আমার বাবা (তারেক-উল আলম) গত বছর কেনাডা বেড়াতে এসেছিলেন। কেনাডা থেকে দেশে ফিরে একটা বই লিখেছেন – ‘কানাডায় ৭০ দিন’। আজ পড়ুন এর ৮ম পর্বঃ
স্ট্র বেরির বাগানে
২৪ জুন, বিকেল ৪টায় শাহেদ গাড়ি নিয়ে এলো আমাদের স্ট্র বেরি বাগানে নিয়ে যেতে। শাহেদ শুভর বন্ধু এবং কলিগ। দু’জনেই কানাডার একই বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করছে। শাহেদ বর্তমানে ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র পরিষদের সভাপতি।
স্ট্র বেরি বাগান লন্ডন শহরের শহর তলীর শেষ পূর্ব প্রান্তে। প্ল্যাটস লেনের বাসা থেকে ৪০ মিনিটের ড্রাইভ। বাংলাদেশের দু'এক জায়গায় আজকাল স্ট্র বেবির চাষ শুরু হয়েছে কিন্তু তা অতি সামান্য আকারে। নিজ হাতে বাগানে স্ট্র বেরি পিকিং করবো, বাগানে বসে খাবো সে এক অকল্পনীয় ব্যাপার !
গাড়ি শহর ছেড়ে শহরতলিতে এলো। দু’ এক জায়গায় জিজ্ঞেস করতেই বাগানের সন্ধান মিললো। বিকেল ৬টায় বাগানে ঢোকা বন্ধ হয়ে যাবে। এখন ৫টা, আরো এক ঘন্টা সময় হাতে। তাই দ্রুত গেট পেরিয়ে আমরা অফিসে গেলাম। অনুমতি মিললো বাগানে ঢোকার, সাথে ছোট্ট একটি ঝুড়ি। বাগানে ইচ্ছে মতো খাওয়া যাবে কিন্তু বাড়িতে নিতে গেলে কিনে নিতে হবে। আমরা কাল বিলম্ব না করে দ্রুত বাগানে প্রবেশ করি।
কিছুক্ষণ আগেই একপশলা বৃষ্টি হয়ে গেলো। তাই বাগান কিছুটা ভিজা। বিশাল এক স্ট্র্র বেরি বাগান ! তিন চার ফুট চওড়া পায়ে চলা পথের দুই পাশে লম্বা লাইন করে স্ট্র বেরির গাছ লাগানো। দেখতে আলু গাছের মতো অনেকটা। শুকনো খড়ের উপর নেতিয়ে রয়েছে গাছ থোকা থোকা স্ট্র বেরি নিয়ে। সার মিশ্রিত কালো মাটিতে গাছ লাগানো। পথের উভয় পাশে এক দেড় শো রোতে গাছ লাগানো। এক একটা রো লম্বায় এক দেড় হাজার ফুট। শুকনো খড়ের উপর গাছ নেতিয়ে থাকে বলে বোধহয় নাম হয়ছেে ‘স্ট্র বেরি’। বেরি পাচঁ প্রকারের যেমন স্ট্র বেরি, ব্ল্যাক বেরি, র্যাশ বেরি, ব্লু বেরি এবং ক্যান বেরি। আকর্ষণীয় রং এবং উচ্চ পুষ্টি গুন সমৃদ্ধ। ফলগুলো খুবই জনপ্রিয়।
আমরা পিকিং শুরু করলাম। থোকা থেকে বড় বড় পাকা স্ট্র বেরি ছিঁড়তে শুরু করলাম। দুই চারটা খেতে থাকলাম। কিন্তু না ধুয়ে খাওয়া ঠিক হবে না। কারণ পোকা মাকড় থেকে রক্ষার জন্যে ওষুধ ছিটানো। আমরা খাওয়া বাদ দিয়ে ফল ওঠানো শুরু করলাম। লাল লাল, লাল কালচে, লাল খয়েরি প্রভৃতি রং ধারণ করেছে। অনেকটা আমাদের পাকা লিচুর মতো দেখতে। টক টক মিষ্টি, বিচিসহ খাওয়া যায়। যেহেতু বিদেশি ফল তাই বাংলাদেশে হাজার টাকা কেজি !
কিষানের সাথে পরিচয় হলো। নাম স্কোভিচ। বয়স ষাটোর্ধ। ছেলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। বিশ বাইশ বছরের সুন্দর সুঠাম দেহি যুবক পলেরো ভিচ। বললো, ছেলে থার্ড জেনারেশন। তিন জেনারেশন ধরে তারা এই ফার্মের মালিক। ইউরোপের সার্ব বংশধর।
বড় রাস্তার উভয় পাশে বিশাল খামার ! কয়েক হাজার বিঘা জমির উপর এর বিস্তৃতি। একদিকে অফিস অন্যদিকে খামার বাড়ি। বাড়ির সম্মুখে কয়েকটি গাড়ি। জমি কর্ষনের নানান যন্ত্রপাতি,কলের লাঙল, ট্রাক্টর ইত্যাদি বাড়ির এক কোনায় পড়ে রয়েছে। বাড়ির মধ্যেই গোডাউন। অন্য দিকে অফিস রুমের সাথে স্টোর। একতলা সাধারণ মাঝারি মানের বাড়ি। কৃষক সহজ সরল লোক। আমাদের মতো ভেঙ্গে ভেঙ্গে ইংরেজী বলে। লম্বা, লালচে গায়ের রং, সোনালি চুল। আমাদের কাছে সাহেব কৃষক। স্ট্র বেরির দাম নিলেন পাউন্ড প্রতি দুই ডলার কিন্তু বাজারে দাম আরো কম।
বিদায় নেয়ার পূর্বে স্কোভিচ এবং পলেরো ভিচের সাথে ছবি তুলতে ভুল করলাম না।
(ক্রমশ)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:০৬