ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় জীবিকা নির্বাহের অত্যাবশকীয় সামগ্রী ছাড়া নিসাব পরিমাণ বা অন্য কোনো পরিমাণ সম্পদের মালিকদের পক্ষ থেকে গরিবদের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণের একটি অর্থ প্রদান করার বিশেষ আয়োজনকে সাদকাতুল ফিতর বলা হয়।
সহিহ বোখারি: হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, আমাদের সময় ঈদের দিন এক সা খাদ্য দ্বারা সাদকা আদায় করতাম। আর তখন আমাদের খাদ্য ছিল জব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর বলেন, 'নবীজি (সা.) এক সা খেজুর বা এক সা জব দিয়ে ফিতরা আদায় করার আদেশ দিয়েছেন। পরবর্তী সময় লোকজন দুই মুদ গমকে (আধা সা) এগুলোর সমতুল্য মনে করে এবং আদায় করে। গম ছাড়া অন্য পণ্য দ্বারা ফিতরা আদায় করলে এক সা পরিমাণ দিতে হচ্ছে, যা বর্তমানে গমের ওজনের দ্বিগুণ এবং মূল্যের দিক দিয়েও অনেক বেশী। [বোখারি]
রাসুল (সা.)-এর যুগে গমের ভালো ফলন ছিল না বিধায় আলোচিত চারটি পণ্য দ্বারাই ফিতরা আদায় করা হতো। এরপর হজরত মুয়াবিয়ার (রা.) যুগে গমের ফলন বেড়ে যাওয়ায় গমকে আলোচিত চারটি পণ্যের সঙ্গে সংযোজন করা হয়। আর তখন গমের দাম ছিল বাকি চারটি পণ্যের তুলনায় বেশি।
হাদিসে এক সা আদায় করার কথা উল্লেখ থাকার পরও তখন এর মূল্য অনেক বেশি হওয়ায় সাহাবারা আধা সা পরিমাণ গম আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তখন আধা সা গমের মূল্যও অন্য চারটি পণ্যের এক সা-এর চেয়েও বেশি ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে আলোচিত পাঁচটি পণ্যের মধ্যে গমই হচ্ছে সবচেয়ে কম দামি পণ্য। তাহলে এখন প্রশ্ন হলো, বর্তমানে গমের পরিমাণ হিসেবে আধা সা ফিতরা আদায় করলে হবে? এবং এতে সাদকাতুল ফিতরের আসল হক কি আদায় হচ্ছে?
শরিয়তের বর্ণনা ও হাদিসের আলোচনা অনুযায়ী - যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী উলি্লখিত পাঁচটি পণ্যের যেকোনো একটি পণ্যের নির্দিষ্ট পরিমাণে ফিতরা আদায় করবেন। যার সামর্থ্য আছে উন্নতমানের খেজুর দ্বারা সে খেজুর দ্বারাই আদায় করবে। আর যার সামর্থ্য আছে কিশমিশ কিংবা জব দ্বারা আদায় করার সে তা দ্বারা আদায় করবে। যার গম দ্বারা আদায় করা ছাড়া অন্য পণ্য দ্বারা আদায় করার সামর্থ্য নেই সে গম দ্বারা ফিতরা আদায় করবে। তবে বর্তমানে যেহেতু গমই হচ্ছে সবচেয়ে কম দামি পণ্য তাই ফিতরার পরিমাণ জনপ্রতি সর্বনিম্ন এক সা বা তিন কেজি ২৫৬ গ্রাম গম বা সমপরিমাণ গমের আটার মূল্য ৩২ টাকা কেজি করে ফিতরা প্রদান করা উচিৎ ১০৫ টাকা।
বেশি সম্পদশালী এবং কম সম্পদশালী নির্বিশেষ গম বা সর্বনিম্ন দামের পণ্য দ্বারা সাদকাতুল ফিতর আদায় করার বিষয়টি বিবেকবর্জিত এবং হাদিস ও শরিয়তের নির্দেশনার পরিপন্থী। তাই আসুন! আমরা সবাই নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী সাদকাতুল ফিতর আদায় করি এবং দায়সারা আদায় পদ্ধতি ত্যাগ করি।