somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতভ্রমণঃ মানালী টু কিলং

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





কোলকাতা , দিল্লী , শীমলা এবংমানালীভ্রমনের পর থেকে......

বান্দরবান ভ্রমণের সবচেয়ে উত্তেজনার ব্যপার কোনটা? না... না, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের কথা বলছি না... ওটার ধারেকাছেতো দেশের আর কোন জেলার পাত্তাই নেই। আমি বলছি একটু “কুল-টাইপ” উত্তেজনার কথা। মানে মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে যাওয়ার ব্যাপারটা। দেশের এই এক জায়গায় এখনো পর্যন্ত পুরোপুরি ‘আউট অফ নেটওয়ার্ক’ হওয়ার সুযোগটা আছে। বান্দরবান শহর ছেড়ে ভেতরের দিকে যাওয়ার সময় মোবাইলে নেটওয়ার্কের দাগ একটা একটা করে কমতে থাকা......একেবারে শেষ দাগটার সময় বাসায় একটা ফোনকল করে জানিয়ে দেয়া- ‘আগামী কয়েকদিন মোবাইলে পাওয়া যাবেনা’...... এরপর দু-তিনদিন বাইরের দুনিয়া থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া...... কয়েকদিন প্রকৃতিতে বুঁদ হয়ে থাকার পর একসময় শহরের পিছুটান... ফেরার পথে নেটওয়ার্কের প্রথম দাগ পাওয়া মাত্রই আবার বাসায় জানিয়ে দেয়া- ‘হ্যাঁ, সবাই সুস্থ আছি’


বেশ কিছুদিন পর আবার এই উত্তেজনার স্বাদ পেলাম- দেশ থেকে অনেক দূরে গিয়ে। তবে এবার বাসায় জানানোর সুযোগটাও হলোনা। হঠাৎ করেই নেটওয়ার্কের বাইরে চলে গেলাম। জায়গাটা মানালী-লেহ সড়ক......


২৪.০৭.১৪


খুব ভোরে আমাদের ট্রাভেলার্স মানালী-লেহ সড়কে উঠলো। মানালীর জনপদ তখনো ঘুমন্ত। রাস্তার জ্যাম থেকে বাঁচতেই এতো সকাল সকাল যাত্রা। মানালী-লেহ সড়ক টু-ওয়ে, অথচ প্রশস্ত কেবল এক লেনের মত। তাই একবার জ্যাম বাঁধলে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থাকতে হতে পারে। আগের রাতের বৃষ্টিতে বিয়াস নদীর যেন মাথা খারাপ হয়ে গেছে। রাস্তার পাশে তীব্র গর্জন করে বয়ে চলেছে আমাদের বিপরীত দিকে।


চিন্তার বিষয় ছিল বেশ কয়েকটা। প্রথমত, রাতের বৃষ্টিতে রাস্তায় ল্যান্ডস্লাইড হয়ে থাকলে বড় বিপদে পড়তে হবে। দ্বিতীয়ত, মেঘ-কুয়াশা মিলে গাড়ির সামনের কয়েকফুট রাস্তা ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তবে সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হচ্ছে – মানালীর একদিন বিশ্রামের পরও জার্ণির জন্য সবাই পুরোপরি ফিট না।


গাড়ি উপরের দিকে উঠার সাথে সাথে মেঘের ঘনত্বও যেন বাড়তেই থাকলো। রাস্তার একপাশে পাহাড়ের দেয়াল, আর অন্যপাশে কি আছে তা কিছুই বোঝার উপায় নেই। ছোট ছোট অস্থায়ী ঝর্না শব্দ করে বয়ে চলেছে রাস্তার উপর দিয়ে। রাস্তার পাশে হঠাত হঠাত দেখা মেলে বড়সড় চুনাপাথরের চাঁইয়ের। চেকিং পয়েন্টে রাহুল ভাইয়ের কাগজপত্র চেক করা হলো। কাগজে কলমে আমরা আর বিদেশী পর্যটক নই; আমরা এখন থেকে কোলকাতার দাদা (পাকিস্তানী, চাইনিজ এবং বাংলাদেশীদের খুব একটা খাতির করা হয়না ইন্ডিয়ায়। রাস্তায় বারবার চেকিং এর ভেজাল এড়াতে তাই এই কাজ করেছিল রাহুল ভাই।)।


রাস্তার পাশের একটা ধাবায় নাস্তা করতে নামলাম আমরা। বোর্ডেলেখা আছে, উচ্চতা- ৯৮০০ ফিট। মেঘ আণুবীক্ষণিক বৃষ্টির কণার মত গায়ে বিঁধতে থাকলো। বৃষ্টিতে ভেজার মত একটা অনুভূতি হয়, কিন্তু গা ভেজে না। ঠান্ডা একটু কম হলে হয়তো ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করতাম। নাস্তা মানালীর হোটেল থেকেই পার্সেল করে আনা হয়েছিল। কণকণে ঠান্ডায় কোনমতে রুটি ছিঁড়ে চায়ের কাপে চুমুক দিলাম। ভেজালে পড়লাম হাত ধুতে গিয়ে। পানি পড়ার সাথে সাথেই হাত অবশ হয়ে গেল। হাতমোজা পরে ঘষাঘষি করে কোনমতে প্রাণ ফেরানো হল হাতদুটোর।



মেজাজটা একটু একটু করে চড়তে থাকলো। বেলা বাড়ছে অথচ মেঘ কাটার কোন নামগন্ধই নেই। এদিকে গাড়ি রোথাং পাসের দিকে যাচ্ছে অথচ বরফের দেখা নেই এখন পর্যন্ত। অচিরেই অবশ্য ভুলটা ভাঙ্গলো। বুঝতে পারলাম এতক্ষণ যে চুনাপাথরের চাঁই দেখে অবাক হচ্ছিলাম সেগুলোই জমাট বরফ! অবশ্য এমন ভুল হওয়াটা মোটেই অস্বাভাবিক ছিল না। বরফ মাত্রই ধবধবে সাদা কিছু আশা করেছিলাম। কিন্তু এখানকার বরফ আশপাশের ধুলা-বালুতে বেশ ময়লা হয়ে আছে।



এই বরফের চাঁইগুলোকেই চুনাপাথর ভেবেছিলাম



গাড়ি ‘রোথাং লা’ তে পৌঁছালো। তিব্বতীয়ান ভাষায় রোথাং এর অর্থ ‘মৃতদেহের স্তূপ’। নামকরণের কারণটা আশা করি খুলে বলতে হবে না। এটাই আমাদের র‍্যূটের প্রথম পাস। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ১৩৫০০ ফিট। ঘোলাটে মেঘের মধ্য দিয়ে যদ্দুর দেখা যায় শুধু বরফ আর বরফ। গাড়ি থেকে নেমে কিছুটা বরফ দেখার উত্তেজনায় আর কিছুটা স্রেফ গা গরমের জন্য দাপাদাপি শুরু হল বরফের উপর। অধিক উত্তেজনায় গ্লভস খুলে স্নো-ফাইটের চেষ্টা করা হল। দু-একটা বরফের গোলা মেরেই অবশ হাতটা আবার গ্লভসে ঢুকাতে হল। জিনিসটা টিভিতে দেখে যতটা আনন্দের মনে হয় মোটেই ততটা আনন্দের না। স্কিয়িং ইন্সট্রুমেন্ট নিয়ে দু-একজন লোক পিছে লাগলো। লোকমুখে শুনে এসেছি মুফতে আছাড় খেতে হলে এ জিনিসের কোন জুড়ি নেই। তার উপর চারপাশ মারাত্মক ঘোলা। সুতরাং কেউ উৎসাহ দেখালাম না।


রোথাং লা'য় আদিত্যকে তার প্রাপ্য মধ্যমাগুলো বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে


রোথাং থেকে নামা শুরু করলো। এতক্ষণে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলো আমাদের। আস্তে আস্তে মেঘ কাটতে থাকলো। আরেকটু নীচে নেমে মেঘ যখন পুরোপরি কাটলো তখন যে দৃশ্য চোখের সামনে ধরা দিল তা দেখে আক্ষরিক অর্থেই থ বনে গেলাম। হঠাৎ করেই যেন শৈশবে গুঁড়োদুধের বিজ্ঞাপনে দেখা নিউজিল্যান্ডের কোন অংশে পৌঁছে গেছি! সবুজ পাহাড়ের চুঁড়ায় দুধ-সাদা বরফের টুপি। পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে বহমান পানির ধারাগুলো বরফ হয়ে থেমে আছে। মেঘের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসার সংগ্রাম করে যাচ্ছে সূর্যের আলো। ছবি বাছাই করতে হিমশিম খাচ্ছি, তাই জায়গাটার চারপাশের ছবি দিয়ে দিলাম......

পেছনে রোথাং ফেলে আসছি

রোথাং এর বিপরীতে নিউজিল্যান্ড ডেইরি মিল্ক


বামপাশে নেট জিওতে দেখা হিমালয়ের কোন অংশ

সামনে যে আঁকাবাঁকা রাস্তা অপেক্ষা করছে



রোথাং এর পর থেকে কিলং পর্যন্ত শুধু নামার পালা। রোথাং পর্যন্ত রাস্তা বেশ ভালোই ছিল- প্রচলিত ট্যুরিস্ট স্পট বলে। কিন্তু এর পর থেকেই রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ খারাপ। শীতের পর এই রাস্তা খুলেছে মাসখানেক আগে। বছরে চারমাসের মত সময় শুধু খোলা থাকে। পর্যটকদের আনাগোনাও তাই শুধু এই চারমাস। রাস্তার নানা জায়গায় চলছে সংস্কার কাজ। পাথর ভেঙ্গে চলেছে শ্রমিকরা পথের ধারে। রাস্তার পাশে কিছু গন-তাঁবুতে তাদের বসবাস।


এমনিতে বেশ স্বল্পভাষী হলেও প্র্যাকটিক্যাল জোকসে রাহুলভাই বেশ সিদ্ধহস্ত। গাড়ির মধ্যে নো স্মোকিং স্টিকার লাগিতে ফুঁকে চলেছেন একের পর এক ধুম্রশলাকা। উনার ঠিক পেছনের সিটে বসে প্যাসিভ স্মোকিং করে চলেছি আমিও। ছবি তোলার জন্য রাবা জানালার পাশে এসে বসলো। কিছুক্ষণ পরেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম। জানালা দিয়ে রাহুল ভাইয়ের নিক্ষিপ্ত থুথু বাষ্পবৃষ্টি হয়ে আমাদের চোখ-মুখ ভিজিয়ে দিলো। ঘটনার আকস্মিকতায় প্রতিবাদ করার কথাটাও মনে ছিলোনা...চেপে গেলাম।

রাস্তার পাশে এতক্ষণ আমাদের সঙ্গ দিয়ে চলেছে চন্দ্রা নদী। বেশ অনেক দূরে দূরে নদীর পাড় ঘেঁষে দেখা মেলে কোন জনপদের। তান্দিতে শেষবারের মত তেল নিতে থামলো গাড়ি। পেট্রলপাম্পের সাইনবোর্ডে লেখা আছে, ‘সামনের ৩৬৫ কিলোমিটার রাস্তায় এটাই শেষ পেট্রোল-পাম্প’। লেখাটা পড়েই মেরুদণ্ডে অন্যরকম একটা শিহরণ খেলে গেলো। তান্দিতে ভাগা নদী এসে চন্দ্রা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে- সৃষ্টি হয়েছে চন্দ্রাভাগা নদী। চন্দ্রাকে এখানে বিদায় দিয়ে নতুন সঙ্গী পেলাম ভাগা নদী- যা পরবর্তী পাস পর্যন্ত পথ দেখাবে।




রাস্তায় রাস্তায় নাম না জানা অসংখ্য জলপ্রপাত




সামনে এই ধরণের পরিস্থিতিতে পাঠকদের আরো অনেকবার পড়তে হবে, তাই আগেই বলে রাখি- আমরা কিন্তু নিজেদের ব্ল্যাডারের যত্নে আপোষহীন! প্রকৃতি ছোটখাট ডাক দিলে সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থামাই। প্রকৃতি আস্বাদন করতে করতে জলবিয়োগের আনন্দ নেই। এসব শুনে আমাদের রুচিহীন ভেবে বসবেন না... যেসব যায়গায় গাড়ি থামাই সেসব জায়গার ছবি দেখলে আপনারাও বুঝতে পারবেন- আমরা কতটা ক্লাসি...


জলবিয়োগের জন্য বাছাইকৃত একটি জায়গা

দুপুর দেড়টা-দুইটার দিকেই আমরা কিলং পৌঁছে গেলাম। আজকের মত ভ্রমণ এখানেই শেষ, রাতটা কিলং এই কাটাবো। ইন্দো-তিব্বত সীমান্তের খুব কাছে ছোট্ট এই জনপদ। সভ্যতার মধ্যেও যে এমন নীরব জায়গা পাওয়া সম্ভব তা এখানে না আসলে বোধহয় জানতেই পারতাম না।


রাতের ঠিকানা ‘নর্দাংলিং’ গেস্টহাউজ। এটা কিলং এর হাইলি রেকমেন্ডেড হোটেল- অনেক ভ্রমন ব্লগেই এর সুনাম করা হয়েছে। বেশভূষায় খুবই সাদামাটা টাইপের হোটেলটার ভেতরে ঢুকেই এর কারণ পরিষ্কার হয়ে গেল। হোটেলের ভেতরে বেশ ঘরোয়া একটা পরিবেশ। দারুণ পরিষ্কার প্রতিটা রুম। বিশেষ করে বাথরুম দেখে সবার মুখে হাসি ফুটলো।


ব্যাগ ফেলে হোটেলের জানালা দিয়ে চারপাশে তাকালাম...এবং তাকিয়েই থাকলাম। হোটেলের সামনে পেছনে সবুজ-হলুদ রঙের শস্যক্ষেত। তাদের মাঝখানটায় সব্জি-বাগানের ফাঁকে ফাঁকে কিছু আপেল গাছ। আর উপত্যকটা পাড়ি দিয়ে চারপাশটা ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়ের সারি। দেখে প্রথমেই ‘কালার অব প্যারাডাইস’ মুভির পোস্টারটাকে মনে পড়ে যায়।



কিলং- নর্দাংলিং এর সামনের পাহাড়


কিলং- নর্দাংলিং এর বামপাশের পাহাড়


কিলং- নর্দাংলিং এর পেছনের পাহাড়ে সূর্যাস্ত


ফ্রেশ হয়ে নিয়ে দুপুরের খাবার সারতে নীচে নামলাম। খাবারের ব্যাবস্থা হোটেলের পাশের একটা খোলা তাঁবুতে। চারপাশের সবুজের মাঝে সাদা তাঁবুটা দারুণ মানায়। মানতেই হলো হোটেল মালিকের রুচি আছে বটে! কিছু নেপালী ছেলে এখানে রান্নাবান্নার ব্যাপারটা দেখে। বেশ ক্ষুধার্ত ছিলাম। তাই ভেজ খাবার নিয়ে কেউ আপত্তি করলাম না। কিন্তু রাতের খাবারে মাংস না পেলে কারোই যে মেজাজ ঠিক থাকবে না তা অনুমান করতে কষ্ট হলোনা।


সমস্যাটা হয়েছে অন্য জায়গায়। এখানকার প্রায় সবাই তিব্বতীয়ান বুদ্ধিস্ট কিংবা হিন্দু ধর্মালম্বী। অতএব মাংস পেলেও তা হালাল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। ধর্ম-উদাসীন বন্ধুগণ শেষ পর্যন্ত আর চক্ষুলজ্জা ধার ধারতে পারলো না। অনুরোধ করলো যাতে ওদের জন্য হলেও রাতে মাংসের ব্যাবস্থা করা হয়। কি আর করা! ‘মাংস খেয়েছে ওই ব্যাচ, তুমি শুধু ঝোল আলু’- টাইপ হৃদয়বিদারক চিন্তাভাবনা করতে করতে হোটেল মালিককে সমস্যাটা জানালাম। লোকটাকে প্রথমদেখায় মানুষ ভেবে ভুল করেছিলাম। এখন বুঝতে পারলাম লোকটা সাক্ষাৎ দেবদূত। উনি আশ্বাস দিলেন, মাংসের ব্যাবস্থা হবে...হালাল মাংসেরই ব্যাবস্থা হবে। ছলছল চোখে রুমে ফিরলাম।



নর্দাংলিং এর কিছুটা নীচে কিলং এর একমাত্র বাজার। আমাদের সবার মোবাইলই নেটওয়ার্ক শুণ্য। শুধু আদিবের মোবাইলে একদাগ মাঝেমধ্যে ছিনিমিনি খেলছে। এদিকে রোমিং রেটের গ্যাঁড়াকলে কলরেটও অনেক বেশী। অতএব ভাগ্য যাচাই করতে বাজারে গমন- যদি কোন মোবাইলের দোকান মিলে। মানুষ-জনকে জিজ্ঞেস করে করে বাড়িঘরের ভেতর দিয়ে বাজার খুঁজে নিলাম। মোবাইলের দোকান খুঁজেও পেলাম। কিন্তু আশাভঙ্গ হল,বাংলাদেশে কল করার কোন উপায় নেই। লাদাখ অংশটাকে দারুণ নিরাপত্তায় রাখতে চায় ইন্ডিয়া। একদিকে পাকিস্তান অন্যদিকে চিন। তাই এখানে লোকাল কল ছাড়া অন্য সব কলেই বাধা রেখে দিয়েছে। কি আর করা! হোটেলে ফিরতে হল। পথে সুরার বোতলে ভর্তি দোকানের দিকে হতাশ দৃষ্টি বুলাতে দেখা গেল দু-একজনকে। বাজারে আসা যাওয়া মিলিয়ে শ-খানেক মিটার হেঁটেছি কিনা সন্দেহ, কিন্তু একেবারেই হাঁপিয়ে উঠলাম। এত কম অক্সিজেনে আমাদের মত সমতলের মানুষদের আসলেই চলে না।


সূর্য ডোবার আগে হোটেলের সামনের ছোট একটা দোকানের সামনে পাতা চেয়ারে আড্ডা জমানো হল। চা খেতে খেতে পাহাড়ে চোখ বোলানোর পাশাপাশী চারপাশের নীরবতাটা উপভোগ করলাম। পর্যটনের পূর্ণ মৌসুম চলছে এখন। সেটাও মাত্র চার মাস স্থায়ী হবে। সে তুলনায় পর্যটকের সংখ্যাটা বেশ কমই মনে হল। চা শেষে কিলং এর একমাত্র বাসস্ট্যান্ডটার দিকে হাঁটলাম। এখান থেকে মানালী আর লেহ’র উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়। মেঘের আড়ালে সূর্যের দেখা পেলাম না। তবে মেঘের রঙ জানান দিল- এখন সূর্যাস্ত। ঘড়িতে সময় প্রায় আটটা! আমাদের দেশের সময়ে সাড়ে আটটা। যত উত্তরে যাচ্ছি দিনটা ততই বড় হচ্ছে।



খাওয়ার জন্য সাজানো তাঁবু এবং কিলং বাসস্ট্যান্ড


রাহুল ভাই মনে করিয়ে দিলেন তাড়াতাড়ি যাতে ঘুমিয়ে পড়ি। ভোর চারটার মধ্যে রাস্তায় উঠতে হবে। বের হতে দেরী হয়ে গেলে বরফ গলা পানি রাস্তা বন্ধ করে দিবে। ভয়ংকর সাবধানবানী! কিছুক্ষণ টেলিভিশন দেখে সময় কাটালাম। একটা লোকাল চ্যানেলে খুব লেইম কিছু লোকাল ভিডিও গান চলছিলো। সবাই মিলে এসব দেখার মজাই আলাদা! খাবারের ডাক পড়তেই ছুটলাম নীচে। বাকি কি কি আইটেম ছিল ওসবের ধার কে ধারে! সবচেয়ে বড় কথা হল টেবিলের মাঝখানটায় সাজানো আছে বেশ বড় একবাটি মুরগীর মাংস! মাংসের পরিমানটা এতই বেশী ছিল যে শেষ টুকরোটা কে খাবে তার জন্য রীতিমত সাধাসাধি করতে হল!


ডিনার


তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে তুলতে পছন্দের কোন একটা মুভির ডায়লগ মনে পড়ে গেল



I love birds,

.........................................

If they are cooked properly.


*কিছু ছবি আয়াজ এবং রাবার তোলা

এরপরের লেখাঃ ভারতভ্রমণঃ কিলং টু সারচু
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৫ রাত ৮:৫৭
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×