somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাবির ধর্ষন বিরোধী আন্দোলনের কিছু কথা..

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই পোস্টে মন্তব্য করতে গিয়ে মনে হলো মন্তব্য নয় বরং আলাদা পোস্ট দেই। তবে এই পোস্টা পড়ে আসলে ভালো হয়।


একজন প্রত্যক্ষদর্শী এবং আন্দোলনকারী হিসাবে আমি সম্পুর্নভাবে সুমনের ব্লগের বক্তব্যের সাথে এক্মত। একে বারে নির্ভুল স্মৃতিচারন হইয়েছে। তবে দৃশ্যমান ঘটনার পিছনেও কিছু ঘটনা থাকে। সুতরাং প্রত্যক্ষদর্শনের বাইরেও কিছু থাকে। বাস্তবতার বাইরেও কিছু সত্য থাকে। নিম্ন বিষয় গুলোতে এমন এমন কিছু কথা বলা হলো।

১। জাবিতে ধর্ষন বিরোধী আন্দোলন হইসে মানে কিন্তু এইনা যে সেখান ধর্ষন বা নারী নির্যাতন বেশী হয় বা হইসে। আসলে সেখানে সবসময় এসব ব্যাপারে প্রতিবাদ বেশী হয়। নারীদের বিরুদ্ধে কোনরকম অপরাধ করে পার পাওয়া খুবই কষ্ট সেখানে, সে যত ক্ষমতাশালীই হোক। (যেমন ধর্ষন বিরোধী আন্দোলন) সেখানে নারীদের নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতা বাংলাদেশের অন্য যেকোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশী। আমি গর্ব বোধ করি সবসময় যে এখানে এভাবে প্রতিবাদ হয়েছিল এবং এখনো হয়, অথচ খারাপ লাগের অনেক মানুষের ভুল ধারনা অর্জন করা দেখে। কি ধরনে ভুল ধারনা সেটা বলতে চাই না। আশা করি বুঝে নিতে পারবেন।

২। কোন কিছু নিয়ে প্রতিবাদ/আন্দোলন করা আর সেটাকে সফল করার মধ্যে পার্থক্য আছে। যে কোন আদর্শিক অবস্থান নিয়ে বা মন্দের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যায় কিন্তু যে কোন বিষয়ে সফল হতে হলে অনেক পরিকল্পনা, কৌশল করে এগুতে হয়। এর পিছনে অনেক রাজনীতি থাকে। অনেক সময় কুট কৌশল ও থাকে। অনেক প্রোপাগান্ডা লাগে। অনেক কিছু বিসর্জন দিতে হয়। এসব বোঝার বাস্তব জ্ঞান যার আছে তারা নিম্ন লিখিত সত্য গুলো বুঝবে।

এই আন্দোলনের সময় এমন কিছু নিউজ মিডিয়াতে করা হয়েছে যা হয়তো খাতাকলমে একেবারে সত্য নয় কিন্তু আন্দোলনের স্বার্থে , চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসাবে এমন করতে হয়েছে।
ক্যম্পাসে ধর্ষন হইসে এটা যেমন সত্য তেমনি এটাও সত্য যে মানিক যে একটা খারাপ এবং ধর্ষকামী মানসিকতার লোক। আবার এও সত্য যে জাবিতে কখনই ১০০ জন ছাত্রী কে মানিক ধর্ষন করে নাই। এটা কখনই সম্ভব ছিলো না। তবে সে আর তার সাংগ পাংগরা তার শততম নারীভোগের( সে প্রেম করতো, মাগী লাগাইতো, আবার চান্স পেয়ে দুয়েকটা ধর্ষন ও করেছিলো যার মধ্য আবার ছাত্রী ছাড়াও গার্মেন্টস কর্মী ছিলো) জন্য নিজেরা মিষ্টি খাওয়া খাওয়ি করেছিলো এবং এই ঘটনাকেই এমনভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যাবহার করা হয়েছিলো যাতে আজ সত্য হিসাবে প্রতিস্ঠিত জাবিতে ধর্ষনে সেন্চুরী হয়েছে। যাই হোক আমি এখানে প্রতিস্ঠিত সত্যকে বদলানোর জন্য তর্কের অবতারনা করতে চাই না কিন্তু শুধু বলতে চাই জাবিতে কেউ কোন মেয়েদেরকে যদি টিজও করে তবে তার যে শাস্তি হয় সেটা দেশের অন্য কোথাও
হয়তো ধর্ষন করলেও হয় না।

৩। ধর্ষনের দায়ে সেই তেরজন বহিস্কৃত এর মধ্যে যেমন মানিক কুলাংগার ধর্ষনকারী ছিলো তেমনি অনেকে ছিলো যারা মেয়েদের উত্যক্ত করতো এর বেশী কিছু করে নাই আবার এমন কেউও ছিলো যে কোনদিন কোন মেয়েকে উত্যক্তও করেনি কিন্তু ঐযে রাজনীতির স্বার্থেই তারা কুরবানী হয়ে গেসিলো। সংগ দোষে লোহা ভাসে। কেউ নিরপরাধী হয়ে শাস্তি পেলে তাদের জন্য খারাপ লাগতে পারে কিন্তু এটাই বাস্তবতা ছিলো, এছাড়া আন্দোলন সফল করা যেতো না।

৪। জাবিতে ধর্ষনের সেন্চুরী হইসে , এত বড় আন্দোলন হইসে
আজ পর্যন্ত কেউ জনে না যে কে কে ধর্ষিতা। আন্দোলনের এক পর্যায়ে ভিসি এসে জমায়েত মেয়েদের বলেছিলো যে আমি এই মুহুর্তে ব্যাবস্থা নেবো শুধু আমাকে বল যে কে ধর্ষিত হয়েছে? এবং তাকে কে ধর্ষন করেছে? কারন প্রচলিত আইনে অভিযোগ আর প্রমান ছাড়া কোন বিচার করা যায় না। তখন সব মেয়েরা চিৎকার করে বললো যে আমি ধর্ষিতা ( ওখানে ৫০০ এর মত মেয়েছিলো )। আর ধর্ষিতা কখনই প্রমান করবে না যে সে ধর্ষিত হয়েছে বরং ধর্ষনকারীকেই প্রমান করতে হবে যে সে ধর্ষন করে নাই। এটাও ছিলো পুর্বপরিকল্পনার অংশ এবং এর পিছনে যে তত্ত্ব ছিলো তা হল যে প্রচলিত আইনে একজন ধর্ষিতাকে যখন কোর্টে আলামত দিয়ে প্রমান করতে হয় যে সে ধর্ষিতা তখন সে আসলে সামাজিকভাবে কয়েকশতগুন বেশী ধর্ষিত হয়। ধর্ষনের শরিরীক ব্যাপারের চেয়ে এর সামাজিক প্রভাব অনেক বেশী। সুতরাং ধর্ষনের বিচার প্রচলিত পন্থায় এবং আইনে হবে না। ধর্ষিতা কে সেটা কখনো প্রকাশ করা হবে না। বরং কারো বিরুদ্ধে যদি ধর্ষনের অভিযোগ আসে তবে তাকেই প্রমান করতে হবে সে ধর্ষন করেনি।

এখন এমতাবস্হায় কি কি হতে পারে বুঝে নিন নিজে নিজে। অনেক ধর্ষনের দায়ে বহিস্কৃত তাই এমন ভাবতেই পারে যে তার প্রতি চুড়ান্ত আবিচার হয়েছে, কিণ্তু আসলে ঘটনা যখন ঘটে তখন এভাবেই ঘটে। ১০০% সুবিচারের নিশ্চিত করার আন্দোলন সেটা ছিলোনা তা কারো কিছু করারও ছিলো না।

জাবির ধর্ষন বিরোধী আন্দোলনে অনেক নারীবাদি তত্ত্বের ব্যাবহারিক প্রয়োগ হয়েছিলো। অনেক বিশদ পুর্ব পরিকল্পনা ছিলো।অনেক রাজনীতি কুটকৌশল ছিলো। অনেক এসপিওনাজ, অনেক ক্ষমতা চর্চা ছিলো। অনেক বীপ্রতিপ স্বার্থধারী গ্রুপছিলো যারা একটি কমন স্বার্থে এক হয়েছিলো যে ক্ষমতাশালী মানিকের বিচার করতে হবে এবং তার পুরো গ্রুপকে তাড়তে হবে। এখানে ক্ষমতাসীন ছা্ত্রলীগের আরেকটি গ্রুপও জড়িত ছিলো আন্দোলনে। এমনকি মানিকের গ্রুপের মধ্যেও এমন কেউ ছিলো যারা চাইতেছিলো মানিক এখানে ফেঁসে যাক যাতে তারা লাভবান হতে পারে। কিন্তু আসলে মানিকের সাথে তারাও ফেঁসে গিয়েছিল কারন নাহয় পুরো গ্রুপকে উচ্ছেদ করা যাবে না।

অতঃপর এই আন্দোলনের কিছু সুদুর প্রসারি লক্ষ্য ছিলো যেমন সব শিক্ষা প্রতষ্ঠানের জন্য ধর্ষন বিরোধী নীতিমালা তৈরী করা যেটা নিয়ে এখন পর্যন্ত আন্দোলন এবং কাজ হচ্ছে । অতএব জাবির এই আন্দোলন খুব সহজ বিশ্লেষ্য বিষয় নয় যা থেকে যে কেউ যে কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে পারে। তবে যে কোন বিচারেই এটা একটা মহান ঘটনা যার কৃতিত্ব জাবির সেসব সাহসী প্রতিবাদ মুখর ছাত্রীদের যারা সামনে এগিয়ে বলতে পরেছিলো যে আমরা সকলেই ধর্ষিতা। জবির এই মুক্তমান, সাহসী ও স্বাধীনচেতা ছা্ত্রীদের জন্যই আজো শিবির এই ক্যম্পাসে ঢুকতে পারেনি।

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:২৩
২১টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×