somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিভক্ত হচ্ছে ঢাকা। সিদ্ধান্তের আড়ালের রাজনীতি এবং ঢাকা ভাগ না করে কি করে উন্নয়ন করা যায়!

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অবশেষে উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন নগরী ঢাকা দ্বিখণ্ডিত হবার সিদ্ধান্ত আমাদের সংসদে পাশ হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ঢাকা দ্বিখণ্ডিত হচ্ছে না। হচ্ছে ঢাকা সিটি করপারেশন। দ্বিখণ্ডিত সিটি করপারশনের মাধমে ঢাকার অন্তর্গত ৩৬টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। সেগুলা হচ্ছে ১-২৩ নং, ৩৭-৪৭নং এবং ৫৪,৫৫ নং ওয়ার্ড।২৪-৩৬ নং, ৪৮-৫৩ নং, এবং ৫৬-৯২ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হলো ঢাকা দক্ষিন।

ঢাকার এই দিখন্ডন নিয়ে মোটামুটি সব মহলেই সমালোচনা চলছে। আর চলবেই না বা কেন? হটাত করে এক কলমের খোঁচায় পুরো ঢাকা ভাগ হয়ে গেলো। সরকার এই বিষয়ে কোন আলোচনা করলো না কারোর সাথে। একটি গনতান্ত্রিক সরকার হয়ে এক তরফা ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোল ঢাকা ভাগের।

এখন দেখা যাক কেন ঢাকা ভাগের বিপক্ষে সবাই এতো সরব!

ঢাকা ভাগের এই সিদ্ধান্তকে সবাই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে আসছে। তার কারন-
১. কোন রকম রাজনৈতিক আলোচনা ছাড়া সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

২. ঢাকা সিটি করপরেশনের নির্বাচন দীর্ঘদিনের দাবি। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে আমাদের সরকার খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। রাজনীতি নিয়ন্ত্রনের কেন্দ্র মুলত এই সিটি করপারেশনগুলো। নিরপেক্ষ নির্বাচনের ফলে দেখা গেছে চিটাগাং এ বিশাল ভরাডুবি হয়েছে এবং চিটাগাং বর্তমানে বিএনপির আওতায়। নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন ও আওয়ামীলীগের জন্য একটা শিক্ষা ছিলও। যদিও এই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ই একজন নির্বাচিত হয়েছেন তারপরেও সরকারের জন্য বিষয়টি খুব একটা সস্তিমুলক ছিলও না।এমন অবস্থায় ঢাকা সিটি নির্বাচন থেকে সরকার খুব বেশি ইতিবাচক ফলাফল আশা করতে হয়তো ভয় পাচ্ছিল।এই নির্বাচনে হারলে তা হবে সরকারের জন্য বিরাট এক ধাক্কা।

তাই এমন অবস্থায় ঢাকাকে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নির্বাচনকে কয়েক ভাবে প্রভাবিত করতে পারে-

ক. বিএনপি স্বাভাবিক ভাবেই এর প্রতিবাদ করবে। এমন ও হতে পারে তারা নির্বাচন বর্জন করবে। এর ফলে আওয়ামীলীগ ফাকা মাঠে গোল দিতে পারবে।
খ. বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ ও নেয় তবে কোন ও না কোন ভাবে অন্তত ঢাকার একটি অংশে আওয়ামীলীগ নিজেদেরকে টিকিয়ে রাখতে আপ্রান চেষ্টা করবে।
গ. মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামীলীগের মধ্যে মত পার্থক্য থাকতেই পারে। দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ায় একাধিক মেয়র মনোনয়ন দিতে পারবে ফলে আব্বহন্তরিন কোন্দল কিছুটা সামাল দেওয়া যাবে।

৩. আমাদের দেশের একটা প্রথাই বলা যায় যে যা কিছু খাওয়ার তা জাতীয় নির্বাচনের আগে খেয়ে নিতে হবে। বিভক্ত ঢাকা মানে আরও বেশি বাজেট, যার অর্থ আরও বেশি হরির লুট। এটা কোন ভাবেই অস্বীকার করা যাবে না।

৪. ঢাকা ভাগ করা কোন সাধারন বিষয় নয়। ঐতিহ্য, আর আধুনিকতার মিশেলে গড়া এই শহরের প্রশাসনকে ভাগ করার আগে সরকারের উচিত ছিলও সকল স্তরের স্টেকহোল্ডারদেরকে(যারা এই সিদ্ধান্তে প্রত্যক্ষ পরক্ষ ভাবে প্রভাবিত হবে) জানানো।। তাদের মতামত নেওয়া। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেলো ইতিহাসবিদ, পরিবেশবাদি, নগর বেবস্থাপক, এনজিও, সাধারন মানুষ, এমন কি খোদ নগর পিতা ও এই বিষয় নিয়ে সন্তুষ্ট নন। কারন তাদেরকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানানো হয় নি। এরি মধ্যে নগর প্রশাসন ভবনে চলছে তুমুল অরাজকতা। সাধারন কর্মচারী যারা রাজনীতিকে এড়িয়ে চলতে চাচ্ছেন বিষয়টি সম্পর্কে তাদের কোন রকম ধারনাই নেই।

৫. আমরা সাধারন মানুষরা শুধু জানি ঢাকার উন্নয়নের জন্য ঢাকাকে ভাগ করা হচ্ছে। কিন্তু বিভক্ত ঢাকার উন্নয়নের জন্য কি কি স্ট্রেটেজিক প্ল্যান নেওয়া হয়েছে তা আমরা কিছুই জানি না। শুধু ভাগ করলেই কিভাবে ঢাকা বদলে যাবে এটা অন্তত আমার জিজ্ঞাস্য বিষয়।


ঢাকাকে ভাগ না করে কি করে মোটা দাগে উন্নয়ন সম্ভব?


১. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন-
আমাদের সরকারের যুক্তি ঢাকার জনসংখ্যা বেড়ে যাওায় ঢাকাকে ভাগ করতে হচ্ছে। তা হলে জনসংখ্যা কমালেই তো হয়। রাতারাতি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনের সবছেয়ে কার্যকর পন্থা হোল বিকেন্দ্রীকরণ। সরকারি অফিসগুলো যতটুকু সম্ভব ঢাকা থেকে সরাতে হবে। এই জন্য সরকারি কর্মচারী কর্মকর্তাদেরকে প্রয়োজনীয় সুবিধা দিতে হবে। তাদের পরিবার নিয়ে থাকার উপযুক্ত বেবস্থা করতে হবে। আগে সরকারি কর্মকর্তারা পরিবার নিয়ে ঢাকার বাইরে থাকার ফলে যেমন এক দিকে জনসংখ্যার চাপ কম থাকত, তেমনি অন্য দিকে ঢাকার বাইরের জেলা স্কুলগুলোর মান ও ভালো ছিলও। নিজেদের সন্তানের ভালো লেখা পড়া নিশ্চিত করতেই সরকারি কর্মকর্তারা শিক্ষার মানের দিকে নজর দিতেন।

এছাড়া প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ঢাকার বাইরে নেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে।গারমেন্টসগুলোকে ঢাকার বাইরে নিতে হবে।

২. খমতায়ন-
নাগরিক সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোকে তাদের সেবা পৌঁছে দেবার জন্য যথেষ্ট লোকবল, অর্থ দিয়ে আরও সক্ষম করতে হবে। টেক্স সংগ্রহের ভার কিছুটা তাদের উপর নেস্ত করতে হবে।

৩. ওয়ার্ড কমিশনকে শক্তিশালী করা-
প্রাসাশনিক কাজগুলো ওয়ার্ড কমিশনের মাধ্যমে বিকেন্দ্রিভুত করতে হবে।

তারপরেও যদি ঢাকাকে বিভক্ত করতেই হয় তবে অবশ্যই সবার সাথে বসে কথা বলে, সবাইকে পুরো পরিকল্পনা জানিয়ে আসশস্ত করে তবেই করা উচিত। ঢাকা কারো একার শহর নয়।। এটা একটা মেগা সিটি। আমরা যারা জীবনের পুরোটা সময় ঢাকায় বড় হয়েছি যতই কংক্রিটের জঞ্জাল হোক ঢাকা আমাদের প্রানের নগরী!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:০৫
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×