আমরা ঠাকুরমার বাড়ী যেতাম কোন না কোন ছুটির সময়। যেমন গ্রীষ্মের ছুটি বা শীতের ছুটিতে। তো কোন এক গ্রীষ্মের ছুটিতে বাড়ী গিয়েছি। রাতে ঘুমানোর সময় ঘরের দরজাটা শুধু লাগানো থাকতো। সব জানালা খোলা থাকত। বাড়ীতে বিদ্যুৎ ছিল না, বাতাস আসতো জানালা দিয়ে। আর কোন দিন শুনিনি বাড়ীতে চুরি হতে। তখন ছিল আমের সময়। হঠাৎ রাতে ঘুম ভাঙল ঝড়ের শব্দে আর বৃষ্টির ঝাপটায়। আমি ঘুমের ঘুড়ে হাতড়ে খুজছি ঠাকুরমা কে। তখন দেখলাম ঘরের দরজা খুলা। ঝড়ের বাতাসে আম পড়ছে উঠানে। ঠাকুরমা পাত্র নিয়ে গেছে আম কুড়াতে। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছি ঠাকুরমার আম কুড়ানোর দৃশ্য। মুহূর্তের মধ্যে ঠাম্মা নিয়ে আসল ঝুড়ি ভর্তি আম। আমি আম খাবার অদম্য ইচ্ছাটা আর দমিয়ে রাখতে পারি নি ঐ রাতে। মধ্য রাতে আমি আম খাওয়া শুরু করেছিলাম।
চিন্তা করে দেখুন, আপনি কি কখনো মধ্য রাতে আম খেয়েছেন?
আমার কাছে ঐ রাতের স্মৃতি এখনো এত পরিষ্কার যে এখনো মাঝে মাঝে আমি ঐ রাতের বৃষ্টির শব্দ শুনতে পাই চোখ বন্ধ করল।
প্রতিবার বাড়ী থেকে যখন আসতাম কিশোরগঞ্জে, ঠাকুরমা বস্তা ভর্তি করে আম আর কাঁঠাল দিয়ে দিত। ১০ টা গাছের আম খেয়ে শেষ করা যেত না। তাই ঐ আম দিয়ে ঠাকুরমা আম স্বত্ব বানিয়ে রাখতেন। পরের বার বাড়িতে গেলে যেন দিয়ে দিতে পারেন।
আর এখন যখন আমের সিজন আসে তখন আমার অনেক কষ্ট হয়। বাজারে গিয়ে যখন ৬০টাকা কেজি দরে আম কিনি, তখন আমার বুকে বাঁধে।
আমার নতুন দিন শুরু হয়। দাঁত মাজতে মাজতে পুকুর পাড় ঘুরে আসি। মুখ ধুই পুকুরের পানিতে। একটু পর যে পুকুর থেকে মাছ ধরা হবে। বাড়ীতে তখন ঠাম্মা সকালের খাবার রেডি করছে। আইটেম- ঘরে বানানো মুড়ি, নারকেল, ঘি, আম, কাঠাঁল আর চা।
সকালের প্রধান কাজ গুলোর মধ্যে একটা ছিল গরুর দুধ দোহানো দেখা। দাদু করতো কাজটা। খুব মজার ব্যপার ঘটত তখন। আমার দায়িত্ব ছিল বাছুর ধরে রাখা। গরুর দুধ দোহানোর ব্যাপারটরা বুঝতাম না তখন। প্রথমে বাছুর কে আলাদা করে রাখা হতো। সব রেডি করে বাছুরটাকে ছাড়া হতো। আমার কাছে ব্যাপারটা ছিল তখন অমানবিক। গরুর দুধের প্রকৃত দাবিদার হল বাছুর। তকে কেন খেতে দেয়া হবে না ? তার উপর আরো বড় অমাবিক লাগত যে দুধ দোহানোর আগে মিনিট খানেক বাছুর কে দুধ খেতে দিতে হয়। তা না হলে নাকি গরুর বানে দুধ আসেনা। বাছুরটা যখন খাওয়া শুরু করে তখনি ঐটাকে সরিয়ে নেয়া হয়। আপনিই ভাবুন, একটা ৮ বছরের বালকের মনের অবস্থা ! যারা দুধ দোহানো দেখেছেন তারাও কি এই বিষয়টা লক্ষ্য করেছেন?
দুধ জাল দেবার পর আমার জন্য বরাদ্দ ছিল স্টিলের গ্লাসে আধা গ্লাস সর। কারণ আমি দুধ খেতে চাইতাম না । এখনো আমি দুধ খেতে পারিনা।
ছোট কাকাকে এরি মধ্যে আমি তাগদা দিতে থাকতাম কখন মাছ ধরব পুকুর থেকে?
.....চলবে।