পদ্মা নদীতে বজরা চলছে। সময় টা শীতকাল।
এ সময় বাতাস অতি মনোরম। নদীর মাছ, তরিতরকারী খুবই সুস্বাদু। বজরার জানালার পাশে বসে নদী দেখি। নদীর জল-কল্লোল, ছলাৎ ছলাৎ শব্দ মধুময় হয়ে কানে বাজে। আকাশে অনেক পাখি উড়ে উড়ে যায়। কয়েকটি সাহসী পাখি বজরার ছাদে এসে বসে। পাখি কিচির মিচির করে। ডিঙি নৌকায় কিছু জেলে মাছ ধরায় ব্যস্ত। পানসী নৌকা এক মাঝি বেয়ে চলেছে। সে গান গাইছে পদ্মার ঢেউ রে, মোর শূন্য হৃদয়...'.
ছোট মই বেয়ে আমি বজরার ছাদে উঠে যাই।
বজরার ছাদে এক মেয়েকে দেখা যাচ্ছে। সে কলাপাতা রঙের শাড়ি পরেছে। পিঠের উপর ছড়ানো চুল। বাতাসে তার শাড়ির আচল আর চুল এলোমেলো ভাবে উড়ছে। মেয়েটা সামনের দিকে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ হয়ে।
আমি বললাম, তোমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে! এত সুন্দর আমি আগে কখনো দেখিনি।
মেয়েটার চোখে পানি।
বললাম, তুমি কাদছো কেন?
মেয়েটা বলল, বজরা থেকে নামতেই তুমি আমায় ভুলে যাবে।
আমার ইচ্ছা করলো মেয়েটাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরি।
আকাশে থোকা থোকা মেঘ।
পদ্মার চরে শুয়ে আছে একটি দুটি কুমির। যেন মৃত কুমির। বজরা কাছাকাছি আসতেই কুমির গুলো ঝটপট নদীতে নেমে যায়। মেয়েটাকে বললাম, ওই দেখো কুমির। মেয়েটা কুমির দেখার আগেই কুমির গুলো অদৃশ্য হয়ে যায়। মেয়েটা অবিশ্বাস করে। বলে, আমি কখনও কুমির দেখিনি। কুমির যে নদীর পারে শুয়ে থাকে এ কথা মেয়েটা বিশ্বাসই করে না। বললাম, তুমি পারের দিকে তাকিয়ে থাকো নিশ্চয়ই দেখতে পাবে। মেয়েটা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। কিন্তু কুমির আর দেখা গেলো না।
কুমির দেখা না গেলেও শূশুক দেখা গেলো। শূশুক দেখে মেয়েটা আমার হাত চেপে ধরলো। মেয়েটা খুশি করার জন্য বেশ কয়েকটি শূশুক ডিগবাজি দিয়ে খেলা দেখালো।
নৌকা থামলো একটা বাজারের ঘাটে।
অনেক গুলো বক আমাদের সামনে দিয়ে উড়ে উড়ে যাচ্ছে। মাঝিরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেবে এখানে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বজরা দেখে কাছে এসে চিৎকার দিলো। একটা মাছরাঙা পাখি পানিতে ডুবে কুচো মাছ ধরে নিলো। গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি বলেই তো এত কিছু দেখতে পেলাম। কি সুন্দর! কি সুন্দর! আসলে মানব জীবনটাই সুন্দর।
নদীপাড়ে কয়েকজন মেয়ে গোছল করছে।
আমি মেয়েটাকে বললাম, চলো আমরাও লাফালাফি করে নদীতে গোছল করি। মেয়েটা বলল, আমি সাতার জানি না যে। বললাম, সাতার না জানলে কি নদীতে গোছল করা মানা?
নৌকা আবার চলতে শুরু করলো। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। এবং স্বপ্নে দেখলাম, আমি বেহেশতে চলে গেছি। বিশাল এক হল রুমে আরাম করে বসে আছি। আমার হাতে মদের গ্লাস। সামনে মদের বোতল। বোতলের গায়ে ইংরেজিতে লেখা 'ব্লাক ডগ'। এক সুন্দরী মেয়ে পায়ে নূপুর পড়ে নাচছে। মেয়েটাকে চেনা চেনা লাগছে। হ্যা মনে পড়েছে, মেয়েটা সাতার জানে না।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:২৬