somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসমাপ্ত গল্প................

০৫ ই জুন, ২০১১ রাত ১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গভীর রাত হবে হয়তো,সময় জানা নেই।খুব বেশি গভীর?হয়তো না, শীতের রাতের জন্যেও এমন মনে হতে পারে।আমি একা দাড়িয়ে আছি একটা নির্জন রাস্তায়।শীত নিবারনের জন্যে কিছুই নেই আমার কাছে,সে বোধটাও নেই এখন।আজ বড়ই অনুভূতিশুন্য আমি।

জানিনা কোথায় যাবো, আসলেও কি যাবার মতো কোনো জায়গা আছে আমার? বাবা-মা,হ্যা তারা তো আছেন,কিন্তু কিভাবে ফিরে যাবো তাদের কাছে?ফিরে যাবার মতো কোনো পথ কি রেখেছি আমি?আর যদিওবা ফিরে যাই কি উত্তর দিব তাদের, কেন ফিরে আসলাম?

মা, আমি বরাবরই তোমার সে লক্ষী মেয়েটিই ছিলাম।কখনো তোমার কথার অবাধ্য হয়েছি বলে মনে পড়েনা।এজন্যেই হয়তো এযুগের মেয়ে হয়েও তোমার কথামতো তোমারি পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করেছিলাম না দেখেই,কিছু না জেনেই।শুধু তোমার খুশির কথা চিন্তা করে মা।মা আমি এখনো তোমায় ওতোটাই ভালবাসি,সত্যি বলছি।তুমি শুনতে পাচ্ছনা মা?আমি মেঘা,আমি তোমার সেই আহ্লাদী একমাএ মেয়ে মেঘা।


ছেলে তুমি ভালই খুজেছিলে।আরাফ,দেখতে ভাল,ভাল চাকুরে। সে ভালোটা যে শুধু উপরেই ছিল,কিন্তু ভেতরটা যে কতোটা কূৎসিত,কতো ভয়ংকর, সে টা যদি তুমি বুঝতে,তাহলে হয়তো মা আজ আমি তোমাদের থেকে মুখ লুকিয়ে পালিয়ে বেড়াতাম না এভাবে।আমি সত্যিই বড় বেশি স্বার্থপর,অনেক বেশি কষ্ট দিচ্ছি তাইনা?ওই পাষন্ডটার কথা শুনলে এর চেয়ে যে আরও বেশি কষ্ট পেতে,এটা কি আমি সহ্য করতে পারতাম,বলো?

মেয়ের সুখের জন্যে কি করোনি তুমি আর বাবা?ভেবেছিলে মেয়ের সংসার সাজিয়ে দিলে হয়তো জামাইবাবাজি তুষ্ট হবে,ফলশ্রুতিতে তোমাদের মেয়েও ভালো থাকবে।কিন্তু তোমরা জানতেনা ওই সংসারে তোমাদের মেয়ে কেমন ছিল?শুনতে যে চাওনি তা না,শুনেছো কিছু অসত্য তুষ্টবানী।প্রতিমুহর্তে তোমাদের মেয়েটা যে অসহায়ত্বেব দাবানলে দগ্ধ হয়েছে, মানুষিক-শারীরিক অত্যাচারে নিষ্পেষিত হয়েছে তা কখনোই বুঝতে দেইনি তোমাদের।

তারপরও আগলে রাখতে চেয়েছিলাম একবুক স্বপ্নে গড়া,তিলে তিলে নিজের হাতে সাজানো আমার স্বপ্নের ছোট্ট পৃথিবীকে।চেয়েছিলাম সবকিছু সব অপমান সব অত্যাচার মেনে নিয়ে আমার স্বামীর সাথে থাকতে।হুমম,স্বামীই তো, শুধু তিনবার কবুল আর একটা সই দিয়েই তার হয়ে যাইনি, হৃদয়ের সবটুকু ভালবাসা তো তাকেই উৎসর্গ করেছিলাম, সমর্পণ করেছিলাম নিজেকে।বিনিময়ে শুধু একটু ভালবাসাই চেয়েছিলাম, এর বেশিতো না।এটাই কি আমার অপরাধ ছিল?আমার কি কোনো অধিকার ছিলনা ওকে চাওয়ার,ওকে ভালবাসার?

হয়তো ছিলনা, কারন আরাফ তো কখনো আমাকে ভালবাসেনি।বাসবেই বা কেন ,সে তো শুধু বিয়ে করেছিল জিদের বসবর্তি হয়ে।তার প্রেমিকা তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল অন্য কোথাও,অন্য কাউকে বিয়ে করে।কিন্তু আমি কি দোষ করেছিলাম?কেন অন্য জনের শাস্তি আমাকে পেতে হলো?আমি কি তবে কোনো পুতুল ছিলাম ওর কাছে?যতোক্ষন ভালো লেগেছিল খেলেছিল নিজের খেয়াল খুশী মতো,তারপর ছুড়ে ফেলে দিয়ে পা বাড়িয়েছিল নতুন পুতুলের সন্ধানে।একবারো ভাবেনি আমার কথা,কখনো ভাবেনি ওকে ছাড়া আমি বাচতে পারবো কিনা?
এতো ভেবেই বা ওর কি লাভ,ভাবলে হয়তো জোর করে ডিভোর্স নিতো না।

অনেক কেঁদেছিলাম,ওর হাতে-পায়ে ধরেছিলাম,বলেছিলাম বাচবোনা তোমায় ছাড়া।তবুও আমায় একা অসীম সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়ে ও ছেড়ে দিল বিয়ের ঠিক এক বছরের মাথায়।


আরাফ ছেড়ে যাবার পর আমার ছোট্ট পৃথিবীটা হঠাৎ করে স্থবির হয়ে গিয়েছিল।ওকে ছাড়া আমি যে অপূর্ণ আমার প্রতিটা নিঃশ্বাস তা বারেবারে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল।মা,তোমরা বলেছিলে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে,নতুন করে সব শুরু করতে,নতুন করে বাচতে।কিন্তু মা,আমার যে আর দেখার মতো কোনো স্বপ্ন ছিলনা।একজীবনের যত স্বপ্ন সবই তো আমি দেখেছিলাম আমার ছোট্ট দুনিয়াকে নিয়ে।আমি সহ্য করতে পারিনি আমার সাধের স্বপ্ন মহলের এমন তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়া।

তোমরা জানতে স্বইচ্ছায় আমরা আলাদা হয়ে গেছি।কারন আমি চাইনি অপ্রিয় সত্য কথাগুলো জানিয়ে তোমাদের কষ্ট বাড়াতে।আমি যে প্রতিনিয়ত শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম,প্রতিটা মূহুর্তে আমি নিজের সাথে অভিনয় করে চলছিলাম,আর পারছিলাম না।আমার কষ্ট,আমার আত্মচিৎকার,আমার দীর্ঘশ্বাস,আমার অন্তরাত্মার অবুঝ প্রলাপ আর ব্যকুলতার নিরব সাক্ষী ছিল কেটে যাওয়া প্রতিটা গহীন কালো রাত।

আজ আমি চিৎকার করে কাঁদতে চাই,বলতে চাই আমার অসমাপ্ত গল্প।কিন্তু কাকে বলবো,কেউ তো শুনতে পারবেনা আমার কথা,কারন আমি যে এখন কায়াহীন আত্মা..........।

আমাকে ক্ষমা করো মা-বাবা..................।
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×