সরারচর নামার পর আমরা রিক্সা নিতাম বাড়ীর উদ্দ্যেশে। গ্রামের নাম ওসমানপুর। ভাড়া ২০ টাকা। আমি বসতাম বাবার কোলে, আমার বোন বসতো মার কোলে। রাস্তার ৩ ভাগের ১ ভাগ ছিল কাচাঁ মাটির রাস্তা। বাড়ী যাবার পথে রাস্তার দুপাশে পড়ত আগুন জ্বলা শিমুল ফুল গাছ, একাধিক ইটের ভাঁটা, একটা শ্মশান, পাট আর আখের ক্ষেত। একটা বড় ব্রিজ ছিল যেখানে আমাদের সবার নামতে হত, রিক্সা ঠেলে উঠাতে হতো। পথ যেন আর শেষই হতে চাইতো না। আমরা ২ ভাই বোন শত প্রশ্ন করতাম বাবা কে, আর কত দুর ঠাম্মার বাড়ী? আমাদের বাড়ীর নাম ছিল বাবুর বাড়ী। আশেপাশের সবাই চিনত এক নামে। রিক্সাউয়ালারা এই নাম বললেই চিনত, কারণ আমাদের বাড়ী ছিল অত্র এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বড় বাড়ী। কাচাঁ রাস্তায় আমাদের রিক্সা ঢুকলেই আশেপাশের বাড়ীর সবাই কুশলাদি জানতে চাইতো, কতদিন থাকবো, কেমন আছি এই সব। তখনকার অধিকাংশ বাড়ীগুলোতে বাশঁঝাড় ছিল। দিনের বেলাতেই কেমন গা ছমছম করতো। রাতে বের হবার তো প্রশ্নই উঠেনা। আমাদের গ্রামে তখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ পৌঁছায় নি। যাকে বলে সভ্যতা বিবর্জিত এলাকা।
রিক্সা বাড়ীর দুয়ারে পৌঁছানো মাত্রই আমার কাজ ছিল দৌড়ে গিয়ে ঠাকুরমার কোলে উঠে পরা। আর প্রতিবারই ঠাকুর মা বলত, " আমার মানিকটা কত বড় হয়ে গেছে "। আমি ঐ মূহুর্তে নিজেকে অনেক বড় ভাবতে শুরু করতাম এবং কোল থেকে নেমে পড়তাম। দ্বিতীয় কাজ ছিল সারাবাড়ী এক দৌড়ে ঘুড়ে দেখে আসা, সব ঠিকঠাক আছে কিনা।
আমাদের ২টা গরু ছিল। কাল একটা গরু দুধ দিত। গরুর খাবারের জন্য রাখা খড়ের গাদা ছিল আমার খেলার সামগ্রীগুলোর মধ্যে অন্যতম। এরি মধ্যে পাশের শেখবাড়ির ওসমান চলে আসতো আমার কুশলাদি জানতে। শহড়ের চাকচিক্য দেখে প্রথমে একটু হকচকিয়ে গেলেও অতি অল্প সময়ের মধ্যে আমার সাথে মিশে যায় সে। তারপর আমার দাদু কে গিয়ে প্রনাম করতাম সাথে আব্দার দোলনা ঝুলিয়ে দেবার, কারণ গরু দেখাশুনা করত দাদু আর দোলনা ঝুলানোর আবশ্যক উপাদান গরু বাঁধার দড়ি পাওয়া যেতনা তার এপ্রোভাল ছাড়া ! শেষ পর্যন্ত দাদুকে রাজি কারানো যেত সহজেই, উনি আমাদের অনের আদর করতো। তাঁর কাছেই প্রথম আমরা শিখেছি, ডোনট ঊচ্চারণটা ভুল, শুদ্ধটা হবে ডুনট। ঊনি বলতো ঊনি নাকি এন্ট্রান্স পাশ। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানেও বুঝতে পারতাম দাদু অনেক জানে। আজও বুঝতে পারি না, সভ্যতা বিবর্জিত এক গ্রামে নিভৃত এক মানুষ আজ থেকে ২০ বছর আগে শুধু অন্যের জন্য নিজের সারাটা জীবন পাড় করে দিল কিভাবে কিছুই না করে বোনের সেবা শুশ্রুষায়?
আমার ঠাকুরমা বিধবা ছিলেন। ঠাকুর দাদা মারা গিয়েছে আমার বাবার বয়স যখন ১৮ বছর। আমার বাবা তখন থেকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। বাবা যখনি সময় পেত আমাদের শিখাত যে তোমার ৫ পূর্ব পুরুষের নাম মনে রাখার চেষ্টা করবে। কারণ আমার ঠাকুর দাদা আমার বাবাকে ৫ পুরুষের নাম শিখিয়ে গেছেন। সেই হিসাবে আমি জানি ৭ পুরুষের নাম। আমার থেকে শুরু করলে নাম গুলো হয়:
১। রাজীব মিত্র
২। অসিত মিত্র
৩। হেরম্ব মোহন মিত্র
৪। পিয়ারি মোহন মিত্র
৫। দেবপ্রসাদ মিত্র
৬। মহেশ মিত্র
৭। রামকানাই মিত্র
আমি ও চাই আমার পূর্ব পুরুষদের স্মৃতি ধরে রাখতে, অন্তত নাম গুলো মনে রাখতে। এক দিন আমর%