গতকাল রাতে ব্লগার শায়মা'র পোষ্ট থেকে জানতে পারি-
আমাদের ব্লগার নুরু ভাই মারা গেছেন। নুরু সাহেবের মৃত্যু আমাকে ভীষন কষ্ট দিয়েছে। জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য হচ্ছে 'মৃত্যু'। অথচ এই মৃত্যুটা আমি সহজ ভাবে নিতে পারি না। কাল সারারাত একটু ঘুমাতে পারি নি। সারারাত ছটফট করেছি। নুরু ভাই আমার কোনো আত্মীয়স্বজন না। বা তার সাথে আমার কোনোদিন দেখাও হয়নি। ফেসবুকে তার সাথে আমার অনেক কথা হয়েছে। মোবাইলে তিনবার কথা হয়েছে। নুরু ভাইয়ের প্রতি আমার একটা অদৃশ্য টান ছিলো। সামুতে কি লিখব, কি লিখব না এবিষয়ে নুরু ভাই আমাকে পরামর্শ দিতেন। দুষ্ট ব্লগারদের কাছ থেকে দূরে থাকতে বলতেন।
সামুতে নুরু সাহেব সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন চাঁদগাজীকে।
কয়েক ঘন্টা সামুতে চাঁদগাজীকে না দেখলেই নুরু সাহেব আমাকে ম্যাসেজ দিতেন। চাঁদগাজী কোথায়? খেয়াল করতাম তিনি অস্থির হয়ে গেছেন! নুরু ভাই আক্ষেপ নিয়ে বলতেন চাঁদগাজীকে কি আবার ব্যান করা হয়েছে? আমি তাকে দুই একটা কথা বলে শান্ত করতে চেষ্টা করতাম। চাঁদগাজী এবং নুরু সাহেব সামুতে মন্তব্য নিয়ে ভীষণ মজা করতেন। একজন আরেকজনকে করা মন্তব্য থেকে বুঝা যেতে তাদের মধ্যে কত আন্তরিকতা। কত ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। আমি মুগ্ধ হয়ে তাদের দুজনের রসিকতা উপভোগ করতাম। নুরু সাহবের মৃত্যুতে ব্লগের সবাই কম বেশি দুঃখ পেয়েছেন। কিন্তু আমি জানি সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছেন চাঁদগাজী।
নুরু ভাই আমাকে এবং সুরভিকে নিয়ে ছড়া কবিতা লিখেছেন।
এমনকি সে আমার কন্যা পরী এবং ফারাজাকেও নিয়েও ছড়া কবিতা লিখেছেন। প্রায়ই খোঁজ খবর নিতেন আমার বাচ্চারা কেমন আছে? মজার কোনো কবিতা, ছড়া বা ভিডিও আমাকে দিতেন। এইভাবে ধীরে ধীরে তার সাথে আমার একটা সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। গত বছর রমজানে আমি ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলাম- আমার বাসায় একটা ইফতার পার্টি করবো। নুরু সাহেবের খুব ইচ্ছা ছিলো আমার বাসায় আসবেন। সুরভির হাতের রান্না খাবেন। আমার কন্যাদের কোলে নিয়ে ছবি তুলবেন। সেই ইফতার পার্টি আর করা হয়নি। নুরু সাহেব যখন জানলেন আমার শ্বশুর বাড়ি বরিশাল, তখন তিনি আমাকে জামাই বলে সম্বোধন করতেন।
মিরপুরে এক কমিউনিটি সেন্টারে আমাদের একটা অনুষ্ঠান হচ্ছিলো।
হঠাত মনে হলো- নুরু সাহেবকে ডাক দেই। ফোন দিলাম তাকে অনুষ্ঠানে আসার জন্য। তিনি বললেন, আমার বাসা থেকে মিরপুর অনেক দূর রাজীব। সবচেয়ে বড় কথা আমার শরীরের অবস্থা ভালো না। ইচ্ছা করলেও যেতে পারবো না। তবে শরীরটা ভালো হলেই আপনার বাসায় যাবো। সুরভির হাতের রান্না খাবো। আপনার বাচ্চাদের সাথে ছবি তুলবো। গত বছর ১৬ ডিসেম্বর নুরু ভাইয়ের মেয়ে বিয়ে হয়। তিনি আমাকে কার্ড পাঠিয়ে দাওয়াত দেন। গায়ে হলুদেও যেতে বলেন। কিন্তু আমার যাওয়া হয়নি। আমি ঘরকুনো স্বভাবের মানুষ। মানুষের সাথে ঠিক মিশতে পারি না। আলাপ জমাতে পারি না। ফলাফল দূরত্ব বাড়ে।
নুরু ভাই তার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি- আমাকে দেন।
এমন কি গায়ের হলুদের ছবিও আমাকে দেন। আমিও মাঝে মাঝে আমাদের কিছু ছবি তাকে দেখিয়েছি। যাইহোক, অনেকদিন ধরে নুরু ভাই ব্লগে নেই। চাঁদগাজীর এক অভ্যাস কোনো একটিভ ব্লগার সামুতে না থাকলেই তার খোজ খবর নেন। তাকে নিয়ে পোষ্ট দেন। আমি চাঁদগাজীর জন্য নুরু সাহেবের খোজ নিলাম। নুরু সাহেব আমাকে জানালেন তিনি খুবই অসুস্থ। বিছানা থেকে উঠে বসতেও পারছেন না। ইত্যাদি। এরপর নুরু সাহেবের আর কোনো খোঁজ খবর নেই। এদিকে চাদগাজী আবার নুরু সাহবের খবর জানতে চেয়ে পোষ্ট দিলেন। আমি তাকে বললাম, 'নুরু সাহেব সম্ভবত বেঁচে নেই'। আমার মন্তব্য দেখে চাঁদগাজী হয়তো রাগ করলেন, মাইন্ড করলেন। কিন্তু আমি অনেকটা নিশ্চিত হয়েছি বলেই- তাকে এই মন্তব্য করেছি।
'নুরু সাহেব সম্ভবত বেঁচে নেই'।
চাঁদগাজীকে এই কথা বলার একদিন আগে আমি নুরু ভাইকে স্বপ্নে দেখি। স্বপ্নে নুরু সাহেব আমার কাছে এলেন। বললেন, রাজীব কেমন আছেন? পরী, ফারাজা কেমন আছে? আমি বললাম, আপনার তো কোনো খোজ খবর নেই! চাঁদগাজী আপনার খুব খোজ খবর করছেন। নুরু ভাই বললেন, আপনিও তো আমাকে নিয়ে পোষ্ট দিয়েছেন। আমি সব জানি। নুরু ভাই হাসলেন। সুন্দর সহজ সরল হাসি। তার মুখে সমস্ত দাঁড়ি সাদা। সাদা পাঞ্জাবী পরা। হাতে একটা লাঠি। বললেন, চাঁদাগাজীকে বলবেন, আমি আর সামুতে আসবো না। আমি আর লিখব না। আমি আর কিছু পড়বো না। রাজীব আপনি ভালো থাকুন। আমি এখন অন্য দুনিয়ার বাসিন্দা। নুরু ভাই অদৃশ্য হয়ে গেলেন। তাকে বলা হলো না- নুরু ভাই আপনাকে অনেক ভালোবাসি।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:২০