somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুলির হাসি (অনুগল্প)

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১.
প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার দুটো কারণ থাকে । এক, একাউন্টিং ক্লাস , দুই, তুলির হাসি। শুধু ক্লাসের সময় টুকু বাদে বাকি সময় আড়চোখে বা যে কোন কারনেই হোক তুলির দিকে তাকাতেই হবে। ওর হাসি দেখতেই হবে। অনেকে হাসে শুধু ঠোঁটে লেগে থাকে, কিন্তু তুলির হাসলে গালে পরে টোল, আর হাসি রূপোলী আভা নিয়ে ছড়িয়ে পরে ওর চোখে, মুখে, ঠোঁটে। আহ ! ঠোঁট ! ভাবতেই কেমন যেন লাগে ! ঝড় তোলে বুকের ভেতর। তবুও ইচ্ছা কোন রকমে চাপা দিয়ে রাখতে হয়। এ ইচ্ছার কথা বলা যায়না। তবুও কল্পনায় , দিবা স্বপ্নের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে মিশে থাকে তুলির হাসি। ও হাসি দেখে মরতেও পারি। আচ্ছা তুলি কি এসব কিছু বোঝেনা? নাকি বুঝেও , না বোঝার ভান করে ?
ক্লাস শেষে আমতলাতে কখন থেকে দাড়িয়ে আছি আর কতক্ষণ তুলির মাঝে ডুবে আছি জানিনা। হুস ফিরল সুমনের ধাক্কায়। "কিরে নয়ন, এখানে এতক্ষণ দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি ভাবছিস?" কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
"নাহ। কিছু না।"
"কি হল তোর? কয়েকদিন পর্যন্ত দেখছি তোর মতিগতি বেশি ভালো না। কাউকে ভালো লেগেছে নাকি ? " হাসতে হাসতে বলছে সুমন।
"না। এমনি।" মিথ্যা বলার অপচেষ্টা। তবুও সুমনের নজর এড়াতে পারলাম কিনা জানিনা।
"চল। আজ সিনেমা দেখব। "
"সিনেমা! হঠাৎ ? কি সিনেমা ? "
"ভণ্ড বাবা " খিক খিক করে হাসতে হাসতে বলল সুমন । আমিও ওর হাসির সাথে যোগ দিলাম । কিসব সিনেমার নাম "ভণ্ড বাবা, ল্যাংড়া মাসুদ, টোকাই মাস্তান"। ও হ্যা, সিনেমার নাম যেমনই হোক দেশি সিনেমার প্রতি একটা টান আছে আমাদের এই দুই বন্ধুর বলা যায় । তবে দেশপ্রেম থেকে নয়।
২.
কদিন থেকে বড্ড জ্বরে ভুগছি। ক্লাস করতে পারছি না। এর মধ্যেই আর ওর হাসিও দেখতে পারছি না। দিন রাত মাথার কাছে বসে আছে মা। এর মধ্যে সুমন, সজিব, মিঠু এসে কয়েকবার দেখে গিয়েছে। এই জ্বরের ঘোরে অবশ্য সময় কেটেছে স্বপ্নের ভেতর। স্বপ্ন জুড়ে তুলি। শুধু তুলি। স্বপ্নে ওকে দেখি। একেবারে চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে দুজন। হাত ধরি। কি নরম হাত তুলির ! ওর টোল পরা গাল দেখি। ওর চোখের হাসি দেখি। "এত সুন্দর করে হাস কেন তুলি?" আনমনেই জিজ্ঞেস করি। ও জবাব দেয়না। শুধু হাসে, মাঝে মাঝে চিমটি কাটে আমার হাতে। কোন ব্যাথা নেই। ওকে ছুয়ে দেখি বারবার। স্বপ্নের মাঝে এই ছুয়ে দেখার অনুভুতি কেমন হয় জানিনা। তবে স্বপ্নের মাঝেই আমি অনুভব করি। একবার, দুবার। এভাবে বারবার। তুলি বারবার আমার কাছে আসে। হাসে। হাসতে হাসতে গড়িয়ে পরে আমার বুকে। মুখ লুকায়। ওর তপ্ত নিঃশ্বাস অনুভব করি বুকের মাঝখান টাতে । আমিও জড়িয়ে ধরি। শক্ত করে। তুলিও তপ্ত নরম মোমের মত গলে যায়, বুকের মাঝে। ও ঠোঁট বাড়ায়, ভেজা তৃষ্ণার্ত ঠোঁট । আমিও বাড়াই। মিশে যাই, গভির থেকে আরও গভিরে। উষ্ণতা ছড়িয়ে পরে প্রতি লোমকূপে । প্রতিটি কোষে। জন্ম নেয় নতুন নতুন সুখের কণা । উষ্ণ সুখের কণা।
৩.
জ্বর সেরেছে দুদিন হল। গত দুই সপ্তাহ ভুগেছি। একটু ভালো লাগতেই ঘরে থাকার আর ইচ্ছা হচ্ছিল না। কলেজে যাবার নাম করতেই শুনতে হল, বকুনি। তাই দুদিন রেস্ট নিয়ে নিজেকে একটু চাঙ্গা করে নিলাম। সাইকেল নিয়ে বের হতেই পেছন থেকে মায়ের গলার আওয়াজ ভেসে এলো "সবাধানে যাইস"। "ঠিক আছে" বলেই এগুলাম পথ ধরে। তবে কে শোনে কার কথা। কতদিন হল তুলিকে দেখিনা। তাড়াতাড়ি না গেলে হবেই না।
কলেজে আসতেই দেখা গেল কলেজে তুলনামুলক ছেলেমেয়েদের আনাগোনা একটু বেশি। ছেলেমেয়ে শুধু না বয়স্ক লোকদেরও আনাগোনা বেশি । গেট দিয়ে ঢুকেই বা পাশে শহীদ মিনারের পাশে বড় জটলার মধ্যেই দেখা সুমন আর মিঠু কে। ডাক দিতেই এগিয়ে এলো ওরা।
"কিরে শরীর ভালো ? " মিঠুই আগে জিজ্ঞেস করল ।
"হুম একটু ভালো"
"দোস্ত, ঘটনা তো একটা ঘটে গেছে" হাসতে হাসতে পাশ থেকে বলল সুমন।
"রাখ তোর ঘটনা। ব্যাপার কিরে ? এত লোকজন কেন এখানে । "
"তুই থাকস কই ? এই ঘটনাই তো বলছি। " সুমনের জবাব।
"কি?"
"ডিগ্রীর তারেক ভাই তো ধরা খাইছে।"
"ধরা খাইছে মানে ? "
"মানে বুঝস না ? মানে হল, তিনি আর আমাদের তুলি ম্যাডাম ফাঁকা ক্লাসে ছিল। এই সুযোগে সামথিং কিসিং টিসিং করার ফাকে ঢুকছে ডিগ্রীরই সিহাব ভাই। ব্যাস, আর যায় কই? চিল্লায়া সব ছরাইছে।" সুমন হাসছে। খচ্চরের মত।
তবে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দুলছিল আমার। তবুও কোন রকমে নিজেকে ধরে রাখলাম নিজেকে। বললাম " সিহাব ভাইর এত কিছু করার দরকার ছিল কি ?"
"আর বলিস না। গত কয়দিন ধরে সিহাব ভাই তুলিকে প্রস্তাব দিয়েই যাচ্ছিল। পাত্তা পায় নাই। এখন এই ঝাল ঝাড়ল । " কিছুটা বিরক্ত ঝরে পরল সুমনের কথায় । কান থেকে যেন আগুনের হলকা বের হচ্ছে, মাথা দুলছে। আর কোন ভাবে পারলাম না দাড়িয়ে থাকতে। কোন রকমে সুমনের হাত ধরে, একটু পাশে গিয়ে মিনারের সিঁড়িতে গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ ঝিম মেরে থাকার পর , একটু হালকা হতেই দেখলাম পানি হাতে নিয়ে মিঠু দাড়িয়ে আছে। ঢক ঢক করে, ঢাললাম গলায়। আশে পাশে লোকজনের আনাগোনা বেশি দেখে খারাপ লাগছে। ভাবছি "এত কিছু কি করার দরকার ছিল সিহাব ভাইর ?" পাশ থেকে সুমনের গলার সর ভেসে এলো "ঐ দেখ দেখ, তুলি আসছে গেটের দিকে।" তাকালাম ওর দিকে, আশে পাশে কয়েকজন বান্ধবী মিলে ধরে নিয়ে এগিয়ে আসছে। হয়তো, বাসায় চলে যাবে। ও কাঁদছে খুব, মুখ ঢেকে রেখেছে দু হাতে। আমি তাকিয়ে আছি এক নজরে। ওকে ভালবেসেছি, গোপনে । কেউ জানেনি। তবুও বেসেছি। ওকে নিয়ে ভেবেছি। ওর হাসিতে আমার হৃদয়ে ঝড় তুলেছে। আর আজ তুলি কাঁদছে। অথচ এসেছিলাম তো ওর হাসি দেখতে। চোখের জল তো নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৭
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×