somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিতলীরা......

২৪ শে এপ্রিল, ২০১২ সকাল ১১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পিচ্চি তিতলীটার আজ খুব মন খারাপ।স্কুল থেকে ফিরে চেন্জ না করে বেবীডলটা গাল ফুলিয়ে বসে আছে সেই কখন থেকে,আর অপেক্ষায় আছে ডোরবেল এর শব্দ শোনার জন্য,কখন বাবা ফিরবে আর সে বাবার কোলে উঠে তাকে জড়িয়ে ধরবে।

প্রতিদিন বাবা অফিস থেকে ফিরলেই সে খুলে বসে তার নালিশের খাতা।কতো নখরা,বাহানা,আবদার ,নালিশ..উহ...
কেনইবা নালিশ করবেনা শুনি??বুঝলাম তিতুন ওর একমাত্র ভাই,ছোট ভাই,তাই বলে সে কি তার বোনকে খামচি দেবে,তার শখের ডলস্ হাউজ ভেংগে দিবে,তার রং পেন্সিল দিয়ে মেঝেতে আকিবুকি খেলবে,কিংবা বোনের চুলের ঝুটি ধরে টানবে!!
সত্যিইতো তিতুন ভারী দুষ্টু, সবার আদর পেয়ে পেয়ে খুব পাজী হয়ে গেছে ছেলেটা,বাবার কথা এখন সে থোরাই কেয়ার করে!!
কিন্তু আজ পিচ্চি তিতলী তার গুল্টু গুল্টু চোখগুলো জল ছলছলে করে গালে হাত দিয়ে জানালার পাশে বসে আছে।তিতুন ওকে এভাবে বসে থাকতে দেখে আরো জ্বালাতন করছে।দাদুমনি কয়েকবার খাইয়ে দিতে এসেছে,ও খায়নি।ওভাবেই চুপচাপ বসে আছে।কি যে হলো মেয়েটার আজ কে জানে......।

চিলেকোঠায় তিতলীদের ছোট্ট একটা বাসা,ঠিক যেন ছোট্ট একটা বাবুই পাখির বাসা,যেখানে থাকে পিচ্চি তিতলী বুড়ি,মহাদুষ্টু একটা ছেলে তিতুন যে কিনা তিতলীর ভাই,ওদের দাদুমনি,আর বাবা।তিতলীটা জানে ওদের মামনি অনেক দুরে থাকে ওদের থেকে।বাবা বলেছে মামনি থাকে আকাশে পরীর দেশে,ঐ যে লালপরী-নীলপরী যে দেশে থাকে আর অনেক তারা থাকে।
প্রতিদিন সন্ধ্যার পর বাবা তাদের দু'জনকে কোলে নিয়ে ছাদে বসে গল্প শোনায়-বাঘের গল্প,জুজুবুড়ির গল্প,দৈত্যের গল্প,আর মামনির গল্প।
বাবা বলে,আকাশের যতগুলো তারা আছে, তার মাঝে যেটা সবচেয়ে বড় সেটাই মামনি।ছোটবেলায় তিতলী আর তিতুন মামনিকে খুব জ্বালাতো জন্যে মামনি রাগ করে ওখানে চলে গেছে,কিন্তু সবসময় দেখে দুষ্টু দুটা কি করে।যেদিন থেকে তিতলীবুড়ি আর দুষ্টু তিতুন খাওয়া নিয়ে ঝামেলা করবে না,ঝগড়া মারামারি করবেনা সেদিন মামনি আবার ওদের কাছে ফিরে আসবে।একটা বিষয় তিতলী বুঝে পায়না মামনির কথা বলতে গেলেই বাবার চোখে কেন বারবার ময়লা যায় আর বাবা চোখ মুছে।

""টিংটং""
বাবা এসেছে।দাদুমনি দরজা খুলে দিতেই তিতলী দৌড়ে গিয়ে ওর বাবার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে।হঠাৎ অঝোরে কাদতে শুরু করে মেয়েটা।ঘাবড়ে যায় বাবা,দাদুমনি সবাই।
"কি হলো আমার মামনিটার,কাদছো কেনো বোকা মেয়ে?"
তিতলী কিছু না বলে কেদেই চলে।বাবার আদর,পাপ্পি,চকোলেট কোনো কিছুতেই থামছেনা মেয়েটা।বাবা তিতুনের দিকে তাকাতেই সে ঘাড় নাড়িয়ে না সূচক ভংগি করে,সে যে আজ কিছু করেনি সেটাই হয়তো বোঝাতে চাইছে।
কি যে হলো মেয়েটার কে জানে?তিতুনটাও বোনের কান্না ডেখে একদম চুপসে যায়,ঘুরঘুর করতে থাকে বোনের চারপাশে।

বাবা ফ্রেশ না হয়েই ডলটাকে নিয়ে ছাদে চলে যায়,তখনো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদে চলেছে তিতলী।উইকএন্ডে ঘুরতে নিয়ে যাবো,কালই তোমাকে বার্বি কিনে দিবো,অনেকগুলো কালার পেন্সিন কিনে দিবো,চকলেট ও দিবো...বাবার এইটাইপ এর প্রমিজ শুনে কিছুটা শান্ত হয় সে।কান্না থামালেও বাবার গলা জড়িয়ে ধরে চুপ করে বসে থাকে ও।
মেয়েকে কিছুটা শান্ত দেখে বাবা জিজ্ঞেস করে-"কি হয়েছে বলোতো আমার ছোট্ট পরীটার?তিতুন পচাটা কি তোমায় চিমটি দিয়েছে,পুতুল ফেলে দিয়েছে,দাদুমনি বকেছে?বলো মামনি কি হয়েছে?বাবাকে বলবেনা?"
ছোট্ট তিতলী তার কান্না কান্না মুখটা তুলে বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,"জানো বাবা, আজ স্কুলে মিস সবাইকে বলেছিলো সবার মামনিকে নিয়ে লিখতে।আমি লিখেছি আমার মামনি আকাশে থাকে,তারা আর লাল-নীল পরীদের সাথে।আমার বন্ধুরা আমার লেখা পড়ে খুব হেসেছে,আমি নাকি মিথ্যা লিখেছি,পরীর দেশে নাকি শুধু পরীরাই থাকে।বলো বাবা আমি কি মিথ্যা বলেছি?তুমিই তো বলেছো মামনি পরীর দেশে থাকে,বলো আমি কি ভুল বলেছি?ওরা কেন এভাবে হাসলো,ওরা আমাকে কেনো লায়ার বললো?তুমি ওদের খুব করে বকে দিও আচ্ছা বাবা।বলো বকবেনা?আর মামনিকে বলো যেনো খুব তাড়াতাড়ি চলে আসে,বলে দাও আমরা দুজন লক্ষী হয়ে যাবো,আর দুষ্টুমি করবোনা,প্লিজ বাবা মামনিকে বলো,প্লিজ"

কথাগুলো বলে আবার কান্নায় ভেংগে পড়ে তিতলী,বোনের কান্না দেখে তিতুনও কান্না শুরু করে দেয়।
বাবা ভেবে পায়না কি বলবে ওদের?কি করে বোঝাবে এই অবুঝ শিশু দুটিকে,কোন ভাষায় তাদের বোঝাবে তাদের মামনি ফিরে গেছে না ফেরার দেশে,যেখান থেকে আর কখনো ফিরে আসবেনা তাদের কাছে।মা হারা পাঁচ বছরের তিতলী আর তিন বছরের তিতুন,এই বাচ্চা দুটোকে কি করে আগলে রাখবে সে?সে কি করে ফিরিয়ে দেবে তাদের মায়ের মমতা,সে ক্ষমতা যে তার নেই।

দুটি দেবশিশু বুকে আগলে ধরে চোখভরা জলে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সে শূন্য আকাশের দিকে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১২ সকাল ১১:৪১
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×