somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপূর্ণতা

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুজন ই ঘাসের দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কারও দিকে তাকাচ্ছে না। চুপচাপ সময় চলে যাচ্ছে সেই দিকে তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। টিএসসি চত্তরের সন্ধার আলো জ্বালিয়া দেয়া হয়েছে। বইমেলার দিন গুলোতে টিএসসিতে প্রচণ্ড ভিড় জমে। তার উপর আজ আবার শুক্রবার, সরকারি ছুটির দিন। চারিদিক কোলাহল পূর্ণ, কিন্তু সেই কোলাহল তাদের বিন্দু মাত্র স্পর্শ করছে না। অনেক পুনর্মিলন ই আছে মানুষকে নির্বাক করে দেয়। মনে করিয়ে দেয়, ইস আমি যদি আর একটু সাহস করতাম তাহলে আজ অন্য রকম কিছু হত।
‘আমি ভাবতেও পারিনি আজ এভাবে তোমার সাথে এখানে দেখা হয়ে যাবে’, বলে আনিস নিরবতা ভাঙল। মীরা বলল, আমি জানতাম দেখা হবে।
- কীভাবে জানতে?
- তুমি বই মেলা মিস দেয়ার মানুস নও। তাই আমি মনে মনে ভাবছিলাম তোমার সাথে দেখা হলেও হয়ে যেতে পারে।
বলেই মীরা একটা হাসি দিল। সেই চিরচেনা হাসি।
মীরা কেমন যেন বদলে গেছে । আগের মত চঞ্চলটি আর নেই। এখনও আগের মত সুন্দরই আছে, শুধু চোখের নিচে হালকা কালি জমেছে। তবুও আনিস এর মনে হচ্ছে কি যেন নেই। সময় এর বাবধানে আজ সে হইত পর হয়ে গেছে, তবুও মীরা আনিসের সেই কাছের মানুষটিই হয়ে আছে। মীরাকে দেখার পর হতেই আনিসের মন খচখচ করছে। মনে হচ্ছে দেখা না হওয়াই বোধহয় ভাল ছিল।
মীরা ঘাসের উপর ছড়ান আনিসের হাতের লম্বা আঙ্গুলের দিকে তাকিয়ে আছে। এই তো কয়েক বছর আগের কথা, কতো আনায়াসেই না এই হাত টি ধরে ফেলত। আর এখন একবার ধরার জন্য সাতবার চিন্তা করতে হচ্ছে।

কিন্তু মীরা ঠিক করেছে আজ আর আগে পিছে চিন্তা করবে না। ‘হোক না অপরাধ, জীবনে তো অনেক অপরাধই তো করলাম” চিন্তা করতে করতে মীরা আনিসের হাত টি ধরল। আনিসও হাত টি সরাল না। এই স্পরশের জন্য আনিসও বহুদিন যাবত তৃষ্ণার্ত ।
মীরা বলল, তোমার হাত টি ধরে কোন অপরাধ করলাম নাতো?
আনিস বলল, মাঝে মাঝে কিছু অপরাধ স্ব-ইচ্ছায় করতে হয়।
- অপরাধ করলে করেছি এতে আমার কিছু যায় আসে না। আমার আরেকটা অপরাধ করতে খুব ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে তোমার দু গালে হাত রেখে আদর করতে।
উত্তরে আনিস শুধুই হাসল। এই হাসির আড়ালে যে কতো প্রশ্ন আর কতো উত্তর লুকিয়ে আছে কেউ তা জানে না।
- তোমাকে নিয়ে সব স্বপ্নই তো অপূর্ণ থেকে গেল, এটাও না হয় অপূর্ণ থাকল।
আনিস বলল, যদি সত্যি সত্যি টাইম মেশিন থাকত তাহলে অতীত এ গিয়ে সব ভুল শুধরে নিতাম।
মীরা বলল, কখনো কখনো সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে তোমার কাছে চলে যেতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে তোমার জন্য কলঙ্কিত হতে। কিন্তু সাহস পাই না।
আনিস চুপ করে ঘাসের দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবছে সেই সব দিন গুলোর কথা। যখন তার কিছুই করার ছিল না। না ছিল অর্থ সম্পদ, না ছিল সমাজ কে উপেক্ষা করার সাহস।

কখনো কখনো সময় মানুষকে নিঃস্ব করে দেয়। আজ আনিসের একটা ভাল চাকুরী হয়েছে, মাস শেষে ভাল বেতনও পায়। তবুও কি যেন নেই, সন্ধ্যা হলেই বুকটা ফাকা হয়ে থাকে। সে আজ সেই বিশ্বাস ঘাতক সময়ের কারনেই আজ নিঃস্ব।
আনিসের চোখের কোনে পানি দেখে বিষয় পালটানোর জন্য মীরা ধরা গলায় বলল, তুমি তোমার শরীরের যত্ন নেও না? বেশী করে ফল খাবে। একদিন পর পর আলু খাবে, না হলে শরীরে মেদ জমবে। বলেই মীরা চুপ হওয়া গেলো।
আনিসের মোবাইল বেজে উঠলো। অফিস এর বস ফোন করেছে। তারও বই মেলাই আসার কথা। স্যার এর সাথে মোবাইল কথা বলে আনিস মীরা কে বলল, তুমি আমাকে পাঁচ মিনিট সময় দিবে? আমি স্যার এর সাথে দেখা করে আসি। তুমি কোথাও যেও না।
আনিস অনিচ্ছা সত্তেও উঠে যাচ্ছিল, তখন মীরা তাকে ডেকে বলল, “আমার সব ইচ্ছেই অপূর্ণ থেকে গেলো। তাই আমি চাই,তোমার মেয়ে হলে নাম রাখবে ‘পূর্ণতা’। যেন সে অন্তত নামের মাঝে পূর্ণতা খুজে পায়”।
আনিস তার হাতের খামটা দেখিয়ে বলল, চিঠিটা দিয়েই আসছি, তুমি বস কোথাও যেও না।
অপেক্ষা করবে কিনা চিন্তা করতে করতেই মীরা তার ব্যাগ হতে কাগজ কলম বের করে আনিসকে চিঠি লিখতে লাগল। সেই আগের দিনের মত, যখন সে কথায় কথায় আনিস চিঠি লিখত।
‘আনিস,
তুমি মনে করছ আজকের দেখাটা কাকতালীয়। কাকতালীয় তোমার কাছে হতে পারে, আমার কাছে না। তোমার সাথে দেখা হতে পারে ভেবে আমি প্রতিদিনই বই মেলায় এসেছি। সম্ভাবনা কম ছিল। কিন্তু সেই কম সম্ভাবনার মূল্যও আমার কাছে অনেক বেশী। তোমাকে দেখার তৃষ্ণায় আমি ছটফট করছিলাম। আমার খুব ইচ্ছে করে তোমাকে নিয়ে দূরে কোঁথাও চলে যেতে, যেখানে তোমার কাছে চলে যাওয়ার অপরাধে আমাকে কলঙ্কিত করার কেউ থাকবে না। কিন্তু সত্য বড় কঠিন। সত্যের বাঁধনে আজ দুজনই বাঁধা। তোমাকে নিয়ে সুখী হওয়ার বড় ইচ্ছে ছিল আমার। এখন আর সম্ভব না। তুমি সুস্থ ও সুখী থাকলেই আমি সুখী হব। অন্তত এই সুখটা তো তুমি আমাকে দিতে পার, তাই না? আমার ঠিকানায় চিঠি দিও। তোমার চিঠির অপেক্ষায় থাকব। ভাল থেকো
-তোমার মীরা”
মীরা চিঠিটা লিখে যেখানে বসে ছিল সেখানে রেখে দিল। দ্রুত সরে গেলো সেখান হতে। দূর হতে অশ্রু সিক্ত ঘোলা চোখে লুকিয়ে তাকিয়ে থাকল চিঠিটার দিকে।

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:২২
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×