somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাতের আঁধারের নন্দিনী (১ম পর্ব)

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রাত প্রায় ১২টা। আঁধারের মাঝে অল্প অল্প আলোর ঝপসা।
এখানেই খুব ভোরে বসে ফুলের পশরা।
আর খুব রাতে ফুল কুমারিদের পশরা।
হ্যা এটা শাসবাগ মোর।

অনেক মেয়ে মানুষ এখানে অপেক্ষায় থাকে খদ্দেরের।
মনিরা ও তাদের একজন। সেও অপেক্ষায় আছে খদ্দেরের।
এক জন চা ওয়ালাকে ডেকে বললো, একটা চা দেন। রং চা।
মনিরা আবার গল্প করতে ভালো বাসে।
তাই চা ওয়ালার সাথে গল্প জমিয়ে দিল।

জানেন ভাই আগে অনেক শরম লজ্জা আছিলো।
এখন আর নাই,থাকবো কেমনে কত্ত বেডা মানুষ...............।
বলেই থেমে গেল।
এই সব আফনানে বইল্লা কি লাভ।
আরেকডা চা দেইন আধা একটু বাড়ায়া দিয়েন।

তয় চা ওয়ালা ভাইর নামডা কি?
এক কাপ রং চা বানাতে বানাতে চা ওয়ালা বললো,
আমি মনির, আইজকেই আইলাম এইহানে।

সে হাসতে হাসতে বললো, মিল্লা গেছে মিল্লা গেছে
আফনে মনির আর আমি মনিরা।
তয় আফনে ডাহায় নতুন আইচইন।
আর আমি পুরান।

মনির একটু ও হাসলো না।
যদিও একজন দেহ ব্যবসায়ী সাথে নামের মিল থাকা অহংকারের কিছুনা।
বরং অপমানের। মনিরের অপমান বোধটা আছে বলেই, সে হাসলো না।
মনিরার হাতে তার বানানো চাটা তুলে দিল।
মনিরা অবাক হলো। তার রসালো হাসিটা থামিয়ে দিয়ে বললো,
ঐ মিয়া হাসতে তাসতে জানোনা।
মুখটা পেচার মতো বানায়া রাখছেন কেন?
ও আমি বেশশশশ............
থাক আফনে হাসলেই আমার কি? আর না হাসলেই আমার কি?
তয় আফনের চাডা খাইয়া মজা পাইছি।
আরেকডা চা দেইন।

মনি আরেকটা চা বানিয়ে মনিরার হাতে দিল।
মনিরা কাপটা হাতে নিয়ে বললো,
তয় আইজকাই আইয়া এই কাম পাইলেন কেমনে?
মনির বললো, আমার বড় খালু আমারে এইহানে নিয়া আইসে।
খালু দিনের বেলা চা বেচে।আর আমায় নিয়া আইছে রাইতের বেলা
বেচনের লাইগগা।

মনিরাঃ ও তা আগে কি করতাইন?
মনিরঃ আগে আমাগো গেরামেই একডা ছোড দোহান আছিলো।
ভালাই চলতো। আমরা চাইর জন মানুষ খায়াদায়া ভালা মতো চলতে পারতাম।
হুট করে মনিরা প্রশ্ন করলো চাইর জন কে কে?
মনিরঃ আমি আমার মায় আর ছোড বইনডা।
মনিরাঃ বাপ নাই।
মনিরঃ হেয় আমাগোরে রাইখা চইলা গেছে।
মনিরাঃ মাইনে?
মনিরঃ আমার ছোড বইনডার বয়স যহন দু বছর আছিলো তহন বাজান মইরা গেছে।
দুহানডা বাজানেরি আছিলো। বাজান মইরা যাওয়ার পর মায় কইলো,
বাজান দোহানডা তুই চালা। আমরার তো দুইডা ডাইল ভাত খাওন লাগবো।
সেই থাইকাই দোহানডা আমি চালাইতে ছিলাম।
মনিরাঃ আরেকডা চা খাওয়ান। আইজকা মনে হয় কাম কাজ অইবোনা।

মনির চা বানাতে বানাতে মনিরা কে এই প্রথম প্রশ্ন করলো।
আফনে এই কাম করেন কেন? আফনের মায় বাপে আফনারে কিচ্ছু কয়না?

মনিরা মনিরের হাত থেকে চা নিয়ে খুব জোরে জোরে হাসতে লাগলো।
মনিরঃ হাসই কেন?
মনিরাঃ খারাইন কইতাছি। আগে ১গেলাস পানি খাওয়াইন।
মনির পানির বোতল থেকে একটা স্টিলের গ্লাসে পানি ডেলে নিয়ে মনিরা কে দিল।
মনিরা এক টানে পুরো গ্লাস পানি খেয়ে নিয়ে মনিরের হাতে গ্লাসটা ধরিয়ে দিল।
মনির গ্লাসটা হাতে নিয়ে বললো, এইবার কন হাসলেন কে?
মনিরাঃ সাধে কি আর এই কাজে নামছি ভাই?
আমার বাপে আমার জন্মের দুই তিন বচর পরেই মইরা গেলো।
মায় আমার মাইষের বাড়ী বান্দি খাইট্টা আমারে কালাস নাইন পর্যন্ত পড়াইছে।
হটাত একদিন মায়ের বুকের নিচে খুব বেদনা উঠলো।
মায় আমার বেদনা সইতে না পাইরা চিল্লায়া কানতে লাগলো।
আমি ইসকুল থাইকা আয়া দেখি মায় আমার মাডিতে পইড়া চাইটটায়া চাইটটায়া
বেদনায় কানতাছে।
আমি মায়ের এই অবস্থা দেইহা কাইন্দা দিয়া মায়েরে জিগাইলাম মা কি হইছে তোমার।
ওমা কি হইছে তোমার। আমার মায় বেদনার জ্বালায় কথা কইতে পারতাছে না।
পেটের নিছে হাত দিয়া দেখাইতেছে খুব বেদনা করতাছে।
আমি দৌড়ায়া গেলাম আমার মায় যেই বাড়িতে কাম করতো হেই বাড়িতে।
কাকারে চিল্লায়া ডাকতে লাগলাম। কাকায় ও ভুতের মতো দৌড়ায়া আয়া কইলো,
কিরে মনিরা কি হইছে কানতাছোত কেন, আমি ফুফরাইয়া কানতাছিলাম বইলা কথা কইতে
পারতাছিলাম না। তুতলায়া তুতলায়া কইলাম কাকা কাকা আমার মায় মইরা যাইতাছে।
কাকায় আমার হাতে ধইরা টাইনা নিয়া বাড়িতে আইলো।
আয়া দেহি মায় আমার মরা মাইষের মতো মাডিতে পইড়া রইছে।
আমি আরো জোরে চিল্লায়া কানতে লাগলাম।
পড়ে কাকায় আমারে বুজাইয়া মায়েরে মেডিকেলে নিয়া গেলো।
মায়ের যহন গেয়ান ফিরলো ডাক্টার আয়া কাকারে কইলো মায়ের
নাকি দুইডা কিডনি নষ্ট হইয়া গেছে। যতো তারাতারি সম্ভব একটা
কিডনি লাগাইতে হউবো। আমি কাকারে কইলাম কাকা আমার তো দুইডা কিডনি।
একডা মায়েরে দিয়া দেই। কাকায় কইলো খারা ডাক্টার সাবরে জিগায়া লই।
ডাক্তার সাব আমাগো লগেই আছিলেন। তিনি কইলেন তুমি তো ছোড মাইয়া
তোমার কিডনি নেওন যাইবো না। তারপর অনেক টেকা পয়সা ও লাগবো।
শুধু কিডনি হইলেই তো হইবো না।
কাকায় কইলো এইডা পড়ে দেহা যাইবো। চল আগে তোর মায়েরে বাড়িত নিয়া যাই।
আমরা আমাগো বাড়িতে উঠলাম। কাকায় আমাগো খাওন পোশনের দায়িত্ত নিলো।
কাকায় ও কিন্তু তেমুন পয়সা ওয়ালা ছিলোনা। কাকার কুনো মাইয়া ছিলোনা।
তাই আমারে খুব আদর করতো নিজের মাইয়ার মতো।
কিন্তু সারা জীবন তো আর কাকার গারে বইসা কাডাইতে পারুম না।
তার উপর আবার মায়ের চিকিৎসা করান লাগবো।
তাই আমি কাকারে কইলাম কাকা আমারে ডাহায় একটা কাজে লাগায়া দেন।
কাকায় আমারে ধমক দিয়া কইলো, তুই ডাহা যাবি কেন?
আমি কি মইরা গেছি।
আমি কাকার ধমক শুইননা ডরায়া ডরায়া কইলাম, কাকা মায়ের চিকিৎসা
করান লাগবো। অনেক টেকা লাগবো। আপনি এতো টাকা পাইবেন কই।
কাকিও কাকার লগে বওন আছিলো।
কাকি কইলেন মনিরা তো কথাডা খারাপ কয় নাই। আমি হইলেও এমনডা কইতাম।
কাকায় কইলেন আমি জানি মনিরা কথাডা খারাপ কয় নাই তয়, বলেই থেমে গেলেন।
আমি কইলাম, তয় কি কাকা?
কাকা কইলেন তুই একটা মাইয়া মানুষ। তরে কেমনে ডাহা পাডাই।
তার উপর আবার তোর মায় যদি রাজি না হয়।
কাকি কইলেন ওর মায় রাজি না হইলে আমি বুজায়া কইমু।
আমি কইলাম কাকা আফনেরা মায়েরে বুজায়া কইলে মায় রাজি হইবো।
কাকা কাকি মায়েরে বুজায়া কইলো মায় রাজি হইলো।
কাকা কাকি মায়েরে তাগো বাড়িতে নিয়া আইলো।
কাকায় আমারে তার পরিচিত একজনের লগে আমারে ডাহায় পাডাইয়া দিল।
সে কাকার দূর সম্পর্কের ভাই লাগতো।
উনি আমারে গারমেনসে একটা চাকরি দিয়ে দিলেন।
আর বললেন এই মাস তুমি আমার বাসায় থাকো।
আগামি মাসে তোমায় ভালো একটা মেসে তুইল্লা দিমু।
গারমেনসে এক আপার লগে পরিচয় হইলো।
আপা একটা রুমে একাই থাকে।
আমি আফারে জিগাইলাম, আফা আফনে সামাইন্ন কয়ডা টেকা বেতন দিয়া
একলা একডা বাসা নিয়া ফুসাইন কেমনে।
আফায় কইলো, অন্য জায়গায় ওভারটাইম করি তো তাই ফুসায়া যায়।
আমি কইলাম আফা আমার তো একটা মেসে উডা লাগবো বেতনডা পাইয়া।
আফায় কইলো তুমি চাইলেই আমার রুমে আসতে পারো।
আমি কইলাম আফা এতো টেকা দিমু কেমনে?
আফায় কইলো আমি যেমনে দেই তুমিও তেমনে দিবা।
আমার যখন ফুসায় তুমারো ফুসাইবো।
তুমিও আমার মতো অভারটাইম করবে।
আমি কইলাম তাইলে তো ঠিক আছে।
আফায় কইলো বেতনডা লইয়া তুমি তোমার সব কিছু গুছাইয়া
আমার বাসায় চইল্লা আইও।
আমিও রাজি হইয়া গেলাম।


খুব শিগ্রই আসবে পরবর্তী অংশ............
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৩০
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×