somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চার সর্বশ্রেষ্ঠ জান্নাতী নারী ও একটি পর্যালোচনা

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আল্লাহর রসুল (স) একবার চারটা দাগ কেটে সাহাবীদের (রা) জিজ্ঞেস করলেন
” তোমরা কি জানো এগুলো কি?” সাহাবিগণ উত্তর দিলেন ” আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভাল জানেন” ।
রসুল (স) বললেন ” সর্বশ্রেষ্ঠ চার জান্নাতি নারী হল
1-খাদিজাহ বিনতে খুআইলিদ,
2- ফাতিমাহ্ বিনতে মুহাম্মাদ(সা)
3- মারিয়াম বিনতে ইমরান ( ঈসা আর এর মা ) এবং
4-আসিয়াহ্ বিনতে মুযাহিম ( ফেরাউনের স্ত্রী) ।

খাদিজাহ (রা )হল প্রথম ব্যক্তি যিনি আল্লাহর রাসুলের প্রতি ইমান এনেছিলেন। কেন তাকে সর্বশ্রেষ্ঠ নারীদের একজন বলা হয়েছে? এটা কি তাঁর ব্যবসায়িক সাফল্যের জন্য?
নাকি তাঁর জ্ঞানের জন্য?
ঠিক কি কারণে তাঁকে এই উপাধি দেয়া হয়েছে তা নিয়ে আমাদের গভীর ভাবে চিন্তা করা দরকার।
বিশেষ করে আমাদের মা -বোনদের।
আমরা যদি এই চার মহীয়সী নারীর জীবন পর্যালোচনা করি তাহলে তাদের মধ্যে দুটি বিষয়ের মিল দেখি –
প্রথমত:
তাঁরা অত্যন্ত শক্তিশালী ইমানের অধিকারী ছিলেন। তাঁদের ইমান ছিল সর্বোচচ পর্যায়ের । এটা হল সেই রকম বিশ্বাস যাতে কোন ভাবেই চিড় বা ফাটল ধরানো যায়না।
যে অন্তরে বিশ্বাস আছে সে অন্তর চোখের দেখা, কানের শোনা কে উপেক্ষা করে তাঁর বিশ্বাসকে প্রাধান্য দেয়।
তাঁর কল্পনায় শুধুই থাকে বিশ্বাস । আর এঁদের সকলের ইমান যে বিশ্বাসের অনেক উঁচু পর্যায়ে ছিল ,এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

ফিরাউনের স্ত্রী , আসিয়াহ ( আ ) উদাহরণ ধরুন-
একজন মহিলা পৃথিবীতেে যা চাইতে পারে তার সবই তাঁর ছিল। আরামদায়ক জীবন, ধন সম্পদ, ধনী ও প্রভাবশালী স্বামী, ক্ষমতা, দাসদাসী, খাদেম। কিন্তু ইমানের স্বার্থে, আল্লাহর জন্য তিনি এর সবই পরিত্যাগ করতে রাজি ছিলেন।
তিনি বাস করতেন সে সময়ের সর্বোৎকৃষ্ট প্রাসাদে। কিন্তু তারপরও তিনি আল্লাহ সুবহানা তাআলার কাছেো দুয়া করেছিলেন –
আর ঈমানদারদের ব্যাপারে ফেরাউনের স্ত্রীর উদাহরণ দিচ্ছেন –
যখন সে দোয়া করলো, ”
হে আমার রব, আমার জন্য তোমার কাছে জান্নাতে একটি ঘর বানিয়ে দাও …!
(66:11)
আমাদের বুঝতে হবে আসিয়াহ(আ) একটি অত্যন্ত বিষাক্ত পরিবেশে ছিলেন, যা ছিল সব দিক থেকেই ইমানের পরিপন্থী। আল্লাহর শত্রুদের সাথেই ছিল তাঁর বসবাস। কুফরি শক্তিকে উপেক্ষা করে নিজেকে আল্লাহর পথে অটুট রেখে তিনি ইমানের এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন ।
আমরা অপর তিন জনের জীবন পর্যালোচনা করলেও একই রকম বলীয়ান ইমানের দৃষ্টান্ত দেখতে পাই।

তাদের মধ্যে দ্বিতীয় যে ব্যপারটি ছিল তা হলো-

তাঁরা সর্বশ্রেষ্ঠ মা অথবা স্ত্রী ছিলেন।
( অবশ্য এই ব্যপারে নারীবাদীদের এবং আমাদের সেসব বোনদের যারা নারীবাদীদের আদর্শে প্রভাবিত তাদের আপত্তি থাকতে পারে।)

মরিয়ম (আ ) বড় করেছিলেন ঈসা( আ)কে আর আসিয়াহ্ (আ)বড় করেছিলেন মুসা (আ)কে ।
মা খাদিজাহ (রা) কে আল্লাহ এত মর্যাদা দিয়েছেন তা কিন্তু এই জন্য নয় যে তিনি অনেক সফল ব্যবসায়ী ছিলেন।
বরং তিনি ছিলেন আল্লাহর রসুল মুহাম্মদ (স) এর অসাধারণ এক সহধর্মিণী। আল্লাহর রাসুলের (স) যখনি প্রয়োজন, তখনি তিনি পাশে পেয়েছিলেন খাদিজাকে(রা)কে ।
ইসলামের শিশু অবস্থায় সবচেয়ে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন মা খাদিজা ( রা)।
আল্লাহর রসুলের (স) নবুয়তের শুরুতে সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতিতে অবিচল সাহস আর প্রেরণা দিয়েছেন মা খাদিজাহ্ (রা)।
রসূল ( সা) কে একজন অভিভাবকের মতো আগলে রেখে হেরা গূহায় ধ্যান রত অবস্থায় কি অকৃত্রিম বন্ধুর মতো সেবা করেছেন সে ইতিহাস অনেকেরই জানা ।

আর ফাতিমা(রা) ছিলেন রসূল ( সা ) সবচেয়ে ছোট ও আদরের কন্যা এবং আমিরুল মু’মিনীন আলীর (রা) সহধর্মিণী।
আলী অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করতেন। ঘরের কাজ করতে ফাতিমাকে(রা)কে অনেক কষ্ট পেতে হত।
আটা পিষতে পিষতে তাঁর কোমল হাতে কঠিন ক্ষত হয়ে গিয়েছিল । অথচ তিনি ছিলেন সর্ব শ্রেষ্ঠ রাসূল এবং তৎকালীন মদিনা ইসলামি রাষ্ট্রের কর্ণধারের সম্মানিত কন্যা!
একবার আলী (রা ) এর ইচ্ছায় তাঁরা আল্লাহর রাসুল (স) এর কাছে একজন ভৃত্য প্রার্থনা করলেন।
আল্লাহর রসুল (স) তাদের জবাবে বললেন আমি তোমাদের এরচেয়েও উত্তম কিছু শিখিয়ে দিচ্ছি।
তোমরা শুতে যাবার আগে 33 সুবহানাল্লাহ ,
33 বার আলহামদুলিললাহ এবং
34 আল্লাহু আকবর পড়বে ।
ফাতিমাকে আল্লাহর রাসুল (স) অত্যন্ত ভালবাসতেন।
তিনি বলেছিলেন ফাতিমা আমার দেহের অংশ,
সে যাতে খুশি হয় , আমিও তাতে খুশি হই। সে যাতে কষ্ট পায়, আমিও তাতে কষ্ট পাই। ফাতিমা(রা) ছিলেন আল্লাহর রাসুলের (সা) অত্যন্ত আদরের সন্তান।
তিনি পৃথিবীতেই জাননাতের সু- সংবাদ পেয়েছিলেন । তিনি হবেন জাননাতের নারীদের কর্ণধার! সুবহান আললাহ!
তাঁর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত একমাত্র তিনি ই ছিলেন তাঁর জীবিত সন্তান ।

আল্লাহর রাসুল (স) চাইলে ফাতিমা( রা)কে একজন কেন, দশ জন খাদেম দিতে পারতেন । কিন্তু তিনি তা না করে ফাতিমাকে(রা) কে উপদেশ দিলেন, ঘরের কাজ নিজের হাতে করে যেতে।
আর হয়তো এই কারণেই ফাতিমা (রা) হয়ে উঠলেন চার সর্বশ্রেষ্ঠ নারীদের একজন।
জ্ঞানের দিক থেকে যদিও মা আয়েশা (রা )খাদিজাহ(রা) ও ফাতেমার (রা )উপরে, কিন্তু মর্যাদার দিক থেকে উনি খাদিজাহ(রা) ও ফাতেমার(রা) সমকক্ষ ছিলন না।
আমাদের বোনেরা, আপনারা যখন আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করবেন তখন আপনাদের কিসের উপর বেশি প্রাধান্য দেয়া দরকার তা ঠিক করে নেবেন ।
তথাকথিত নারীবাদীরা আপনাদের কে জাগতিক ব্যপারে কিছুটা সাহায্য করলেও আখিরাতে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করতে পারবে না ।
আপনারা রক্ষা পাবেন আললাহ সুবহানা তাআলার সন্তুষ্টির কারণে !
আমি এ কথা বলছিনা যে আপনারা জ্ঞান ও ডিগ্রি অর্জন করবেন না বা ইসলামের ও সমাজের উন্নয়নের জন্য কাজ করবেন না, কিন্তু কিসে আল্লাহ সুবহানা তাআলা আপনাদের সবচেয়ে বেশি মর্যাদা দিয়েছেন এবং কিসে আপনাদের ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ সাধিত হবে ,সেই দিকটা খেয়াল রাখার চেষ্টা করবেন! Please! ***
আললাহ সুবহানা তাআলা আমাদের সবাই কে হেদায়েতের আলো দান করুন ।
আমীন! ***
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৩১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×