাবো। ছেলেটা মাথা নিচু করে রেখেছে। বাস থেকে নামার আগে মেয়েটাকে বললাম, ছোট বোন। পড়া লেখায় মন দাও। এই সমাজে তোমার সাথে এক শ' জনই এরকম করতে রাজী হবে। নিজেকে সস্তা করো না। মূল্যহীন করো না। নিজেকে যোগ্য করে তুলে, পরিবারের জন্য কিছু করো। তারপর দেশের কথা ভাবো। তোমার যা যা দায়িত্ব আছে পরিবারের প্রতি, সমাজের প্রতি সর্বোপরি দেশের প্রতি তা পালন করতে চেষ্টা করো।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৯ রাত ১২:০৫
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×