১। ৭ নম্বর সনাতন সান্যাল মুভিটি সিরিয়াল কিলিংয়ের গল্প নিয়ে। চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক করেছেন- অন্নপূর্ণা বসু। পারফিউম বিক্রেতা সনাতন সান্যাল। চমতকার মুভি। চমতকার অভিনয়। চমতকাত কাহিনি। সাত নম্বরের ব্যাপারটা একটু রহস্যজনক। গল্পের ট্যুইস্ট এই সাত নম্বরেই লুকিয়ে আছে বলে ভেবে নেওয়া যেতে পারে। ছবিতে ছাপোষা সনাতন সান্যালের চরিত্রটিকে নিজের অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমে রক্তমাংসের জীবন্ত করে তুলেছেন অভিনেতা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। পুরো মুভি জুড়ে একটি প্রেমের গল্প কোথাও আছে। এই মুভির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাওলী চ্যাটার্জী, শিলাজিৎ মজুমদার, সোহেব ভট্টাচার্য, দেবদূত ঘোষ। মুভিটা আমি পর পর দুইবার দেখেছি। প্রথম বার দেখে কিছু বুঝি নাই। আসলে এটা মুভিও না, ওয়েব সিরিজ বলা চলে।
২। বিজয়া মুভিটি আমার কাছে ভালো লেগেছে। মুভিটিতে অভিনয় করেছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, জয়া আহসান, আবীর চট্টোপাধ্যায়, লামা হালদারসহ আরো অনেকে। ছবিতে চিকিৎসকের যে সংলাপ রয়েছে তা কিন্তু সাধারণ মানুষকে অন্য ভাবনার রসদ দেবে। তাঁরা ভগবান নন, কিন্তু শেষ ভরসায় তাঁরাই যে মানুষের ভগবান সেই চরিত্রটি খুবই পজিটিভ ভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের এমন কিছু ব্যথা থাকে যা তার শুধুই তার নিজের। অন্য কেউ তা বুঝতে পারে না। বুঝতে পারলেও কিছুই করতে পারে না। জয়া আহসান তার স্বামীকে নিয়ে কলকাতায় চিকিতসার জন্য নিয়ে যায়। তার স্বামী ইচ্ছে করে পালিয়ে যান। মুভি দেখুন ভালো লাগবে।
৩। মাটি দেশভাগের পরের কাহিনি। দেশভাগের গল্প আমরা সকলেই জানি। রাতের অন্ধকারে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসার গল্প। তাঁদের গ্রাম, বাড়ি, পুকুর, গাছপালা আর পুজোর স্মৃতি। এই সবকিছুই পরিপূর্ণ ছিল মাটি মুভিতে। অভিনয় করেছেন, পাওলি দাম, আদিল হুসেন, অপরাজিতা আঢ্য, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়।
কলকাতা আর বাংলাদেশের জল-মাটি-আবহাওয়ার মধ্যে বিশেষ কোনও ফারাক নেই। ফারাক নেই মাছ-ভাত আর আন্তরিকতায়। অনেক সত্যি, অনেক মিথ্যে, মনের ভেতরে পুষে রাখা রাগ থেকে হিংসা-মনোমালিন্য এই সবকিছুর ঊর্ধ্বে বোধহয় মানব সম্পর্ক। দেশভাগের আবেগঘন গল্প বলার ক্ষেত্রে যাবতীয় সংবেদনশীলতা ধরে রেখে সত্যিটাকে তুলে আনার কাজ নিপুণতার সঙ্গে করেছেন এই পরিচালক। 'মাটি'-র টান কী জিনিস, যাঁরা রাতের অন্ধকারে ভিটে-মাটি ছেড়ে এসেছেন তাঁরা সবচেয়ে ভালো বোঝেন।
৪। উমা মুভিটি মন্দ নয়। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের এই ছবিতে অভিনয় করেন যীশু সেনগুপ্ত, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, অঞ্জন দত্ত, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, রুদ্রলীন ঘোষসহ আরও অনেকে। অঞ্জন দত্ত থেকে বাবুল সুপ্রিয়, রুদ্রনীল, অনির্বাণ ভট্টাচার্য প্রত্যেকে এই ছবিতে অসামান্য অভিনয় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। এই ছবি দর্শকের মন ছুঁয়ে গেছে।
বাঙালির আবেগকে বেশ ভালোভাবেই স্পর্শ করে গেছে উমা। অনেক দর্শককে কাঁদিয়েছেও। মৃত্যুপথযাত্রী একটি শিশুর ইচ্ছাপূরণে কীভাবে অচেনা মানুষগুলো এগিয়ে আসতে পারে সেটা খুব ভালোভাবেই দেখিয়েছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। সিনেমার পর্দায় উমা এক প্রাণবন্ত কিশোরী যার প্রকৃত নাম (সারা সেনগুপ্ত)। জীবনের অন্তিম সময়ে সে লড়ে যাচ্ছে শুধু ইচ্ছে পূরণের আসায়। বাবা হিমাদ্রি সেন (জিসু সেনগুপ্ত) ও আছেন তাঁর মেয়ের সাথে। একসাথে থাকছেন সুইজারল্যান্ডে। তাদের কাছে কলকাতার দুর্গা পুজাটা ছিল একটি দীর্ঘায়ু স্বপ্ন। সিনেমাটিতে প্রধান অসঙ্গতি হচ্ছে তাঁর একমাত্র মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করবার জন্য বাবার হাতে আছে অল্প কিছু মাস।
৫। বিবাহ ডায়েরিজ চমতকার সিনেমা। কোনো ভান নেই। ভনিতা নেই। পরিচালনা করেছেন মৈনাক ভৌমিক। একটি দাম্পত্য জীবনের পূর্বে ও পরের ঘটনার নিয়ে গড়ে ওঠেছে সিনেমাটি। ২০১৭ সালের হায়দ্রাবাদ বাংলা চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা বাংলা চলচ্চিত্র হিসাবে পুরষ্কিত হয়েছে। স্বামী স্ত্রী অন্যকম একটা সম্পর্ক। এই সম্পর্কের মধ্যেও কখনও কখনও দূরত্ব তৈরি হয়। দূরত্ব তৈরি কিন্তু ভালোবাসা কমে না। মুভিটি দেখুন ভালো লাগবে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৪:৪৮