আপনাকে যদি বলা হ্য় যে, আপনার শৈশব, কৌশোর আর যৌবন এই তিন সময়র মধ্যে কোন সময় আপনার সবচেয়ে প্রিয়? আপনি নিশ্চই চিন্তায় পড়ে যাবেন। কিন্তু আমি দ্বিধাহীন ভাবে বলতে পারি আমার জীবনে শৈশব হল সবচেয়ে প্রিয়।
আমার শৈশব জীবন নিয়ে লেখার শখ অনেক দিনের। অনেক ডায়রি কেনা হয়েছে এই পর্যন্ত, কিন্তু লেখা হয়ে উঠে না। ব্লগে লেখার একটা কারণ হচ্ছে যে আমি আমার সেই সব দিনগুলোকে একটু একটু করে লিখে ফেলব। যখন যা মনে পড়ে। সব হয়তো এক সাথে মনে পড়বে না। তবুও যেন আমার পরবর্তী প্রজন্ম কে বলতে পাড়ি আমাদের সময় এই ছিল।
আমার জন্ম কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে। বাবা, মায়ের চাকরীর সুবাদে সদরেই বড় হয়েছি। আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে শহর আর গ্রামের মধ্যে ফারাকটা এত প্রকট ছিল না। তাই গ্রামের বাড়ী বাজিতপুর আর কিশোরগঞ্জ দুই জায়গার ফারাক বুঝতে পারতাম না। আমাদের প্রাইমারী স্কুলে দুই ভাগে ক্লাস হত। ক্লাস ৩ পর্যন্ত ৩টা বই, আর ৫ পর্যন্ত ৬টা বই। থ্রী পর্যন্ত ক্লাস শেষ হত বেলা ১২টায়। আর ৫ এর ৪টায়। আমি তখন ২ বা ৩ তে পড়ি। স্কুল ছুটিটা তখন মনে হত এক রকম উৎসবের মতো। কে আগে স্কুল থেকে বের হতে পারবে সেটাও একটা খেলা। তো এক দিনের কথা মনে পড়ে , আমার স্কুল যখন ছুটি হল তখন আকাশে ঘন কাল মেঘ। ঘোর বর্ষাকাল শুরুর আগের সময় টা। স্কুল থেকে আমাদের বাসা ৫ মিনিটের হাটাঁর পথ। কিন্তু দৌড়ে এসেও বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে পারলামনা আমি আর আমার বইগুলো। আমি বড় হয়েছি আমার দিদার কাছে। তাই বাসায় আসার পর এই ভর কালবৈশাখীতে আমি মনের আনন্দে ভিজতে বের হয়ে গেলাম, কারণ দিদাকে এত ভয় পেতাম না। মা আমি যেই স্কুলে পড়ি সেই স্কুলের টিচার। আর বাবা এই সময়ে অফিসে। তাই আমি তখন স্বাধীন। এই সব দিনের প্রথম কাজ হল আমার ফল চুরির সাথী রানাকে খুজে বের করা। সে আমার পাশের বাসায় থাকে, আমার সাথেই পড়ে, সম্পর্কে আমার মামা। তার স্পেশালিটি হল সে নতুন নতুন জায়গা খুজে বের করা। কোন আম গাছে আম ধরেছে, কোথায় বড়ই গাছ আছে, কোন বড়ই তিতা না মিষ্টি না টক তা তার নখ দর্পে। তার সাহায্য ছাড়া আমি কয়েক বার একা একা যাবার চেষ্টা ও করেছি বেশি লাভের আশায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লাভ হয়নি। বরং অপরাধ বোধ কাজ করেছে। তাই ঐ দিন আমি আর ও আমাদের পাড়ার মানব বাবুর গাছের আম পাড়তে চলে গেলাম। প্রচন্ড বাতাসে আম গুলো যেন বড়ই এর মত পড়ছিল। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল যেন আমাদের উপর গাছটাই ভেঙ্গে পড়ে। তবুও ক্ষান্ত দিলাম না। মুহূর্তের মধ্যে আমরা আমাদের ব্যাগ ভরে ফেললাম আমে। সেই দিন যে আনন্দ হয়েছিল তা আজ এত বছর পর লিখে প্রকাশ করতে পারছিনা। এর পর আমরা প্রতিবার ঝড় বা বৃষ্টি হলেই যেতাম কিন্তু ঐ দিনের মত আর কোন দিন ও পাইনি।
.....চলবে