বিশাল একটা ঘর, ঘরের এক কোনে এক রাজকন্যে। ঘরের এক মাথা থেকে আরেক মাথা দেখা যায় না। ঘরের সামনের বিশাল বাগানের দিকে তাকালে দেখা যায় সাদা সাদা ঘোড়া, ঝকঝকে আকাশ, ইতি উতি উরে বেড়ানো প্রজাপতি আর নানা রঙ্গিন পাখনা মেলা প্রজাপতি। মাঝে মাঝে ঘরের সামনের জায়গাটুকুতে দাড়ালে মিষ্টি পলকা হাওয়া এসে রাজকন্যের চুল এলোমেলো করে দেয়। ঘর ছাড়িয়ে বাগানে নামলে গাছেরা উপুড় করে পুষ্প বৃষ্টি ঝড়ায়। ফুলের রেনুর ছোঁয়ায় রাজকন্যায় গাল কখন গোলাপি কখনো স্বর্ণবরন হয়ে উঠে।
রাজকন্যায় আপন মনে, আপন ভুবনে ঘরে বেড়ায়। চাওয়া পাওয়ার সবটুকুই তার আছে। পরিবার, বন্ধু, রূপকথার মতন জীবন কি নেই তার। রাজকন্যের চাওয়ার সত্যি আর কিছু ছিল না। নাহ, একটা চাওয়া ছিল। মনের গোপনে, একদম লুকানো। মাঝে মাঝে নিজের সাথে সেই সপ্ন নিয়ে গল্প করতো। আর কেউ জানত না। সপ্ন দেখত এক রাজপুত্রের । যে একদিন সাদা ঘোড়ায় চড়ে তার এই বাগানে আসবে, তখন আকাশে পুষ্প বৃষ্টি হবে, পাখিরা তাদেরকে ঘিরে ধরবে, দখিনা হাওার ঝলকে তার চুলের গন্ধ রাজপুত্ত্রের কাছে যাবে।
মনে মনে হাসে। ভাবে না না সে জানে একদিন এমন্টাই হবে আর ঠিক তখন সে বুঝে নেবে এই তার রাজপুত্র। কিন্তু রাজপুত্র যে এখনো এল না!
দিন যায়, মাস যায়। হঠাত কে জানি আসে। একটু একটু রাজপুত্রের মত লাগে বটে কিন্তু পাখি ত গান গাইল না। সে সাদা ঘোড়ায় ও এলো না। রাজকন্যে মুখ ভার করে চোখ ফিরিয়ে নেয়। ছেলেটি কিন্তু দাড়িয়ে থাকে, অপেক্ষায় থাকে। দূর দেশের রাজপুত্র সে। এতখানি এসেছে রাজকন্যের জন্য। রাজকন্যে কেন বুঝছে না! রাজপুত্র চলে জেতে চাইছে, কিন্তু মায়াবতির মায়া তাকে জেতেও দিচ্ছে না।
রাজকন্যে হঠাত তাকায়। তার মন কেমন করে। কিন্তু কই, বাতাস তো তাকে কিছু বলছে না। নাহ, তবে এই সেই রাজপুত্র নয়। কিন্তু এই ছেলেটা এভাবে কেনো তার জন্য অপেক্ষা করে আছে! রাজকন্যে উঠে চলে যায়,রাজপুত্র দাঁড়িয়ে থাকে। কখনো হিমের ছোঁয়ায় কেপে উঠে, কখনো বা শিতল বর্ষায় অশ্রু গোপন করে। রাজকন্যায় আর আসে না। অপেক্ষায় অপেক্ষায় এক সময় রাজপুত্র ফিরে যায় তার দেশে
রাজকন্যে কিন্তু দূর থেকে প্রতিদিন ই ছেলেটাকে দেখতো। কিন্তু কন দিন কেন জানি সামনেই গেল না। মাঝে মাঝে ছেলেটার কথা মনে পড়ে। মন বধ হয় একটু কেমন কেমন ও করে। কিন্তু কাউকে বলে না রাজকন্যে।
একদিন রাজকন্যে গেল এক বিরাট রাজসভায়। শৌর্যে অনন্য অন্য কাউকে যেন দেখলো আজ। হাওয়া এসে মাতাল করল না বটে। কিন্তু মন বলে দিলো এই সেই প্রতিক্ষিত রাজপুত্র যাকে সে দেখেও সরিয়ে দিয়েছিল। রাজপুত্র এগিয়ে আসে। দুজনের দেখা হয়। কেউ কথা বলে না কিন্তু নির্বাক বাক্যালাপে না বলা সব কথা দুজনের বোঝা হয়ে যায়। রাজকন্যে এবার বোঝে হাওা আসুক বা না আসুক। মানুশটা যখন সামনে চলে আসে তখন এদের কাউকেই আর লাগে না। ভালবাসার আবেশটাই সাধারনকে করে তোলে অনন্য অসাধারন।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১১ রাত ১:৪৫