somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজনীতির পথে প্রান্তে : ১৪ ও ১৫ আগস্টের স্মৃতি কোনদিন ভোলা যাবে না

১৫ ই আগস্ট, ২০০৯ সকাল ৭:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ফকীর আবদুর রাজ্জাক
দিন তারিখ ও পত্রিকায় রুটিন অনুযায়ী এ লেখাটি বেরুবে ১৫ আগস্ট। স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় শোক দিবসের সেই দুঃখজনক স্মৃতির কথা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। '৭৫-এর ১৫ আগস্টের ঘটনা ছিল আকস্মিক, ভয়াবহ এবং নারকীয়। গোটা জাতি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। আমরা কর্মীরা সেদিন হতবাক, দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। সাহসে ভর করে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম। তারপরও আমরা সেদিন থেমে যাইনি, লেজ গুটিয়ে গুহায় প্রবেশ করিনি। ধানম-ি ৩২ নম্বর রোডের ওই ইতিহাসখ্যাত বাড়ির নারকীয় হত্যাযজ্ঞের প্রথম ধাক্কা সামলে নিয়েই আমরা কতিপয় যুবক আবার একত্রিত হয়ে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে, আমাদের সেই প্রচেষ্টা এক পর্যায়ে সফল হয়েছিল। আওয়ামী লীগ আবার পুনজ্র্জীবিত হয়েছিল এবং আশির দশকে এসে তা আবার দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে কখনই বোধহয় ভাবতেন না_ দেশে তার জীবন সংহারের মতো শত্রু রয়েছে। পাকিস্তান ও তার সহায়তাকারী সৌদি আরব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা শক্তিকে উপেক্ষা ও পরাজিত করেই পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল। পরাজিত শক্তি কখনই বাংলাদেশকে ও তার মহান নেতৃত্বকে স্বাভাবিক বাস্তবতা হিসেবে মেনে নিতে পারেনি বা ভবিষ্যতেও পারবে না। এই সহজ কথাটি '৭১-এর মহান বিজয়ের পর আওয়ামী লীগের এক শ্রেণীর নেতৃত্ব গভীরভাবে চিন্তা করেনি। ফলে আওয়ামী লীগ এমনকি রাষ্ট্রযন্ত্রও যে কোন আঘাত প্রতিহত করার কোন পদক্ষেপও আগে থেকে নেয়নি। যার দরুন '৭৫-এর ১৫ আগস্টের আঘাতের পর দলটির বাকি নেতৃত্ব আত্মরক্ষার জন্যই মরিয়া হয়ে উঠেছিল, আঘাতের প্রতিঘাত বা প্রতিশোধ নেয়ার মতো কোন সাহসই সেদিন তারা দেখায়নি। দলটির এই অযোগ্যতার কারণে যে ট্র্যাজেডি গোটা জাতিকে সেদিন আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল যার রেশ এখনও কাটেনি, বাঙালির ইতিহাস থেকে কখনই তা মুছে যাবে না। ব্যর্থতা ও কলঙ্কের বোঝা বইতে হবে চিরকাল।

'৭৫-এর ১৫ আগস্ট ছিল শুক্রবার। এই দিনের কিছু স্মৃতির কথা বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় লিখেছি। দিনটি সমাগত হলেই সেসব স্মৃতি এখনও আবিষ্ট করে। ১৫ আগস্টের ঘটনার রাতে প্রায় একটার দিকে বাসায় ফিরি। তখন শেখ ফজলুল হক মনির আরামবাগের বাসায় আমি পরিবার নিয়ে থাকতাম। ভোররাতে ফজরের নামাজ থেকে বাসায় ফিরে আমার শ্বশুর সাহেব প্রথম আমাকে ডেকে উঠিয়ে খবরটা জানালেন। ওই সময় তিনি বেড়াতে এসেছিলেন ঢাকায়। বললেন_ মসজিদে সবাই বলাবলি করছে, শেখ সাহেবকে নাকি মেরে ফেলা হয়েছে। পরিবারের কেউই নাকি বেঁচে নেই। তাড়াতাড়ি উঠে রেডিওটা চালাতেই মেজর ডালিমের কণ্ঠ ভেসে এলো। দম্ভের সঙ্গে ঘোষণা করছে_ স্বৈরাচারী শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে- ইত্যাদি। সব কিছু চোখের সামনে ঝাপসা হয়ে গেল। চিৎকার করে কাঁদতেও পারলাম না। নিজেকে সংবরণ করে সূর্য ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। ঘটনার আগের কয়েকমাস আমরা দারুণভাবে ব্যস্ত ছিলাম নবগঠিত বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগের কাজকর্ম নিয়ে। আগের দিন অর্থাৎ ১৪ আগস্ট ছিল 'সরকার ও দলের নেতৃত্ব' সম্পর্কে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। দল বেশি গুরুত্বপূর্ণ নাকি সরকার বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেই ব্যাপারে প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান বক্তা ছিলেন বাকশালের অন্যতম সম্পাদক শেখ ফজলুল হক মনি। তার সেদিনের বক্তৃতা ছিল অনবদ্য এবং ঐতিহাসিক। বক্তৃতার প্রসেডিং লেখার জন্য একটি টিম গঠন করা হয়েছিল কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদের নেতৃত্বে। সঙ্গে ছিলাম সৈয়দ আহমদ ও আমি। মনি ভাইয়ের বক্তৃতা প্রায় শেষের দিকে সৈয়দ আহমদ ভাইকে কেউ বাইরে থেকে ডেকে পাঠাল। একটু পরে তিনি ফিরে এসে টেবিল থেকে আমাকে ডেকে নিয়ে গেলেন। এক যুবক ভদ্রলোকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে যা বললেন তাতে গা-শিউরে ওঠার মতো। ওই ভদ্রলোক মুক্তিযুদ্ধের সময় সৈয়দ আহমদ ভাইয়ের কর্মী ছিলেন। তখন সে বেসামরিক গোয়েন্দা বাহিনী বোধহয় এনএসআই-এর সদস্য ছিলেন। তিনি জানালেন, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে চাকরিচ্যুত এবং চাকরিরত বেশকিছু সামরিক অফিসার কী যেন ঘোট পাকাচ্ছে এবং তাদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। কিছু একটা করতে যাচ্ছে তারা এবং আজকের রাতেই এমন খবর জেনেছে তারা।

কি ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে সে সম্পর্কে জুলাই-আগস্টে নানা ধরনের গুজবে তখন বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল। ওই ভদ্রলোকও জানালেন তারা খবর পেয়েছে_ ক্যু হতে পারে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ওপরও আঘাত করা হতে পারে। যা হোক, ঠিক করলাম মনি ভাইকে বিষয়টি এখনই জানাতে হবে এবং বঙ্গবন্ধুর কানেও এ কথাটি তোলা দরকার। প্রশিক্ষণের সব কাজ সেরে মনি ভাই বেরুলেন রাত প্রায় ৯টার দিকে। আমরা ক'জন অর্থাৎ সৈয়দ আহমদ, সুলতান শরীফ, সফিকুল আজিজ মুকুল ও আমি মনি ভাইয়ের গাড়ির পাশেই ছিলাম। সৈয়দ আহমদ ভাইকে মনি ভাইয়ের গাড়িতে তুলে দিয়ে আমরা সুলতান শরিক ভাইয়ের গাড়িতে তাদের অনুসরণ করলাম। সৈয়দ ভাই যথারীতি মনি ভাইকে বিস্তারিত ক্যান্টনমেন্টের ঘটনাবলি জানিয়েছেন। মনি ভাইয়ের গাড়ি ধানম-ির ৩২ নং সড়কে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাড়িতে গিয়েই পেঁৗছলো, পেছনে পেছনে আমরা। গাড়ি থেকে নেমে মনি ভাই আমাদের উদ্দেশ করে বললেন, তোমরা অপেক্ষা কর, আমি মামাকে সব কথা জানিয়ে ফিরে আসছি। রাত প্রায় ১১টার দিকে মনি ভাই ওপর থেকে নিচে নেমে এলেন। আমরা সাবই মনি ভাইয়ের বাসায় ফিরে এলাম। ঢাকা মহানগরীর সম্পাদক হওয়া না হওয়ার ব্যাপারে মোস্তফা মহসীন মন্টুর নেতৃত্বে একটি দল ক্ষুব্ধ মনোভাব নিয়ে আগে থেকেই মনি ভাইয়ের বাসায় অপেক্ষা করছিল। আমরা আর বাড়ির ভেতরে না গিয়ে মনি ভাইয়ের বাসার লনেই কথাবার্তা বলে সময় কাটাচ্ছিলাম। মন্টু সাহেবদের বিদায় করে দিয়ে মনি ভাই আবার বাসার উপরে চলে গেলেন। পরে নিচে নামলেন শুধু গেঞ্জি-লুঙ্গি পরে রাত বারোটার দিকে। দু'চারটা কথা বলার পর নিজেই আমাদের বিদায় দিয়ে গেটটা বন্ধ করলেন। শুধু মুখে বললেন- মামাকে সব বলেছি, তিনি বলেছেন, দেখছি আমি। তবু আমরা মনি ভাইকে অনুরোধ জানালাম, আজকের রাতটা কি আপনি বাইরে কোথাও থাকতে পারেন না? বললেন_ নাহ, তোমরা চিন্তা করো না। এটাই ছিল শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে আমাদের শেষ সাক্ষাৎ ও কথাবার্তা।

সুলতান শরিফ ভাই সৈয়দ আহমদকে প্রথমে এলিফ্যান্ট রোডে তার বাসায় নামিয়ে মুকুল ও আমাকে নিয়ে চলে এলেন আরামবাগে। আমি নেমে যাওয়ার পর মুকুলকে মতিঝিল কলোনিতে নামিয়ে তিনি ফিরে গিয়েছিলেন তার বাসা ইস্কাটনে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই ভোররাতে শুনি ওই মর্মন্তুদ হত্যাকা-ের খবর। এনএসআই-এর ওই সদস্যের মাধ্যমে আমরা যে খবর পেয়েছিলাম তা যে কত সত্যি ছিল তা কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই প্রমাণিত হয়েছিল। কিন্তু সেদিন বঙ্গবন্ধুর কানে খবরটি পেঁৗছানোর পর অথবা মনি ভাইকে জানানোর পরও তারা কি খবরটির কোন গুরুত্ব দিয়েছিলেন? অথবা নিজের কোন বিশ্বস্ত সামরিক অথবা বেসামরিক কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করে দেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন? শুধু বঙ্গবন্ধুই নন, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেই অন্যের দেয়া তথ্যের গুরুত্ব কম দেয়া এবং শত্রুর শক্তিকে খাটো করে দেখার একটা মানসিকতা রয়েছে। সেকাল থেকে একাল পর্যন্ত এই মানসিকতা অব্যাহত রয়েছে এবং তার কোন পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না।

অবশ্য ইদানীং দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন বলে মনে হয়। আবার এ কথাও ঠিক, যারা জননেতা, দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে যার সম্পর্ক, যাদের সমর্থন বা ভোটে তিনি বিজয়ী হয়ে জননন্দিত তিনি বা তারা নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাঝে আবদ্ধ থাকতে পারেন না। তাতে তার গতিবিধি নিয়ন্ত্রিত হয় এবং জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে এবং নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে অটল থাকার কারণে শেখ হাসিনা এখন প্রতিপক্ষ ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক শক্তির টার্গেট তারা একাধিবার ঘোষণা দিয়েছে এবং গ্রেপ্তারকৃত বেশ কয়েকজন জঙ্গি শেখ হাসিনাকে হত্যা করার ব্যাপারে তাদের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছে। এমতাবস্থায় তার নিরাপত্তা শক্তিশালী করা যেমন জরুরি তেমনি তার জনগণনন্দিত নেতৃত্বের অবাধ গতিশীলতার সুযোগ থাকাও অনিবার্য। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অত্যন্ত মানবিক ও আবেগপ্রবণ নেতা ছিলেন। তিনি নিরাপত্তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন মানুষের ভালবাসার ব্যাপারে। জনগণের ভালবাসাকে তিনি কখনই দূরে ঠেলে রাখতে সম্মত ছিলেন না।

ফলে শত্রুদের পক্ষে সহজে হয়েছে ধানম-ির ক্ষুদ্র পরিসরের বাসায় হামলা চালানো। রাষ্ট্রীয় বাসভবনে সেদিন রাত কাটালে হয়তো নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো সম্ভব হতো না।

'৭৫-এর ১৫ আগস্টের আগের দিনের আরেকটি স্মৃতির কথা মনে পড়ে। ১৫ আগস্ট গভীর রাতে মনি ভাইয়ের ধানম-ির বাসা থেকে দেখা করে আরামবাগে বাসায় ফেরার পর স্ত্রীর কাছ থেকে একটি খবর শুনে বেশ খানিকটা চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। সেই অবস্থাতেই নানা দুশ্চিন্তা করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়ি। স্ত্রী জানিয়েছিল, সন্ধ্যা রাতে নাকি আবদুল ওয়াহাব নামে আমাদের এক দূর আত্মীয় বাসায় এসেছিল। সেই ওয়াহাবই জানিয়েছে- আজ রাতেই নাকি সরকার পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। কোন এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে চলেছে। সে মাগুরার মানুষ হিসেবে ঢাকা এলেই একবার যেত তার নিজ এলাকার নেতা ও মন্ত্রী সোহরাব হোসেনের বাসায়। সোহরাব হোসেন তখন বঙ্গবন্ধুর কেবিনেটের পূর্তমন্ত্রী। মন্ত্রীপাড়া বা বেইলি রোডে তার বাসাতে ব্যাডমিন্টন খেলার একটা আড্ডা বেশ জমে উঠেছিল তখন। সেই আড্ডায় নিয়মিত যোগ দিতেন কেএম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সোহরাব হোসেন, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর প্রমুখ মন্ত্রী বা মন্ত্রী পদমর্যাদার ব্যক্তি। আমার আত্মীয় ওই ওয়াহাব সোহরাব হোসেনের বাসায় গিয়ে নিচে বৈঠকখানায় অপেক্ষা করছিল। এক সময় ওপর থেকে ওবায়দুর রহমানসহ নিচে নেমে এলেন সোহরাব হোসেন। তিনি তখন ওবায়দুর রহমানকে উদ্দেশ করে বলছিলেন- আজকের রাতটা বাসায় না থাকাই ভাল, সাবধানে থাকবেন এবং সবাইকে সাবধান করে দেবেন। একটা কিছু ঘটবেই ইত্যাদি। কথাগুলো শুনে ওয়াহাবের সন্দেহ ঘনীভূত হয়েছে। তখন সন্ধ্যা। বৈঠক খানায় ঢুকে মন্ত্রী অপেক্ষমাণ দশনার্থীদের উদ্দেশ্যে বললেন- আজকে কোন কথা হবে না। আপনারা সবাই চলে যান, সাবধানে থাকবেন। এই কথা বলেই তিনি দ্রুত উপরে উঠে গেলেন। মন্ত্রীর বাসা থেকে সোজা ওয়াহাব আমাদের আরামবাগের বাসায় এসে ওইসব কথা আমার স্ত্রীকে জানিয়ে চলে গেছে। এসব ঘটনার তখন কেউই গুরুত্ব দেয়নি, কিন্তু '৭৫-এর ১৫ আগস্টের সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের পর মনে হয়েছে কত বেশি তাৎপর্যময় ছিল ওয়াহাবের জানানো ওই ঘটনার খবর।

'৭৫-এর ১৫ আগস্টের আগেই গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল দেশে বড় ধরনের একটা কিছু হতে যাচ্ছে। তাতে সরকারের পরিবর্তন হয়ে যাবে। এমনকি বঙ্গবন্ধুর ওপর আঘাতও আসতে পারে। এসব গুজব যে এত সত্যে পরিণত হবে_ তখন কেউ তা কল্পনাও করতে পারেনি। কিন্তু কেবিনেটের বেশকিছু সদস্য ও দলের একটি মহল বেশ নিশ্চিত ছিল_ রাজনৈতিক পটপরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। তারা উত্তরপাড়ার ষড়যন্ত্রকারীদের তৎপরতা ও খবরবার্তা আগে থেকেই জানতে পেরেছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন হলেও এসব রহস্যের জট হয়তো কোনদিন খুলবে না। অন্ধকারে তিমিরেই একদিন সব হারিয়ে যাবে। ১৫ আগস্ট শুক্রবার ঘটনা ঘটার পর সকাল নয়টা/সাড়ে নয়টার দিকে আরামবাগের বাসা থেকে বেরিয়ে মতিঝিল কলোনিতে মুকুল সাহেবের বাসায় গেলাম। যেহেতু আরামবাগে শেখ মনির বাসাতেই আমি থাকতাম সেহেতু ওই এলাকায় আমিও বেশ চিহ্নিত ছিলাম। মুকুল সাহেবের বাসায় গিয়ে দু'জন মিলে চেষ্টা করতে লাগলাম নেতা ও পরিচিতজনের সঙ্গে যোগাযোগ করার। কিন্তু প্রায় সব নেতারই টেলিফোন ছিল বিকল। দুপুরে জুমার নামাজের জন্য কারফিউ শিথিল করা হলে আমি মুকুলকে নিয়ে গেলাম মালিবাগে মোনায়েম সরকারের বাসায়। বৈঠক খানায় বসে খবর পাঠালাম। মোনায়েম আসতে বেশ দেরি করলেন এবং বাইরে কোথাও কোন কথা বলছেন বলে মনে হলো। পরে শুনেছি, সে নাকি ওই সময় সর্বশেষ পাওয়া হত্যাযজ্ঞের খবরা-খবর জানাচ্ছিলেন। আমাদের সঙ্গে তার দীর্ঘ আলাপ হলো। যেহেতু এই মুহূর্তে আমরা কিছু করতে পারছি না সেহেতু নেতাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন এবং ওই দিন কারা কারা নিহত হয়েছেন সেই তথ্য সংগ্রহ করাই হবে প্রধান কাজ। এরপর কারফিউ শিথিলের সময় শেষ হওয়ার আগেই দু'জন ফিরে এলাম। সারাদিন মতিঝিল মুকুলের বাসায় কাটিয়ে রাতের অন্ধকারে বাসায় ফিরলাম। ওই দিনই খবর পেলাম_ হাসিনা-রেহানা ছাড়া বঙ্গবন্ধুর বাসার সবাইকে হত্যা করা হয়েছে, মনি ভাই, তার স্ত্রী, আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও তার পরিবারের অনেক সদস্যকেও হত্যা করা হয়েছে। বাকি অনেকের ব্যাপারেই বিস্তারিত খবর জানতে পারলাম না।

১৪ ও ১৫ আগস্ট '৭৫-এর মধ্যেই স্মৃতিচারণমূলক এ লেখাটি সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করলাম। ওই সময় মর্মে মর্মে অনুভব করেছিলাম, আমরা একেবারে অভিভাবক বা পিতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়েছি। সেদিনই নিজের মনে প্রশ্ন জেগেছিল আমরা কি কোনদিন পারবো এই নারকীয় হত্যাকা-ের প্রতিশোধ নিতে? পারবো কি তার স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবে রূপ দিতে? শেখ হাসিনার দিকে সবাই তাকিয়ে। সবাই আশা করছে, এবার হয়তো সত্যি সত্যি দিনবদল হবে। পূরণ হবে জাতির জনকের সারা জীবনের স্বপ্ন।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×