somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাশেদ অনু
নিজের সম্পর্ক নিজে বলার মতো যোগ্যতা এখনো হয়নি। শুধু এটুকুই বলতে পারি লিখতে ভালোবাসি, পড়তে ভালোবাসি, দেখতে ভালোবাসি, শুনতে ভালোবাসি, বলতে ভালোবাসি এবং বুঝতে ভালোবাসি। বাকিটা না হয় পরিচয় হওয়ার পর জেনে নেয়া যাবে।

স্বাস্থ্য সমাচার- ৭ম পর্বঃ নারীদের হৃদরোগ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

১৫ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আপনি জানেন কি ?
প্রতি বছর হৃদরোগে আক্রান্ত যে পরিমাণ নারী মৃত্যুবরণ করেন তার পরিমাণ ক্যান্সারজনিত কারনে মৃত্যুর চেয়ে অনেকগুণ বেশি।
পুরুষদের তুলনায় নারীদের হৃদরোগে আক্রান্তের প্রথম বছরে মৃত্যুর হার বেশি।
হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারনগুলোর একটি হলো ডায়াবেটিস।

প্রখ্যাত কার্ডিওলোজিস্ট Nicea Goldberg, MD, director of the Women's Heart Program at NYU Medical Center এর মতে ,"বেশিরভাগ নারী মনে করে হৃদরোগের চেয়ে স্তন ক্যান্সার বা যেকোন ব্রেস্ট ডিজিস বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মৃত্যুঝুঁকির দিক দিয়ে হৃদরোগ রয়েছে এক নম্বরে, এমনকি কম বয়সের মেয়েদের ক্ষেত্রেও। দুঃখজনক হলেও এ ব্যাপারে তেমন সচেতনতা গড়ে উঠছে না। "
Dave Woynarowski, MD, , an internal medicine specialist from West Reading, Pa. বলেন ,"আপনি আঁতকে উঠবেন যখন হার্ট এটাকে আক্রান্তের হার এবং এর ফলে মৃত্যুর হার মিলিয়ে দেখবেন, আর তখনই বুঝতে পারবেন কেন এটা এতো গুরুত্বপূর্ণ।"

এবার চলুন জেনে নেয়া যাক, নারীদের হৃদরোগ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ

১। রক্তচাপ আর কোলেস্টেরল লেভেল স্বাভাবিক থাকা মানেই হৃদরোগ থেকে নিরাপদ নয়।
অনেকেই মনে করেন, আমারতো হাই প্রেশারও নেই, কোলেস্টেরল লেভেলও স্বাভাবিক। আমার হার্টের কোন সমস্যা হবার সম্ভাবনা নেই। এটা সম্পুর্ন ভুল ধারনা। কেননা, হৃদরোগ নির্ণয়ে রক্তচাপ আর কোলেস্টেরল লেভেল যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি ফ্যামিলি হিস্ট্রি মানে পরিবারের আর কারো এধরনের সমস্যা আছে কিনা, রক্তে শর্করা বা সুগারের উপস্থিতি, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজনও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই যাদের এ ধরনের সমস্যা রয়েছে তাদের উচিত নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চেকআপ করানো ।



২। যেকোন বয়সের মেয়েদেরই হৃদরোগ হতে পারে ।
হৃদরোগ সম্পর্কে একটা বড় ভুল ধারনা হলো, যাদের বয়স কম তাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো নিয়ে চিন্তা না করলেও হবে। কম বয়সি মেয়েদের ইস্ট্রোজেনসহ অন্যান্য হরমোন থাকে বলেও অনেকের এই ধারনা হয়ে থাকে। এটা সম্পুর্ন ভুল। আমেরিকান হেলথ এ্যাসোসিয়েশন এর মতে হৃদরোগের কারনে প্রতি বছর ৪০০০০ এরও বেশি নারী হাসপাতালে ভর্তি হয় ,এদের মধ্যে ১৬০০০ এরও বেশি মৃত্যুবরণ করে থাকে এবং এদের সবার বয়স ৫৫ বছরের নিচে। তাই মনে রাখতে হবে, যেকোন বয়সেই নারীদের হৃদরোগে আক্রান্তের ঝুঁকি থাকে।



৩। নারীদের গর্ভকালীন সময়ে যদি উচ্চ রক্তচাপ, প্রিএক্লাম্পশিয়া, খিঁচুনি বা ডায়াবেটিস হয়ে থাকে তবে পরবর্তী জীবনে হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে।
নারীরা গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন জটিলতায় ভুগে থাকেন যেমন, উচ্চ রক্তচাপ, খিঁচুনি, ডায়াবেটিস ইত্যাদি। তাদের মনে একটি ভ্রান্ত ধারনা থাকে যে, প্রসব পরবর্তী সময়ে এসব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এখন আমরা জানি যে এই রোগগুলো ভবিষ্যতে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ৪০ থেকে ৫৫ বছরের নারীরা যখন চিকিৎসকের কাছে হিস্ট্রি দেন তখন তারা প্রসবকালীন এ সমস্যার কথাগুলো এড়িয়ে যান বা অগুরুত্বপূর্ণ বলে ভুলে যান। কিন্তু হৃদরোগ নির্ণয়ে এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সঠিক এবং পরিপূর্ণ হিষ্ট্রি রোগের সঠিক নির্ণয় ও এর জীবন রক্ষার্থে অনেক প্রয়োজনীয় একটি বিষয়।



৪। হৃদরোগের লক্ষণগুলো সম্পর্কে সবসময় সচেতন থাকতে।
হৃদরোগের সাধারণ লক্ষণগুলোর পাশাপাশি মহিলাদের আলাদা কিছু লক্ষণ দেখা যেতে পারে। এ ব্যাপারে জানতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বুকের মাঝ বরাবর ব্যথা শুরু হয় যা কয়েক মিনিট পর্যন্ত থাকতে পারে অথবা বারবার ফিরে আসতে পারে। শুধু যে ব্যথাই হবে এমন নয়, এর বদলে অস্বাভাবিকতা, চাপ দিয়ে ছেড়ে দেয়ার অনুভূতি, বুক ভারি লাগার অনুভূতিও হতে পারে। এছাড়া ব্যথা বা যেকোন প্রকার অস্বাভাবিকতা ছড়িয়ে পড়তে পারে দুই হাতে, ঘাড়ে, চোয়ালে, পিঠে এমনকি পেটে পর্যন্ত। শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে , এটা বুকে ব্যথার সাথেও হতে পারে আবার আলাদাও হতে পারে। অন্যান্য লক্ষণগুলোর মাঝে আছে গা বেয়ে ঠান্ডা ঘাম, মাথাব্যথা, মাথা ঘুরানো।



নারীদের এসব সাধারণ লক্ষণ ছাড়াও অতিরিক্ত দুর্বলতা, চোয়াল, পিঠের উপরের দিকে, কাঁধে ব্যথা হতে পারে, এছাড়া পেটেও ব্যথা হতে পারে।মহিলাদের নিজেদের দৈনিক কর্মক্ষমতার প্রতি সচেতন হতে হবে। ধরুন, আপনি প্রতিদিন সকালে ৫ মেইল করে দৌড়ান, কিন্তু ইদানিং আর আগের মতো শক্তি বা দম পাচ্ছেন না, ১ মেইল দৌড়ানোর পরি হাপিয়ে যাচ্ছেন। কিংবা ঘরের বা অফিসের কাজ আর আগের মতো করতে পারছেন না, অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠছেন,এর সাথে মাথা ঘুরানো, বমিবমি ভাব কিংবা বারবার বমি হওয়া সাথে পেটে ব্যথা কিংবা পেটে কোন সমস্যা হলে সাথে সতর্ক হোন। তাই যখনই এসব লক্ষণ প্রকাশ পাবে, সময় নস্ট না করে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে জরুরি ভিত্তিতে।



৫। পালপিটেশন বা বুক ধরফর করা কিংবা হার্টবিট বেঁড়ে যাওয়া মানেই যে সবসময় হার্ট এটাকের লক্ষণ এমন নয়।
বুক ধরফর করা কিংবা হার্টবিট বেঁড়ে যাওয়া মানেই যে সবসময় হার্ট এটাকের লক্ষণ এমনটা কিন্তু নয়। এগুলো মহিলাদের মেনোপজের সময় হরমোনের জন্য হতে পারে আবার থাইরয়েডের সমস্যা,অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, কাজের চাপ, অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় যেমন চা, কফি খাবার জন্যও হতে পারে। কিন্তু এসব লক্ষণকে অবহেলা করবেন না। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে হয়তো লক্ষণ প্রকাশের পূর্বেই আপনার রোগ নির্ণয় সম্ভব।



৬। শরীরের তাপমাত্রা যে শুধুমাত্র মেনোপজের সময়েই বৃদ্ধি পারে এমন হয়।
মহিলাদের মেনোপজের আগে এবং পরে সাধারনত শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে, যাকে হট ফ্ল্যাশ বলা হয়। এটা অনেকটা জ্বর জ্বর লাগার মতো বা হঠাৎ করে গরম লাগার অনুভূতি। কিন্তু এটা শুধু মেনোপজের সময়ই না, হৃদরোগের সাথেও এটা সম্পৃক্ত।
খেয়াল রাখতে হবে এটা কখন হচ্ছে এবং কিভাবে হচ্ছে। ধরুন আপনি বসে টেলিভিশন দেখছেন বা ফোনে কথা বলছেন, তখন যদি এমন হয় তাহলে আমরা এটাকে হরমোনজনিত বলে ধরে নিতে পারি। কিন্তু পরিশ্রমের কোন কাজ করার সময় এমন হলে এটা হৃদরোগজনিত হতে পারে। এর সাথে যদি ফ্যামিলি হিস্ট্রি থাকে হৃদরোগের বা উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টেরল লেভেল বেশি থাকলে অতিসত্বর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।



৭। ধূমপান হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়
ধূমপানের ফলে স্বাভাবিকের তুলনায় হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীরা প্রায় ১৯ বছর আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। ধূমপান ছেড়ে দেয়ার ফলে হৃদরোগের ঝুকিও তাই বহুলাংশে কমে যায়। আর ধূমপান ছাড়ার জন্য শুধু একটি জিনিস লাগবে , তা হলো ইচ্ছাশক্তি। আর কিছুই নয়।



তথ্যসূত্রঃ www.webmd.com

হৃদরোগ বিষয়ে আরো জানতে পূর্বে প্রকাশিত এই পোষ্টগুলো দেখতে পারেন
স্বাস্থ্য সমাচার- ৩য় পর্বঃ জেনে নিন হৃদরোগীদের খাবার
স্বাস্থ্য সমাচার- ১ম পর্বঃ জেনে নিন হার্টব্লকের খুঁটিনাটি সবকিছু
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৫৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×