আমি মানুষকে বিশ্বাস করি।
আসলে আমি মানুষকে বিশ্বাস করতে পছন্দ করি। আমি জানি- মানুষ ভন্ড, মিথ্যাবাদী এবং প্রতারক। তবু আমি দিনের পর দিন মানুষকে বিশ্বাস করে যাচ্ছি। আর প্রতিনিয়ত ঠকছি। বিশ্বাস করে ঠকার পর আমার বেশ মন খারাপ হয়। প্রচন্ড মন খারাপ হয়। কিন্তু তারপরে আবার নতুন করে আমি মানুষকে বিশ্বাস করি। আমৃত্যু আমি মানুষকে বিশ্বাস করে যাবো। বিশ্বাস করে ঠকা ভালো। তবে ইদানিং লোকজন আমাকে খুব বেশি ঠকাচ্ছে। লোকজন কি আমাকে গাধা মনে করছে? আমার সরলতার সুযোগ নিচ্ছে? যারা বিশ্বাস করে তারা সবাই'ই কি ঠকে। সবাইই কি প্রতারনার শিকার হয় আমার মতো? আমার সহ্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে।
সেদিন বাসার কাছ থেকে এক কেজি আদা কিনলাম।
আদা আমার দরকার নাই। দেখলাম এক বুড়ো লোক বৃষ্টির মধ্যে আদা নিয়ে বসে আছে। দেখে বেশ মায়া লাগলো। আদা কিনে বাসায় এসে দেখি সব গুলো আদা পচা। বুড়োকে বিশ্বাস করলাম। বিশ্বাস এর বদলে সব গুলো আদা পচা দিলো। ফেলে দিলাম। অতি সামান্য ঘটনা তবু আমার খুব মন খারাপ হয়েছে। একলোক ভ্যানে করে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। পেঁয়াজ দেখে মনে পড়লো, সুরভি পেঁয়াজ কিনতে বলেছে। কিনলাম পাঁচ কেজি পেঁয়াজ। পরের দিন সুরভি বলল, দেখো বেশির ভাগ পেয়াজ'ই পচা। শেষমেষ ময়লার জুড়িতে ফেলে দিলাম। বাজার থেকে নুডুলস কিনলাম। বাসায় এসে দেখি নুডুলস এর মেয়াদ আরো দুই মাস আগেই শেষ হয়ে গেছে। খেজুর কিনলাম। মেয়াদহীন খেজুর দিয়ে দিলো। অথচ এই দোকান থেকেই আমি সারা বছর কেনাকাটা করি।
চারিদিকে শুধু চাষ করা মাছ।
বাজার ভর্তি চাষকরা মাছ। চাষের মাছ খেতে একটুও মজা না। তবুও চাষের মাছ অনেক দাম। ৫/৬ শ' টাকা কেজি। এদিকে আমি চাষের মাছ খেতে পারি না। প্রতিদিন বিভিন্ন বাজারে ঘুরে বেড়াই। দেশী মাছ পাই না। এক জাগায় শিং মাছ পেলাম। দেখে মনে হলো চাষ করা না। এক কেজি শিং মাছ কিনেলাম। লোকটা বলল, একদম দেশী শিং। যদি দেশী শিং না হয়, তাহলে আপনাকে এক লাখ টাকা দিব। খুশি মনে শিং মাছ নিয়ে বাসায় ফিরলাম। মাকে দেখালাম, মা বলল, এই গুলো দেশী শিং না। চাষের। আমি মার কথা বিশ্বাস করলাম না। পাশের বাড়ির রফিক আংকেলকে ডেকে নিয়ে এলাম। উনি অভিজ্ঞ লোক। উনি মাছ দেখেই বললেন, এ গুলো চাষের শিং। মনটা ব্যাপক খারাপ হলো। মাছ গুলো বুয়াকে দিয়ে দিলাম।
আদা বিক্রেতা, পেঁয়াজ বিক্রেতা, নুডুলস বিক্রেতা অথবা মাছ বিক্রেতা আমাকে ঠকালো। তাতে ওদের কয় টাকা লাভ হলো? আমি তো কাউকে টাকা কম দেই নি। দামাদামিও করি নি। যা বলেছে তাই দিয়েই কিনেছি। আমার তো সৎ পথের টাকা। কষ্টের টাকা। হিসাবের টাকা। অনেক দিন ধরে ইলিশ খেতে খুব ইচ্ছা করছে। বাজারে প্রচুর ইলিশ। কিন্তু অনেক দাম। সীমাহীন দাম। আমি সারা বাজার ঘুরে ঘুরে দেখি, কেউ কেউ এক হালি, দুই হালি করে ইলিশ কিনছে। মনে মনে ভাবি তাদের কত টাকা! অনেক সাহস সঞ্চয় করে, বুকে হাত রেখে ২৭০০ শ' টাকা দিয়ে দুইটা ইলিশ কিনে ফেলি। বিরাট বড় ইলিশ। দুইটা ইলিশ আড়াই কেজি ওজন। আমার সামনেই মাপলো।
বাজার থেকে বাসার কাছে এসে কি মনে করে একটা দোকানে মাপলাম মাছ দুটো। ৫০০ গ্রাম ওজন কম। দু'টা মাছ দুই কেজি। আড়াই কেজি নয়।
সুরভি বলল, কি হয়েছে তোমার?
তুমি তো খুব সুন্দর বাজার করো। ইদানিং এমন হচ্ছে কেন? আমি বললাম, চা দাও। সুরভি চা করতে গেলো। বেশ কিছু দিন ধরে সময় খুব খারাপ যাচ্ছে। মন মেজাজ বেশ বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। চা খেয়ে আমি আর সুরভি বাইরে গেলাম। বেশ ভালো সময় কাটালাম। সুরভি যা খেতে চেয়েছে তাই খাইয়েছি। মানা করি নি। বাদাম, ঝালমুড়ি, বেলপুরি, আইসক্রীম, ফুসকা। লুচি, কাবাব, ফানটা এবং সব শেষে কোল্ড কফি। টিএসসিতে বসে বিয়ের আগের মত দুইজনে অনেক গল্প করলাম। গল্প করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। ফুলার রোড দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ঢাকা মেডিকেল পর্যন্ত গেলাম। রিকশা করে এক ঘন্টা ঘুরলাম। দোয়েল চত্বর থেকে সুরভিকে মাটির গহনা কিনে দিলাম। রাত দশ টায় বাসায় ফিরলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:০৬