এই নিয়ে ৩ বার লেখাটা লেখতে হচ্ছে। কারণ এর আগে ২ বার লেখার পর পোষ্ট কারার পর গায়েবা হয়ে গিয়েছিল লেখা। জানি না এর কারণ কি? তাই স্বভাবতই স্পনটিনিটি নাই এই লেখায়। গত কাল ভাবলাম শালা লেখবই না আর। এত কষ্ট করে সময় বের করে লেখার পর মুছে গেলে বা না থাকলে কেমন মেজাজ খারাপ হয় বলেন? যাই হোক আজকে মনটা শান্ত হয়েছে। আজ ভাবলাম এখন না লেখলে ব্যপারটা অন্যের উপর রাগ করে মাটিতে ভাত খাবার মত হয়ে যাবে।
যাই হোক আমরা সরারচর নেমে বাড়ী যাবার জন্য রিক্সা ঠিক করতাম। ভাড়া ২০ টাকা। গ্রামের নাম ওসমানপুর। দূরত্ব ১০ মাইল। আমাদের বাড়ীর নাম ছিল বাবুর বাড়ী। তাই যে গুটি কয়েক রিক্সা স্টেশানে অপেক্ষা করত তার বেশীর ভাগই চিনতো। রিক্সায় আমি বসতাম বাবার কোলে, আর আমার বোন বসতো মার কোলে। ভাগ করাই ছিল। আমি বড়। ওজন বেশি। রাস্তার ৪ভাগের ৩ ভাগ পাকা আর ১ ভাগ কাঁচা। পাকা রাস্তা পার হবার সময় দুই ধারে পড়ে আগুন লাল শিমুল ফুল গাছ, চারদিকে অবারিত ধান ক্ষেত, একটা শশ্মান। শশ্মানের কথা মনে থাকার কারণ হচ্ছে প্রতিবার এর সামনে দিয়ে যাবার সময় বাবা আমাদের তাঁর গল্প শুনাত। কোন এক রাতে এর সামনে দিয়ে যাবার সময়ে ভয় পাবার গল্প। কাঁচা রাস্তায় পৌছালে আমাদের কুশলাদি জানতে চাইতো আশে পাশের বাড়ীর লোকজন। আমাদের গ্রামে তখন কোন ইলেক্ট্রিসিটি ছিল না। যাকে বলে অজো পাড়া গাঁ। অধিকাংশ বাড়ীর সামনে বা পিছনে ছিল বাঁশ ঝাড়। দিনের বেলাতেও কেমন যেন জমাট বাঁধা অন্ধকার মনে হতো। রাতে কাওকে জরুরী কাজ না থাকলে বের হতে দেখিনি। বাড়ীর আশেপাশে আসার আগে আগে আমি আর আমার বোন রেডি হতাম কে আগে দৌড়ে ঠাকুরমার কোলে উঠতে পারবো। স্বভাবতই আমার সাথে আমার বোন পেরে উঠতো না। আমিই এক দৌড়ে ঠাকুরমার কোলে উঠে পড়তাম। প্রতিবার ই উনি আমাকে চুমু খেয়ে বলতো " আমার মানিক কত বড় হয়ে গেছে "। আর আমি তখনি বড় হবার প্রমান স্বরুপ কোল থেকে নেমে পড়তাম। কারণ বড়রা কোলে চড়ে না।
আমার এই বাড়িটা ছিল আমার ঠাকুরমার। আমার দাদার বাড়ী ছিল নারায়নগঞ্জে। উনি চাকরি করতেন আদর্শ কটন মিলে। উনি মারা যান বাবার ১৮ বছর বয়সে। আমি তাকে দেখিনি। পরিবারের ব্ড় ছেলে হবার কারণে সংসারের দায়িত্ব পড়ে বাবার কাঁধে। বাবা চাকরি নেয় ঐ মিলে। তখন চাকরির সাথে সাথে পড়াশুনা শুরু করে নারায়নগঞ্জ তুলারাম কলেজে। তাই আমাদের অরিজিন ঢাকার আশেপাশেই ছিল ধরা যায়। আমার বাবার মুখে শুনেছি আমার দাদা আমার বাবাকে ৫ পূর্ব পুরুষের নাম বলে গেছেন। সেই হিসেবে আমাকে নিয়ে আমার জানা আছে ৭ পুরুষের নাম। আমি নিজের ও এত নাম মনে থাকে না। তাই স্মৃতির পাতা থেকে লিপিবদ্ধ করাটাই শ্রেয় মনে করছি। আমার থেকে শুরু করলে নাম গুলো এমন হয়:
৭ পুরুষ :
১। রাজীব মিত্র
২। অসিত মিত্র
৩। হেরম্ব মোহন মিত্র
৪। পিয়ারি মোহন মিত্র
৫। দেবপ্রসাদ মিত্র
৬। মহেশ মিত্র
৭। রামকানাই মিত্র
এই নাম গুলো আমার কাছে শুধু নামই মনে হয় না। এগুলো কে মনে হয় আমার এক একটা ইতিহাস, এক একটা সময়, পরিবার। তাই আমিও নাম গুলি মনে রাখতে চাই। আমি খুঁজে ফিরে আমার শিকড়ের সন্ধান, হাজার বছর আগে যেখানে আপনি ( যে পড়ছেন ) হয়তো আমার ভাই, কাকা, মামা অথবা আমিই!