ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে |১৮| আসন: হলাসন।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
# হলাসন (Halasana):
আসন অবস্থায় দেহকে অনেকটা হল বা লাঙ্গলের মতো দেখায় বলে এই আসনটির নাম হলাসন (Halasana)|
পদ্ধতি:
পা জোড়া করে হাত দু’টো শরীরের দু’পাশে লম্বাভাবে মেলে রেখে সটান চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাতের চেটো মাটির দিকে থাকবে। এবার হাতের উপর ভর দিয়ে পা দু’টো জোড়া ও সোজা অবস্থায় উপরে তুলুন এবং মাথার পেছনে যতদূর সম্ভব দূরে মেঝেতে নামিয়ে আনুন। শুধু পায়ের পাতার উপরের দিক ও আঙুল মেঝেতে লাগবে। থুতনিটা বুক ও কণ্ঠনালীর ঠিক সংযোগস্থলে থাকবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ এ অবস্থায় থাকুন। এরপর হাতের উপর ভর রেখে আস্তে আস্তে শায়িত অবস্থায় ফিরে যান। ২/৩ বার আসনটি করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা:
হলাসনে কোষ্ঠবদ্ধতা, অজীর্ণ, পেটফাঁপা প্রভৃতি পেটের যাবতীয় রোগ দূর হয়। আসনটি প্লীহা, যকৃৎ, মূত্রাশয় প্রভৃতির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং মেরুদণ্ডের হাড়ের জোড় নমনীয় ও মজবুত করে। মেরুদণ্ড-সংলগ্ন স্নায়ুকেন্দ্র ও মেরুদণ্ডের দু’পাশের পেশী সতেজ ও সক্রিয়। থাইরয়েড, প্যারাথাইরয়েড, টনসিল প্রভৃতি গ্রন্থিগুলো সবল ও সক্রিয় হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে সন্তান প্রসবের পর বা অন্য কোন কারণে তলপেটের পেশী শিথিল হয়ে গেলে এই আসনটি অভ্যাসের ফলে আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে। তাছাড়া পেট, কোমর ও নিতম্বের অপ্রয়োজনীয় মেদ কমিয়ে দেহকে সুঠাম ও সুন্দর করে গড়ে তোলে। আসনটি অভ্যাস রাখলে বহুমূত্র, বাত বা সায়টিকা, স্ত্রী-ব্যাধি কোনদিন হতে পারে না। আর থাকলেও তা অল্পদিন অভ্যাসে ভালো হয়ে যায়।
নিষেধ:
যাদের আমাশয় বা কোন রকম হৃদরোগ আছে, বা যাদের প্লীহা ও যকৃৎ অস্বাভাবিক বড়, রোগ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আসনটি করা উচিৎ নয়। ১২ বছরের কম বয়সের ছেলেমেয়েদের আসনটি করা উচিৎ নয়।
এ আসনে মেরুদণ্ড সামনের দিকে বাঁকানো হয় বলে এ আসনটি করার পর মেরুদণ্ড পেছনের দিকে বাঁকানো হয় তেমন আসন যেমন চক্রাসন, ধনুরাসন, উষ্ট্রাসন বা যে কোন একটি আসন করা উচিৎ।
# কর্ণ-পিঠাসন (Karna-Pithasana)
এমন পোশাকি নাম ধরলেও এ আসনটি মূলতঃ হলাসনেরই কিঞ্চিৎ বিবর্তিত রূপ। দু’ভাবে এ আসন করা যেতে পারে।
পদ্ধতি (ক):
প্রথমে হলাসন করুন। এবার হাত দু’টো মাটি বা মেঝে থেকে তুলে নিয়ে কোমরের দু’পাশে ধরুন। এখন পা দু’টো কানের পাশে মেঝেতে রাখুন। পায়ের পাতা মোড়া অবস্থায় মেঝেতে লেগে থাকবে। হাঁটু কানের সাথে লেগে থাকবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ এই অবস্থায় থাকুন। এরপর প্রথমে হলাসনে যান এবং তারপরে হাতের উপর ভর রেখে আস্তে আস্তে শায়িত অবস্থায় ফিরে যান। আসনটি ২/৩ বার করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।
পদ্ধতি (খ):
প্রথমে সর্বাঙ্গাসন করুন। তারপর পা দু’টো হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙে হাঁটু দু’টো দু’কানের পাশে মাটিতে রাখুন। পায়ের পাতা জোড়া ও মোড়া অবস্থায় মেঝেতে রাখুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ এই অবস্থায় থাকুন। এরপর প্রথমে সর্বাঙ্গাসনে যান এবং আস্তে আস্তে পা মেঝেতে নামিয়ে হাত আলগা করে চিৎ হয়ে শুয়ে বিশ্রাম নিন। আসনটি ২/৩ বার করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা:
ঘলাসন ও পূর্ণ-বদ্ধ-সর্বাঙ্গাসনের প্রায় সব গুণ এ আসনে বর্তমান।
নিষেধ:
হলাসনের নিষেধগুলো কর্ণ-পিঠাসনেও মেনে চলতে হবে।
[Images: from internet]
(চলবে...)
পর্ব:[১৭] [**][১৯]
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন
দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ
মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!
বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।
ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )
যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন