রাত ১২ টা। তূর্ণা এক্সপ্রেস চলছে শা শাঁ করে।
বেশির ভাগ লোকজন ঘুমিয়ে পড়েছে। আর কিছু লোকজন ঘুমায় না, এরা একটু পরপর সারা ট্রেন ঘুরে বেড়ায়। আমি ক্যান্টিনে এসেছি। এক কাপ চা খাবো। জানি আমি ট্রেনের চা কখনো ভালো হয় না। কিন্তু উপায় নেই। জানালার সামনে দাড়িয়ে চা খাচ্ছি। এমন সময় একলোক এলো। মনে হচ্ছে লোকটা বেশ অসুস্থ। লোকটা কাশতে কাশতে একটা সিগারেট ধরালো। আমার কেন জানি মনে হলো, লোকটা বাচবে না। মরে যাবে। আজ রাতেই মরে যাবে। ট্রেন চিটাগাং যাওয়ার আগেই লোকটা মরে যাবে!
আমার চা শেষ।
লোকটা আমাকে বলল, দীর্ঘদিন বেচে থাকতে ইচ্ছা হয়। দুনিয়াটা অনেক সুন্দর। আমি অনেক অসুস্থ। ট্রেনে উঠার পর দুবার বমি করেছি। বুকে ব্যথা করছে। এই ট্রেন গন্তব্যে পৌছানোর আগেই আমায় নিঃশ্বাস থেমে যাবে হয়তো। আর কিছুক্ষনের মধ্যে আকাশ ফর্সা হয়ে যাবে। এই সময়টা ট্রেনের জানালার কাছে বসে থাকতে দারুন লাগে। একটু একটু করে আলো ফোটে, দুই পাশে উচু উঁচু পাহাড়। আর ট্রেন চলছে এঁকেবেঁকে। আমি ক্যান্টিনে এলাম যদি এক কাপ চা পাওয়া যায়। ভাগ্য খারাপ। ক্যান্টিন বন্ধ।
ফিরে এলাম। একটা কামরায় বেশ হইচই হচ্ছে।
কাছে গিয়ে জানতে পারলাম একলোক মারা গেছে। লোকটা আমাকে বলেছিলো, দীর্ঘদিন বেচে থাকতে ইচ্ছা করে। জীবন অনেক সুন্দর।
ভোরের আকাশ দেখা দারুণ একটা ব্যাপার।
আমি জানালার কাছে এসে দাঁড়ালাম। আকাশ ভরা মেঘ। বিজলী চমকাচ্ছে। শুরু হলো প্রবল ঝড়! লোকটা দীর্ঘদিন বেচে থাকতে চেয়েছিলেন। বলেছিলেন, জীবনটা অনেক সুন্দর।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:২২