
মেয়েটা স্পষ্ট বলল- আমাকে 'রেপ' করা হয়েছে।
মফস্বল এলাকার একটা থানা। সকালবেলা এক মেয়ে এসে হাজির। বয়স চব্বিশ পঁচিশ হবে। বিষন্ন মুখ। ঠোঁটের এক কোনা ফুলে রক্ত জমে আছে। মেয়েটা থানায় এসে দেখে ওসি সাহেব নেই। মাত্র দুজন কনেস্টবল আছেন। ওসি সাহেব কখন আসবে কেউ জানে না। মেয়েটা এক ঘন্টা বসে থাকলো। এর মধ্যে কনেস্টবল বলেছিলো, আপনার কমপ্লেইন বলুন। আমরা লিখে রাখছি। মেয়েটা বলল, অফিসার আসুক। আমি অপেক্ষা করছি। মফস্বল এলাকার থানা গুলো নোংরা হয়। পুলিশরা নিজেদের দায়িত্ব যথাথযভাবে পালন করে না। এমনকি অনেক পুলিশ ইউনিফর্ম পর্যন্ত পড়ে না। থানায় একটা লকাপ আছে। সেখানে দুজন আসামী ঘুমাচ্ছে।
সকাল এগারটায় ডিউটি অফিসার এলেন।
মেয়েটাকে দেখে বললেন, আজ ওসি স্যার আসবেন না। আপনার যা বলার আমাকে বলুন। এবং আপনার সমস্যার সমাধান অবশ্যই করা হবে। মেয়েটা কোনো উপায় না দেখে বলল, গতকাল রাতে আমাকে রেপ করা হয়েছে। এই কথা শুনে থানার লোকজন অবাক হয়ে মেয়েটার দিকে তাকালো। মেয়েটা বলল, আমি শহরে থাকি। একটা কর্পোরেট অফিসে চাকরি করি। অফিস তিন দিনের ছুটি। তাই আমি এই পাহাড়ি এলাকায় এসেছি। আমার শখ ফটোটোগ্রাফী। অফিস ছুটির কারনে ফটোগ্রাফি করতে আমি এই এলাকায় আসি। এবং নাইক্ষংছড়ি গেস্ট হাউজে উঠেছি। গতকাল রাত এগারোটায় আমার রুমের দরজায় কেউ একজন টোকা দেয়।
আমি জিজ্ঞেস করি কে? তখন কেউ একজন বলে রুম সার্ভিস।
মশার ওষুধ দেওয়ার জন্য এসেছি। আমি দরজা খুলতেই দেখি। মুখোশ পরা একলোক। সে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমাকে টেনে বিছানায় নিয়ে যায়। আমি একজন শিক্ষিত এবং আধুনিক মেয়ে। মুখবুঝে আমি অন্যায় সহ্য করবো না। আমি বিচার চাই। আমাকে ধর্ষন করা হয়েছে। ডিউটি অফিসার বলল, আপনি সম্ভবত ক্ষুধার্থ। কিছু খেয়ে নিন। মেয়েটা কাঁদছে। ডিউটি অফিসার নাস্তা আনতে পাঠিয়েছে। অফিসার বলল, আপনার নাম কি? মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমার- নাম নীলাঞ্জনা। অফিসার বলল, আপনার কি মনে হয়, কে আপনাকে রেপ করেছে? মেয়েটা বলল, গেস্ট হাউজে চারটা ছেলে এসেছে। এদের মধ্যে কেউ হবে।
নীলাঞ্জনা আরাম করে নাস্তা খেলো।
অনেক সময় নিয়ে চা খেলো। অফিসার বলল, আপনাকে কি চারজন মিলে ধর্ষন করেছেন? নীলা বলল, না একজন। অফিসার বলল, ঐ চারজনের সাথে কি আপনার পূর্ব পরিচয় ছিলো? নীলা বলল- না। কাল রাতে ওরা উচ্চ স্বরে গান বাজাচ্ছিলো। আমি রুমে ঘুমাতে পারছিলাম না। তখন আমি রুম থেকে বের হয়ে ওদের গান বাজাতে মানা করি। এতে ছেলে গুলো রাগ করে। শব্দ আরো বাড়িয়ে দেয়। আমার সাথে খারাপ আচরন করে। তখন আমি রাগ করে ওদের মিউজিক সিস্টেমটা ভেঙ্গে ফেলি। এরপর আমি আমার রুমে চলে আসি। ডিউটি অফিসার কন্সটেবল পাঠিয়ে গেস্ট হাউজ থেকে চারজন ছেলেকে ধরে থানায় নিয়ে আসে।
ছেলে গুলো বলে- এই মেয়েকে আমরা চিনি না।
আজই মেয়েটাকে প্রথম দেখলাম। ডিউটি অফিসার রেগে গিয়ে চারজন ছেলেকে চুল টেনে ধরে এবং থাপ্পড় দেয়। তবু ছেলেগুলো বলতে থাকে, এই মেয়েকে আমরা চিনিই না। কখনও দেখি নাই। আর রেপ করার তো প্রশ্নই আসে না। আমরা শহরে থাকি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। ছুটি কাটাতে এসেছি। সেক্স করার ইচ্ছা হলে- এখানে অনেক মেয়ে ভাড়া পাওয়া যায়। তাহলে রেপ করতে যাবো কেন? ডিউটি অফিসার গেস্ট হাউজের ম্যানেজারকে ডেকে থানায় নিয়ে আসে। গেস্ট হাউজের ম্যানেজার বলল- না এই মেয়েকে চিনি না। এই মেয়ে আমাদের গেস্ট হাউজে ছিলো না। এদিকে নীলাঞ্জনা সমানে কেঁদেই চলেছে।
(দ্বিতীয় পর্ব আগামীকাল।)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:২৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


